চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

Daily Inqilab রাজশাহী ব্যুরো

১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ পিএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

সারা দেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব চলছে তা বন্ধ করার আহবান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘যারা এসব করছেন, বিনয়ের সঙ্গে বলি, এগুলো বন্ধ করেন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানে, তাহলে আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বৈষম্য বিরোধী চেতনা নিয়ে হাজারো মানুষের ত্যাগ, জীবন বাজি রেখে ফ্যাসিষ্ট সরকারকে সরানোর যে যুদ্ধ হয়েছে তা এখনো শেষ হয়নি। সন্তানেরা শ্লোগান দিচ্ছে, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।

 

শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই দেশ অনেকে শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানেরা এত এত রক্ত কেন দিল ? কারণ তারা চেয়েছে, এই সমাজ থেকে সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক।

 


ডা. শফিক বলেন, ‘রাজশাহী, যেটাকে শিক্ষার ভিলেজ বলা হয়, শিক্ষার গ্রাম। আমি আশা করি, ৫ তারিখের (৫ আগস্ট) পর রাজশাহীতে কোনো চাঁদাবাজি হয় না। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ। কেউ চাঁদাবাজি এখানে করে না, ঠিক না ? এ সময় নেতা-কর্মীরা ‘চাঁদাবাজি হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন। আমির প্রশ্ন করেন, ‘এখানেও চাঁদাবাজি হয়? এখানেও ফুটপাত দখল হয়? হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, যানবাহন স্ট্যান্ড, সবগুলোতে দখলদারি হয়?’ তখনো মাঠভরা নেতা-কর্মী ‘হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন।

 


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাহলে আমাদের শহীদদের রক্তের প্রতি এটা কি ভালোবাসা? এই কাজ যাঁরা করেন, বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করি, এই কাজটা ছেড়ে দেন। আমাদের শহীদেরা কষ্ট পাবেন। অফিস-আদালতে ঘুষ–বাণিজ্য আছে, আবার মামলা-বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাঁদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই, এই কাজগুলো করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা বড় কষ্ট পাবে। আমাদের জীবন্ত সন্তানেরা যারা শহীদ হওয়ার নিয়ত করে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কষ্ট পাবে। তাদের কষ্ট দেবেন না।

 


একমাত্র কোরআনের শাসন বাংলাদেশে ইনসাফ কায়েম করতে পারে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘চাঁদাবাজি-দখলদারির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ কতক্ষণ? যতক্ষণ না ইনসাফ কায়েম হয়। এই ইনসাফ দিতে পারে একমাত্র আল কোরআন। এই কোরআনের শাসন দিয়ে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ত্যাগ অনেক করেছি। আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।’

 


আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান একটি জাতি গঠন করতে চাই। সে জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। সে জাতি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করবে না। এটা করেনি বলেই ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তান্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে, তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহীদ হয়ে আছে। হাত-পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তাঁরা বেঁচে আছেন।

 


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গিয়েছে, আমরা তাদের প্রতি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে, সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে সবকিছু অন্ধকারে রেখে অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। স্তূপে স্তূপে লাশ। ট্রাকের ওপর ছুড়ে মারা হয়েছে। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না।

 


তিনি বলেন, এমন সাহসী সন্তান থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই ‘সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেছেন, “আপনাদের দলের কতজন শহীদ হয়েছে আমরা বলেছি, যারা শহীদ হয়েছে আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদের কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা তাদের সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চাই না। তারা জাতীয় সম্পদ। তাদের আমরা মাথার ওপরে তুলে রাখতে চাই। এক হাত চলে গেছে, আরেক হাত নিয়ে যুদ্ধ করতে চায়। এমন সাহসী মানুষ থাকলে এই জাতির ওপর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।

 


কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল।

 


অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ পনের বছর পর রাজশাহীতে এই প্রথম ময়দানে বিশাল সমাবেশ করলো জামায়াত। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে হাজার হাজার কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। #


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ