জুলাই আগস্ট চেতনা লালনে ব্যর্থ সিলেটে বিএনপিপন্থি আইনজীবিরা
২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম
সিলেট জেলা বারের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয় লাভ করেছেন আওয়ামীলীপন্থি আইনজীবিরা। নির্বাচনে কার্যত ভরাডুবি ঘটেছে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের। এ ফলাফলকে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্লেষন করলেও এতে তুষ্ট বিএনপিপন্থি বিশাল অংশের আইজীবিরা। তাদের মতে এখানে রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেনি বরং প্রার্থীদের ব্যক্তিগত লোভী মানসিকতার পরাজয় ঘটেছে। তারা মনে করছেন, বারে রাজনৈতিক চর্চার চেয়ে আইনজীবীদের স্বার্থ, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির কথিত প্রার্থীর চেয়ে বিজয়ী প্রার্থীরা ভারসাপূর্ণ।
তাদের এ মতামত জেলাবার কেন্দ্রিক হলেও বিএনপি পন্থিদের পরাজয়ের ঘটনা নিয়ে বিরাজ করছে চাঞ্চল্য। বুৃদ্ধিভিত্তিক সন্তুষ্টি বারের বিএনপিপন্থী একশ্রেনীর আইনজীবিদের হলেও সাধারনভাবে এ পরাজয় নেতিবাচক এক ধারনার জন্ম দিয়েছে। এদিকে নির্বাচনে ভরাডুবির পর নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ঝড় উঠেছে সর্বত্র। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, সুষ্ঠ ভোট হওয়ার পরও কোন্দলে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের। এখানে কেবল সুযোগ পেয়েছেন আওয়ামীলীগপন্থিরা। ফলাফলে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোন কারন নেই। কারন আওয়ামীলীগপন্থি প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে ইমোশনালী দূর্বল করেছেন ভোটারদের। নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী আওয়ামীলীপন্থি প্রার্থী সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বিগত সময়ে ৫ বার নির্বাচন করে পরাজিত হন। সেকারনে তার প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি কাড়তে সক্ষম হন তিনি। সেই সাথে বিএনপিপন্থিদের মধ্যেকার ফাটল সহজ করে তোলে তার বিজয় পথ।
নির্বাচনী ফলাফলে বিএনপিপন্থিদের পরাজয়ের পর নড়েচড়ে বসেছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নীতি নির্ধারকরা। এরমধ্যে সিলেটে আইনজীবী সমিতিতে ‘বিএনপির ভরাডুবির’ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’ কেন্দ্র গত রবিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভরাডুবির পর বিএনপিপন্থী আইনজীবী ফোরামের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন পরেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ওই ইউনিটের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছরের শুরুতেই সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ জানুয়ারি। কিন্তু নির্বাচনে শীর্ষ পদগুলোতে হেরে গেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাই ১৬ জানুয়ারি ভোরে ফলাফল ঘোষণার পর এই নিয়ে আলোচনা আদালতপাড়া থেকে গড়িয়েছে অন্যান্য মাধ্যমেও। গত বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে শুক্রবার ভোরে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক। নির্বাচনে ২৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৬৬ প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থি ৯, বিএনপিপন্থি ৭ এবং জামায়াতপন্থিরা ২টি পদে বিজয়ী হন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হওয়া নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। এ কারণে বিএনপিপন্থিরা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে টার্গেট ঠিক রাখতে পারেনি। সভাপতি পদে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ৭৭০ ভোট ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. জোবায়ের বখ্ত জুবের ৩৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্য পদের মধ্যে সহ-সভাপতি-১ পদে আওয়ামী লীগের জ্যোতির্ময় পুরকায়স্থ (কাঞ্চন), সহসভাপতি-২ পদে বিএনপির মো. মখলিছুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক-১ পদে আওয়ামী লীগের অহিদুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক-২ পদে বিএনপির মো. রব নেওয়াজ রানা, একই দলের সমাজবিষয়ক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সহ-সমাজবিষয়ক সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের সৈয়দ রাব্বী হাসান তারেক, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের হেনা বেগম নির্বাচিত হন।
বিএনপির একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, জেলা বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কয়েকজন নেতার দ্বন্দ্বে ভরাডুবি হয়েছে। জেলা বারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত হন বিএনপি সমর্থিত মশরুর চৌধুরী শওকত। এ জন্য আঙুল উঠেছে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন ও দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদ আহমদের বিরুদ্ধে। সরকার পতনের পর পিপি হতে চেয়েছিলেন বিএনপিপন্থি অনেকে। কিন্তু সব বাদ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতা এ টি এম ফয়েজকে দেওয়া হয় পিপির দায়িত্ব। তাঁকে পিপির দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে প্রকাশ্যে বিভক্তি দেখা দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা মিলে ফয়েজকে সরাতে তালা দেন তাঁর কক্ষে। কয়েক দিনের মাথায় পিপির দায়িত্ব থেকে ফয়েজকে সরানো হয়। দলের সিনিয়র নেতা আশিক উদ্দিনকে পিপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘এখানে কোনো টাকা নেওয়া হয় না’ বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে নতুন করে দেখা দেয় বিভক্তি। বিএনপি নেতাদের দাবি, এসব কারণে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপিপন্থিদের।
বিএনপি নেতাদের একটি অংশ ফয়েজসহ অন্য প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সম্প্রতি রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হওয়ায় জামায়াত কৌঁসুলি ভূমিকায় ছিল। যার ফল পায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট করছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ফেসবুকে লেখেন, ‘তদন্ত করলে বেরিয়ে আাসবে নোংরা গ্রুপিং, সিলেট জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আঁতাতের বিষয়টি।’ ‘কোনো দ্বন্দ্ব নেই’ জানিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরাও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি, কেন বিপর্যয় হলো।
’
অভিযোগ বিষয়ে হাসান পাটোয়ারী রিপন বলেন, ‘জাতীয়তাবদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। ফোরামের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট ফয়েজকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি। কিন্তু ফয়েজ না সরায় নুরুল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।’ কেন্দ্র থেকে নুরুল হক ও শওকতকে দিয়ে প্যানেলের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না মেনে এ টি এম ফয়েজসহ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরাজয়ের পেছনে তাঁর কোনো হাত নেই জানিয়ে রিপন বলেন, ‘বিগত সময়ে আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আমরা ফয়েজের কক্ষে তালা দিয়েছি। আমরা মধ্যম সারির নেতা হিসেবে সিনিয়রদের কথামতো দায়িত্ব পালন করেছি।’
অপরিদকে, বিএনপিপন্থি একাধিক আইনজীবি বলেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সময় পরপর দুই বার বারের সভাপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বিএনপিপন্থি পরাজিত প্রার্থী এডেভাকেট এ টি এম ফয়েজ। জুলাই আগস্ট আন্দোলনে প্রবাসে অবস্থান করেন, কখনো সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন না তিনি। অথচ সরকার পতনের পর ত্যগী আইনজীবিদের পাশ কেটে পিপি হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টার পর আবার বারের সভাপতি হতে লোভাতুর হয়ে উঠেন তিনি। তার এহেন মানসিকতার বিরুদ্ধে মুলত নিরব প্রতিবাদ হয়েছে ভোটে। এখানে জুলাই আগস্টের চেতনা ম্লান হয়নি বরং ক্ষমতালোভী অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি ফয়েজের পরাজয় হয়েছে। বিএনপির আদর্শিক পরাজয় হয়নি।
বিএনপির প্রকৃত প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপি ও সাধারন আইনজীবিদের ভোট সর্বদা অবিচল। থাকবে। আইনজীবি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, ফ্যাসিস্টপন্থিদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার সুযোগ দেয়ার দায় অবশ্যই বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবিদের উপর বর্তায়। তারা কিভাবে এতো অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের পর নির্বাচনে অংশ নেয়ার দু:সাহস দেখালো। কারন দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাদের কোন দায় নেই, ছিল এদেশের আপামর জনতার প্রতি।
সেকারনে কোটা বিরোধী ন্যায্য দাবীর বিরুদ্ধে যেয়ে পাখির মতো গুলি করেছে ছাত্রজনতাকে। রক্তের দাগ এখনো তাজা। এ অবস্থায় নিজেদের গৃহ অসন্তোষে আওয়ামীপন্থিদের সুযোগ দেয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে জুলাই-আগস্ট চেতনা লালনে ব্যর্থ হয়েছেন বিএনপি পন্থি আইনজীবিরা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ গোলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে বার্সার জয়ের হাসি
জোড়া গোলে রোনালদোর 'সেঞ্চুরি', আল নাসরের জয়
লিলকে হারিয়ে লিভারপুলের সাতে সাত
ছাগলনাইয়ায় দুই হাত কাটা যুবকের লাশ উদ্ধার
কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন, সম্পাদক মামুন
খুবি কেন্দ্রে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে নানা সিদ্ধান্ত
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আদেশ স্থগিতে ১৮টি রাজ্যের মামলা
টেলিকমে অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল করা হবে : বিটিআরসি চেয়ারম্যান
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাইভেট কারচালক নিহত
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য
আনিসুল হকের আয়কর নথি জব্দ
সাবেক ক্রিকেটার দুর্জয়ের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ
বন্দরে বকেয়া বেতন দাবিতে পারটেক্স শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইস্ট এশিয়ান ইউনিভার্সিটি : ইউজিসি
ধামরাইয়ে ৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি ইজিবাইক চালকের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালিত
গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা -নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক
বিদ্যুৎ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিল পবিস কর্মীরা
উত্তরা উলামা আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন
ডাকাতির ভিডিও ভাইরাল হলেও অধরা রূপগঞ্জের রুবেল