নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় কুমিল্লার দাউদকান্দি গৌরীপুর-চররায়পুর-আসমানিয়া আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভুমিধ্বস, বড় বড় গর্ত এবং ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। সড়কটি এখন সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কোনোরকমে চলছে কিছু যানবাহন। সড়কের এই বেহাল দশায় বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জানা গেছে, দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমতি নদীর দক্ষিণ কোলঘেঁষে লক্ষ্মীপুর, চান্দেরচর, চররামনগর, গলিয়ার চর, চররায়পুর, চরচারি পাড়া, খোশকান্দি, কুশিয়ারা ও সিঙ্গুলা গ্রামের পাশে দিয়ে গৌরীপুর থেকে তিতাসের আসমানিয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়ক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালে এই সড়কের নির্মাণ ও পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।এটি নির্মাণ করেছে স্থানীয়
সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।এই সড়কের পূর্বপ্রান্তে তিতাস উপজেলার প্রাচীণতম বিশাল ব্যবসাকেন্দ্র আসমানিয়া বাজার, পশ্চিমে দাউদকান্দি উপজেলার অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র গৌরীপুর বাজার অবস্থিত। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত যানবাহন চলাচল করছে। দুই উপজেলার প্রচুর সংখ্যক ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক,পাইকার ও কৃষক কৃষিপণ্য নিয়ে সহজেই যাতায়াত করছে। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমতী নদী প্রবাহিত থাকার কারণে সড়কটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে সড়ক পরিদর্শনে গেলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, সড়ক নির্মাণ ও পাকাকরণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকাদারকে বারবার বললেও এলাকাবাসীর অভিযোগকে পাত্তা দেননি। এলজিইডির কর্মকর্তাগণ সড়ক নির্মাণ ও পাকাকরণ কাজ পরিদর্শন করেননি। এই অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল তুলে নেয়। সড়ক নির্মাণের পরে অদ্যাবধি আর কোনো সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। লক্ষ্মীপুর, চান্দেরচর, গলিয়ারচর, চররায়পুর, খোশকান্দি ও আসমানিয়া বাজারের কাছে সড়কের অনেক স্থানে ভুমিধ্বস নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও পিচ উঠে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ভুমিধ্বসের ফলে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় দ্বিমুখী ২টি গাড়ি পাশ কাটিয়ে যেতে পারছে না।
মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাতায়াত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন মানুষ। প্রায়শই প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মালবাহী যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।মূলত সড়ক নির্মাণ ও পাকাকরণ কাজের ত্রুটির কারণে ভুমিধ্বস ও ছোট-বড় প্রচুর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। গৌরীপুর-আসমানিয়া সড়কের এমন ভগ্নদশায় মানুষ চরম হতাশা ও দুর্দশায় কাল কাটাচ্ছে। চররায়পুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী কফিলউদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কে ভাঙ্গন ও প্রচুর খানাখন্দের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। সড়কের এই বেহাল অবস্থার জন্য দাউদকান্দি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকেন্দ্র গৌরীপুর হতে তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজার পর্যন্ত দুই উপজেলায় হাজার হাজার যাত্রী দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কৃষক উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছে না। কৃষক ও ব্যবসায়ীগণ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এলজিইডি'র দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, গৌরীপুর-চররায় পুর-আসমানিয়া সড়কের বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে এবং যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ পেয়েছি।আমি শীঘ্রই পরিদর্শন করে সড়ক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কয়েকজন গাড়ি চালক জানান, এই সড়কটি একটি ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। নির্মাণ ও পাকাকরণ কাজে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এই জন্যেই ২/৩ বছরে না যেতেই নতুন নির্মিত সড়ক জুড়ে ভুমিধ্বস ও বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের কারণে রাতে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও গর্তস্থান অতিক্রমকালে গাড়ির গতি কমিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। দুই উপজেলার জনগণ বৃহত্তর জনস্বার্থে অবিলম্বে গৌরীপুর-চররায়পুর-আসমানিয়া সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।