বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির রাজধানী ঢাকাস্থ পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১১ টা থেকে দীর্ঘক্ষণ কেন্দ্রীয় ও খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে জেলার শীর্ষ নেতাদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির অধীনস্ত সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সকল পর্যায়ের বিএনপি'র সদস্য ফরম বিতরণ ও কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাতক্ষীরা জেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরার ৪টি সংসদীয় আসনে সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলনের কথা ছিলো। তবে, কেউ কেউ সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অমান্য করে কমিটি দিয়ে দলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে সাংগঠনিক টিম জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সবার কথা শুনে সব ধরনের সম্মেলন, কমিটি গঠন স্থগিত হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবও বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
আজকের অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ডাকসু নেতা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ, যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান, মৃণাল কান্তি রায়, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম, আয়নুল ইসলাম নান্টা প্রমুখ।
জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপির অন্তর্গত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সফল করতে চারটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। একই সাথে সব সম্মেলন শেষে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে সাংগঠনিক টিম।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান, সাতক্ষীরা-২-এর জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মৃণাল কান্তি, সাতক্ষীরা-৩ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাতক্ষীরা-৪ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমকে প্রধান করে চারটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি টিমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ২/৩ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এবং উপজেলা/পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা পদাধিকারবলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সাংগঠনিক টিমের সদস্য মনোনীত হবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত গত ১৬ জানুয়ারি এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, সাংগঠনিক টিমের এসব সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি সময়ে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ গ্রুপের হামলা ও সংঘর্ষে সাতক্ষীরায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। এতে ক্রমান্বয়ে শক্তি হারাচ্ছে দলটি। সম্প্রতি শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায় সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটে । এসবে ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ তারিকুল হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ জানুয়ারির মধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ চূড়ান্ত করার কথা ছিল। ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সব ওয়ার্ড (ইউনিয়ন ও পৌরসভার অন্তর্গত) সম্মেলন শেষ করার কথা। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ইউনিয়ন সম্মেলন শেষ করতে হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা ছিল।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই উপজেলা কমিটি গঠন করে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিভিন্ন ইউনিটে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তৃণমূল নেতা কর্মীরা।
সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ শাহীন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিক্রমে দীর্ঘ ৫ বছর পর জেলা বিএনপি'র সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে । কিন্তু বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি জেলা কমিটির সকল কমিটি গঠনের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলীকে আহ্বায়ক, সরদার আব্দুর রউফ,তারিকুল হাসান, হাবিবুর রহমান হাবিব ও মৃণাল কান্তি রায়কে যুগ্ম আহবায়ক এবং আব্দুল আলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির ওপর নির্দেশনা ছিল তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করা। কিন্তু আহ্বায়ক তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিশেষত বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিএনপির জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা আওয়ামীলীগের সাথে গোপন আঁতাত করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু জুলাই বিল্পবে ফ্যাসিবাদীর পরাজয়ের পর ওই সমস্ত সুবিধাবাদী নেতারা জেলায় উপস্থিত হয়ে দল গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ায় জুলুম নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী নেতা কর্মীরা তাদের বয়কট করেন। এবং অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এনিয়ে জেলা বিএনপির মধ্যে একাধিক দল তৈরি হয়ে পক্ষে বিপক্ষে মিছিল মিটিং, হামলা চালানোর একাধিক ঘটনা ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপ পড়লো সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির উপর।