বরিশালে ডায়রিয়া উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির সাথে স্যালাইন সরবরাহে ঘাটতি
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ পিএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যাবার মধ্যেই বরিশালে ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বছরের প্রথম দুমাসে শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হবার পরে মার্চ থেকে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যাবার সাথে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। মার্চের শুরু থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুধু সরকারী হাসপাতালেই প্রায় ১২ হাজার ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছেন। এসময়ে হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগেও আরো অন্তত ১০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছেন।
এমনকি স্বাভাবিকের বেশী তাপমাত্রায়ও ডেঙ্গু নির্মূল হয়নি। প্রায় ৯ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি সহ ৬৪ জনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে ২০২৪-এর বিদায়ের পরে গত তিনমাসে বরিশালের সরকারী হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় ৫শ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এপ্রিলের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫-২০জন ডেঙ্গু রোগী বরিশালের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন।
তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মানুষ শরীরের অত্যন্ত নাজুক সময় ছাড়া সরকারী হাসপাতালের শরণাপন্ন হননা। ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার যে পরিমাণ রোগী সরকারী হাসপাতালসমুহে আসছেন, তার অন্তত তিনগুণ বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও দাবী এসব চিকিৎসকদের। ফলে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা দুরুহ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এসব রোগের বিস্তার উদ্বেগজনক। আর এসব রোগ থেকে উত্তরণের নিবিড় কোন কর্মপরিকল্পনা সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে এখনো অনুপস্থিত।
এদিকে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হবার পরে গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরো সাড়ে ২৪ হাজার যোগ হয়েছে। ফলে নভেম্বরে যে ডায়রিয়ার সূচনা হয়েছিল, গত ৫ মাসে সরকারী হাসপাতালেই তার ভর্তির সংখ্যাটা প্রায় ২৩ হাজারে পৌছেছে। তবে গত বছরের মত চলতি বছরের প্রথম তিনমাসেও ডায়রিয়া আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি বলে দাবী বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের।
মার্চের মধ্যভাগ থেকে তাপমাত্রার পারদ উপরে ওঠার সাথে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৫শ ডায়রিয়া রোগী শুধু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করলেও এপ্রিলের শুরু থেকে সে সংখ্যাটা ক্রমে বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভর্তির সংখ্যাটা ৬শর ওপরে উঠছে।
বিশুদ্ধ পানি ও স্যনিটেশন ব্যবস্থার অনেক উন্নতির পরেও ডায়রিয়া প্রবন বরিশাল অঞ্চলে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব না হবার পেছনে এখন পথ খাবারের দোকানের নি¤œমানের মুখরোচক খাবারকে দায়ী করছেন চিকিৎসকগন। খোদ বরিশাল মহানগরীতে সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ও অননুমোদিত পথ খাবারের দোকানের সংখ্যাই এখন কয়েক হাজার। এসব দোকানের নি¤œমানের এবং বাঁসি ও মুখরোচক খাবার নগরবাসীর পেটের পীড়াকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চললেও তা নিয়ে জনসচেতনতার অভাবের সাথে এসব খাবার বিক্রী বন্ধে নগর প্রশাসন, নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেই।
এসব ব্যপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ শ্যমল কৃষ্ঞ মন্ডল জানান, ডায়রিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবিড় কার্যক্রমের কোন বিকল্প নেই। ডেঙ্গুর একমাত্র বাহন এডিস মশা নিধনে তিনি সবগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে মাঠ পর্যায়ে নিবিড় কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু সহ যেকোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সরকারী হাসপাতাল সহ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হবারও তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে ডায়রিয়া চিকিৎসায় বরিশালে আইভি স্যালাইন সরবারহে ঘাটতি তৈরী হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় পরিচালক অধিদপ্তরের কাছে বরাদ্ব বৃদ্ধির অনুরোধ করেছেন। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১ হাজার সিসির প্রায় ১৩ হাজার এবং ৫শ সিসি’র সাড়ে ৭ হাজার ব্যাগের মত আইভি স্যালাইনের মজুত রয়েছে। তবে খাবার স্যালাইন, এ্যন্টিবায়োটিক ক্যাপসুল ও মেট্রোনিডাজল টেবলেট সহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুতের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। তারমতে, অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও বেশী চিকিৎসকের পদ শূণ্য থাকলেও ডায়রিয়া সহ যেকোন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। জিয়ানগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার পুরো উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা সামলাচ্ছেন। অথচ সেখানে ডায়রিয়ার অবস্থা ক্রমে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরী করছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রের খবর, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে প্রায় আড়াই হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর পরে চলতি বছরের প্রথম দু মাসে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভর্তি হয়েছেন। এসময়ে মৃত্যু হয়েছে আরো ৩জনের। ফেব্রæয়ারীর শেষ দিনে নিউমোনিয়া নিয়ে ২১ দিন বয়সী শাহিনুর বেগমের মৃত্যু হয়েছে লালমোহন হাসপাতালে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সীমান্তে অনুপ্রবেশ : গুলিবিদ্ধ ভারতীয় চোরাকারবারি ঢাকায় আটক

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের স্মারকলিপি পেশ

চাঁদা আদায়ের অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি-এসআই প্রত্যাহার

প্রধান উপদেষ্টা সব মামলায় অব্যাহতি নিলেন আর আমি কোর্টে হাজিরা দেই : গয়েশ্বর

ঢাকার খালের দুই পাড়ে সবুজায়ন

ঢাকায় বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের দেড় ঘণ্টা কর্মবিরতি

নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের দুই সহযোগী অস্ত্রসহ গ্রেফতার

টেস্ট ড্রাইভের কথা বলে মোটরসাইকেল ছিনতাই

উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস গ্রহণযোগ্য নয় :পরিবেশ উপদেষ্টা

৫০ শতাংশ ইনভয়েস পরিশোধে পেট্রোবাংলা- কৃষি ব্যাংক চুক্তি

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাভারে যুবদলের লিফলেট বিতরণ

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়াকে হার মানাবে চীনের নতুন যুদ্ধবিমান!

ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে কর্ণাটকে বিশাল বিক্ষোভ

ট্রাম্পের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছেন আমেরিকানরা!

কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব রাশিয়ার

‘পূর্ণশক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া হবে’ পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

মে মাসে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

সিনেমাতেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

জাতিগত শুমারি: রাহুলের কাছে নতি স্বীকার মোদির

শীর্ষ সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে চীনের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পেছনে কী রয়েছে?