উখিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি-ঘুরে দাঁড়াতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়া একটি বিশেষায়িত উপজেলা। মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা নাগরিকের সাথে স্থানীয় আরো প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ জনগোষ্ঠী মিলে প্রায় ১৪ লক্ষ লোকের বসবাস। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড- গুম, খুন, অপহরণ, মাদক, ইয়াবা, স্বর্ণপাচারের সাথে রয়েছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে হামলা, পালটা হামলা, মামলা খুন খারাবি যেন নিত্য দিনের অনুসঙ্গ।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পৃথক স্থানে ৫টি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, দিনে ও রাতে পৃথক স্থানে বেশ কয়েকটি ঘরে চুরি সংঘটিত হয়েছে।
গত ৬-এপ্রিল কুতুপালংয়ের পশ্চিম পাড়ায় আপন চাচাতো, জেঠাতো ভাই বোনের মধ্যে সীমানা বিরোধে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা উখিয়াসহ দেশবাসীকে হতবাক করেছে। পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, ঘটনার পূর্বে অভিযোগ দিয়েও থানা পুলিশ বের করতে পারেনি বলে দাবি করেন নিহত আব্দুল মান্নানের পরিবার। উখিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার অবহেলা ও প্রচ্ছন্ন ইন্ধনে এই মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অনেকেই বিষোদগার করছেন। সামান্য এনড্রয়েড ফোনের বিষয় নিয়ে হলদিয়াপালংয়ে একজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। পালংখালীতে একজনকে ধরে আরাকান আর্মি নিয়ে গেছে। এসব ঘটনাবলী উখিয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতির মারাত্মক অবনতির ইন্ডিকেটর বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
ইতিমধ্যে, মাস দুয়েকের মধ্যে ঘটে গেছে সিএনজি ষ্টেশন দখল, পালটা দখল, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়ে হাতাহাতি, মারামারি, কামড়া-কামড়ির মতো অনভিপ্রেত ঘটনা। যার জেরে দু'জন সম্ভাবনাময়ী জাতীয়তাবাদী আদর্শের দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত, নিবেদিতপ্রান নেতাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে ৫-আগষ্ট পরবর্তীতে, স্বৈরাচারের দোষরদের গা ঢেকে দেবার সুযোগে অলিতে গলিতে, প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে আধিপত্য বিস্তারের হিড়িক পড়েছে। এটির চর্চা বন্ধুপ্রতীম সংগঠনগুলোর মধ্যে যেমন দেখা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি নিজ নিজ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের মধ্যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বন্দের আধিক্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকক্ষেত্রে কিছু সুবিধাবাদী শ্রেনীর প্রত্যক্ষ মদদে ঘরে ঘরে বা পরিবারের ভেতরে আপনজনদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে চলমান ভুল বুঝাবুঝিকে পুঁজি করে একটি পারিবারিক দ্বন্ধ সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। টেন্ডার বাণিজ্য, বালি মহাল দখল, পাহাড়-বনভুমি, পিএফ ও খাস জায়গা দখল, বাস স্ট্যান্ড, সিএনজি-টমটম স্ট্যান্ড /গ্যারেজ দখল, সিএনজি-টমটম সমিতি দখল বেদখল বা নিয়ন্ত্রণের ঘটনাগুলো বড় ধরণের রক্তপাতের ঘটনা ঘটার ইঙ্গিতবহ বলে সচেতন মহলের আশংকা।
উপজেলার আনাচে-কানাচে মাদক, ইয়াবা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, কন্ট্রাক্ট কিলিং, কিশোর গ্যাং, অনলাইন জুয়া, অনলাইন গেম, সিন্ডিকেট বাণিজ্য প্রভৃতি অপকর্ম দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
অন্যদিকে বেড়ে চলছে চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই, খুন-খারাবির মতো বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড। এসব অপরাধ নির্মূলে পুলিশকে যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি তাদের নির্লপ্ততাও আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারণ বলে অনেকের ধারণা।
অন্যদিকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে পাচার হচ্ছে, সার, তৈল, ডিযেল, অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যসামগ্রী, ফিরতি পথে আসছে ইয়াবা, মাদক, স্বর্ণ ও গরুসহ অনেক অবৈধ পন্য, বস্তু। এই কাজগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বা একপ্রকার ম্যানেজ করে, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বড় বড় সিন্ডিকেট চক্র কোটি কোটি টাকা মুলধন কাটাচ্ছে।
দিনে দিনে উখিয়ার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির কারনগুলা অনুধাবন করে থানা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিগণ, পেশাজীবি, সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করতে হবে।
পাশ্ববর্তী মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে আরকান আর্মির শক্ত ঘাটি, আরাকানকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার সন্ধিক্ষণ, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবার সম্ভাবনা সৃষ্টি, ফিরে গেলেও কোথায় তাদের আবাস স্থল হবে, ফেরার ব্যবস্থা জান্তা সরকার করবেন বা আরাকান আর্মি করবেন নাকি উভয়ের সম্মীলিত প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরবেন সেটি নিয়ে ঝুট ঝামেলা যেমন রয়েছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি, নাগরিকত্ব প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া পূরণ স্বাপেক্ষে দেশে ফেরার আগ্রহ-প্রভৃতি কারণে উখিয়া টেকনাফের অস্থিতিশীল পরিবেশ আরো অস্থিতিশীল হবার আশংকা রয়েছে।
সীমান্ত এলাকার উখিয়া-টেকনাফের আটলক্ষ স্থানীয়দের পাশাপাশি আরো চৌদ্দ লক্ষ বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা এদেশের অখন্ডতা বজায় রাখার স্বার্থে- এতদ অঞ্চলকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের চাদরে মোড়ানোর জন্য এলাকার সাধারণ মানুষসহ সচেতন মহলের আবেদন রয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সীমান্তে অনুপ্রবেশ : গুলিবিদ্ধ ভারতীয় চোরাকারবারি ঢাকায় আটক

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের স্মারকলিপি পেশ

চাঁদা আদায়ের অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি-এসআই প্রত্যাহার

প্রধান উপদেষ্টা সব মামলায় অব্যাহতি নিলেন আর আমি কোর্টে হাজিরা দেই : গয়েশ্বর

ঢাকার খালের দুই পাড়ে সবুজায়ন

ঢাকায় বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের দেড় ঘণ্টা কর্মবিরতি

নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের দুই সহযোগী অস্ত্রসহ গ্রেফতার

টেস্ট ড্রাইভের কথা বলে মোটরসাইকেল ছিনতাই

উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস গ্রহণযোগ্য নয় :পরিবেশ উপদেষ্টা

৫০ শতাংশ ইনভয়েস পরিশোধে পেট্রোবাংলা- কৃষি ব্যাংক চুক্তি

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাভারে যুবদলের লিফলেট বিতরণ

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়াকে হার মানাবে চীনের নতুন যুদ্ধবিমান!

ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে কর্ণাটকে বিশাল বিক্ষোভ

ট্রাম্পের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছেন আমেরিকানরা!

কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব রাশিয়ার

‘পূর্ণশক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া হবে’ পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

মে মাসে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

সিনেমাতেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

জাতিগত শুমারি: রাহুলের কাছে নতি স্বীকার মোদির

শীর্ষ সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে চীনের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পেছনে কী রয়েছে?