নোয়াখালীর চাটখিলে দাফনের ১৫ দিন পর কবর থেকে এক গৃহকর্মীর লাশ তোলা হয়েছে। এগৃহকর্মীর নাম মারজিনা আক্তার (১৬)। পরিবারের অভিযোগ এ গৃহকর্মীকে হত্যা করে বেওয়ারিশ হিসেবে গোপনে লাশ দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম জাহিদা আক্তার মৌসুমী ও মো. শাহাদত হোসেনের উপস্থিতিতে চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামনারায়ণপুর গ্রামের মাইজের বাড়ির কবরস্থান থেকে লাশটি তোলা হয়। এসময় নিহতের পরিবারের সদস্য ছাড়াও ঢাকার খিলগাঁও ও স্থানীয় চাটখিল থানার পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল গোপনীয়তার সাথে ওয়ারিশবিহীন বলে এ গৃহ পরিচারিকা কিশোরীর লাশ ঢাকার খিলগাঁও এলাকা থেকে গাড়ীর পেছনে (ডিকিতে) করে এনে চাটখিল উপজেলার পূর্বোল্লিখিত কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। এর আগে ৬ এপ্রিল বিকেলে এ গৃহপরিচারিকা ঢাকায় মারা যায়। স্থানীয়দের মাঝে এই দাফন নিয়ে তখন থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরপর জানাজানি হলে ১২ এপ্রিল নিহত কিশোরীর বাবা খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরেই মঙ্গলবার বিকেলে এলাশ তোলা হয়েছে।
মারজিনা আক্তার (১৬) রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামনারাণপুর গ্রামের মাইজের বাড়ির মাহাবুবুল হক চৌধুরী বাবরের ঢাকার বাসায় গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। মারজিনা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার বনকুরা গ্রামের আব্দুর রউফের তিন মেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। মা হারা মেয়েটি বাবরের বাসায় ১১ মাস আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করে।
মেয়েটির বাবা মো. আবদুর রউফ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, 'সবশেষ ঈদের ৪-৫ দিন আগে মেয়ের সাথে তার বোনের কথা হয়েছিলো। ঈদের পর সে বাড়িতে যাবার কথা ছিল। ১১ এপ্রিল আমরা মেয়ে মারা যাওয়ার খবর শুনে ঢাকায় সে বাসায় গেলে বাসা খালি দেখতে পাই। এরপর থানায় যোগাযোগ করে মামলা দায়ের করি। আমরা আদালতের কাছে আমার মা হারা মেয়ের এহত্যার বিচার চাই।'
মার্জিনার চাচা আবদুর রহমান বলেন, 'আমাদেরকে অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে টাকার লোভ দেখানো হচ্ছে। আমরা যেনো মামলা বাদ দেই। আমার ভাতিজিকে তারা খুন করে ফেলেছে। আমরা এটার বিচার চাই।'
রামনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, 'ওয়ারিশ বিহীন লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। এরপর গত কয়েকদিন আগে খিলগাঁও থানা থেকে আমাকে ফোন করে এই কবরটি পাহারা দিতে বলা হয়। আমরা গ্রাম পুলিশ দিয়ে গেলো কয়েকদিন কবরটি পাহারা দিয়ে রাখি।'
চাটখিল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, 'দু'জন বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চাটখিল থানা পুলিশ ও খিলগাঁও থানার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে লাশটি কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।'
বিষয়টি জানতে মাহাবুবুল হক চৌধুরী বাবরকে বারবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে গত ৮ এপ্রিল বাবরের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি তখন বলেছিলেন, 'মেয়েটি ৬ বছর বয়স থেকে আমাদের বাসায় কাজ করে আসছে। আমাদের বরিশালের এক কাজের মহিলা তাকে আমাদের বাসায় এনে দেয়। মেয়েটির কোনো জন্মনিবন্ধন করানো হয়নি। মেয়েটির নামটিও আমারই রাখা। আমাদের কাছে মেয়েটির ওয়ারিশদের কোনো ঠিকানা ছিল না। তাকে আমরা মেয়ের মতোই বড় করেছি। তার মৃগী রোগ ছিল। সে এ রোগেই মারা গেছে। মৃত্যুর বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কারণে আর কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালেও লাশটি নেয়া হয়নি। আমরা এম্বুলেন্স ব্যবহার করেই লাশ নিয়েছি।' তার এসব কথার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।