আধুনিকতার র্স্পশে বিলুপ্ত গরু দিয়ে ধান মাড়াই
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২১ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

আবহমান বাংলায় এক সময় গরু দিয়ে ধান মাড়াই ছিল বেশ উৎসাহ উদ্দিপনার। ধান কাটার মৌসুম এলে প্রতিটি বাড়ির উঠান নতুন রূপ পেত। এখন বরো মৌসুম, চারদিকে ধানকাটার ধুম।
কৃষকদের মূখে এখন হাসি। সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা, চারদিকে আনন্দের হাসি। তবে এখন আর গরু দিয়ে ধান মাড়াই দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই দেয়া যায়। যার ফলে গরু দিয়ে ধান মাড়াই দেয়ার যে আনন্দ ছিল তা হারিয়ে গেছে আধুনিকতার র্স্পশে।
বরো মৌসুমে ধান কাটার পূর্বে যে কর্মব্যস্থা দেখা যেত এখন আর নেই। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে প্রায় বাড়ির উঠান বৃষ্টি কারণে ছোট ছোট গর্ত হলে নতুন করে মাঠি ভরাট করে লেফ দেয়া হয়। দেখা যেত প্রতিটি বাড়ির উঠানে মাঠির সাথে গোবর মিশ্রিত করে লেফ (সিলেটী উঠান লেফা) দেয়া হয়। লেফা দেওয়ার কাছে নারীদের সাথে পুরুষরাও সহযোগিতা করতেন। তখনকার সময় প্রতিটি ঘরে ঘরে কম করে হলে ২-৪টি গরু থাকতো। যাদের ১০-১২ গরু থাকতো তাদেরকে বড় লোক, প্রভাবশালী লোক বলা হত। ধান মাড়াই দেয়ার জন্য ৪-৫ টি গরু লাগতো।
যাদের ২-১ টি গরু তারা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে মাড়াইর জন্য গরু নিয়ে আসতেন। এছাড়াও ধান কাটার মৌসুম এলের উজানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য মানুষদের নিয়ে আসা হতো। যাদের বাড়ি-ঘর ধান কাটার হাওর থেকে দূরে তারা তাবু বানিয়ে দিন রাত সেখানে অবস্থান করতেন এবং ধান কেটে তাবুর সামনে নিয়ে আসতেন। সেখানেই ধানের মাড়াই দিতেন-ধান শুকাতেন। তার পর বস্তা বন্ধি করে দুই চাকার বাহন দিয়ে ও কাধেও বহন করে নিয়ে যেতেন। বেশিরভাগ ধান মাড়াই বিকেলে ৪-৫ টার মধ্যে শুরে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো। আবারও অনেকেই ভোর বেলা ধান মাড়াই দিতেন। কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীদের প্রাধান্য ছিল বেশি। মাড়াই কাজ থেকে শুরু করে শুকানো পর্যন্ত কৃষানীরা ব্যস্ত সময় পার করতেন।
রাতে জমা কৃত (সিলেটে পারা) থেকে সকাল হলে কৃষানীরা বাড়ীর পাশে, উঠানে বাতাশের মধ্যে ধান বাছাই(ঝাড়) করতেন। তার পর উঠানে এবং বাশ দিয়ে তৈরী চাটের মত (ড্রামের) মধ্যে ধান শুকাতেন। সাধারণত বৈশাখ মাসে ধান কাটার মৌসূম থাকতো। যার কারণে যখন-তখন বৃষ্টি চলে আসতো। তখন কৃষকরা ধানকাটায় ব্যস্ত থাকতেন সে ক্ষেত্রে উঠান, ড্রাম থেকে উঠানো ছিল কৃষাণীদের প্রধান কাজ। এভাবেই দিনযাপন করতেন আবহবাংলার মানুষেরা।
কৃষক আজমান আলী বলেন, এখন হাওরজুড়ে বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। জমির পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। যে যেভাবে পারছেন ধান কাটায় ঝাপিয়ে পড়েছেন। কার আগে কে ধান কাটবেন, এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে হাওরে। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে টাকার বিনিময়ে এবং ধানের বিনিময়ে মানুষ পাওয়া যেত, এখন আর পাওয়া যায় না। এখন যুগ বদলে গেছে।
এখন ধান কাটা ও মাড়াই দেয়ার মেশিন বের হওয়ায়, মানুষজন বেশি লাগে না। মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে ধান কাটা যায়। আজমান আলী আরো বলেন, এক সময় ছিল গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিজেরা ধান কাটত এবং গরু-মহিষ দিয়ে ধান মাড়াই দিতে। এখন বিলীনের পথে গরু দিয়ে ধান মাড়াই, এখন গ্রামের কেই আগের মত গরু-মহিষ লালন-পালন করেন না। আজমান বলেন, যার কারণে মানুষ এখন মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই দেন।
সিলেটের প্রায় গ্রামে একটি রীতি ছিল সকালে একটি নির্দিষ্ট স্থানে গরু চারনের স্থান ছিল( সিলেটি গরু বারি) বলা হতো। প্রতিদিন ২জনের মানুষের তত্ত্ববধানে রাখা হতো। তারা গরুগুলো বিকেল ৪টা পর্যন্ত আগলে রাখতো। বিকেলে ৪টার পূর্বে মালিকরা তাদের গরুগুলো নিয়ে যেত। এভাবেই ছিল গ্রামীন মানুষের জীবন যাপন। দেশে বছরে বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি ফসলী জমির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রায় এলাকায় দেখা যায় ফসলী এলাকা বরাট করে করে বিভিন্ন নামে পল্ট, আবাসিক এলাকা তৈরী করা হচ্ছে।
এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি ও গরু চারণ ভূমি (সিলেটি গরু রাখার) জায়গা। আধুনিক যুগে এসে এখন দেখা যায় বিশেষ করে ভাটি অঞ্চলে গ্রামের পর গ্রামে কৃষিকদের গোয়ালায় একটি গরু ও দেখা যায় না। আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ও ব্যবহার বাড়ায় কৃষকরা গরু দিয়ে মাড়াই করতে আগ্রহী নয়। কম খরচে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত করে থাকেন প্রায়সব কৃষকরা। এমনকি যাদের নেই তারা ভাড়া করে মেশিন দিয়ে এবং মেশিন মালিকরা ঘন্টা ধরে হিসেবে করে ধান মাড়াই করে দিয়ে যান। আধুনিকতার র্স্পষে এভাবেই হারিয়ে গিয়েছে আবহবাংলার এতিহ্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

গ্রিন রেলওয়ের জন্য ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্প

ভোলা সমিতি ঢাকা’র নতুন কমিটি

রানাপ্লাজায় রেশমা উদ্ধার ছিলো সাজানো নাটক : এম সাখাওয়াত হোসেন

টিসিবির ভুয়া কার্ড বাতিল করে স্মার্টকার্ড চালু করা হবে : না.গঞ্জে খাদ্য উপদেষ্টা

কাশ্মীরের ২৬ হিন্দু পর্যটককে দিল্লি সরকার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ

গাজীপুরে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ৬ দিন পর মারা গেলো ১ বছরের আয়ান

ঢাবির প্রায় ৩০০ খ্যাতিমান গবেষককে সম্মাননা প্রদান

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

ব্যাংকের অভাবে হুন্ডির মাধ্যমে আসছে রেমিট্যান্স ইরাকের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

কদম রসূল সেতুর এপ্রোচ সড়কের মুখটি পুনঃনির্ধারণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শিক্ষা সংস্কার ও অসংগতি নিরসনের দাবি অভিভাবক ঐক্য ফোরামের

বরিশাল বিভাগ সমিতির মানববন্ধন

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন চায় না : মেজর হাফিজ

মেট্রোরেলের আরো ৫ স্টেশনে বিশেষ ব্যবস্থা

এনএসডিএ ও বাউবির সমঝোতা চুক্তি সই

অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সমস্যা তৈরি হয় : ড. ফরিদুজ্জামান

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম রাজপ্রাসাদে পেলেন রাজকীয় সম্মান

কাতার আমিরের দেওয়া এয়ার এম্বুলেন্সে ঢাকা আসবেন খালেদা জিয়া : মির্জা ফখরুল

চট্টগ্রামের আল্লামা সুলতান যওক নদভী’র দাফন সম্পন্ন

সাংবাদিকদের সহযোগিতা আমার কর্মপথকে সহজ করেছে : বুড়িচংয়ের বিদায়ী ইউএনও