ধুলো দূষণে নাকাল ফরিদপুরের লক্ষাধিক মানুষ, দেখার কেউ নেই!
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৫ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৫ এএম

ফরিদপুর নৌবন্দরসহ জেলা ও পৌর সদরের ধুলোর দূষণ, বায়ুদূষণ ও শব্দ দূষণে নাকাল লক্ষাধিক মানুষ। দেখার কেউ নাই। জেলা শহরের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হতে ধলার মোড়। এছাড়া আনন্দ বাজার, খলিল মন্ডল মোমিন খার হাটেও একই অবস্থা।
এদিকে, সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা এবং ডিক্রিচর ইউনিয়নের কমপক্ষে তিনটি ওয়ার্ড জুড়ে ইটের ভাটার রমরমা ব্যবসা যেমন চলছে তেমনি ইট পোড়াতে কাঠ কয়লার ধোঁয়া এবং ভাটায় আনা কাদা-মাটি, পানি ও ধুলোয় একাকার হয়ে পুরো এলাকা ধুলোয় ডুবেছে।
এক কথায় বলা যেতে পারে ধুলো দূষণের শহর ফরিদপুর। এই দুটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি সড়কের পাশে নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি, সবুজের ঘেরা গ্রাম এবং সবুজের সমারোহ ফসলের মাঠও ডুবে গেছে ধুলোয়ে।
বিশেষ করে ফরিদপুর সদরের নৌ বন্দর ঘাটটি ভরাট বালু, সাদা বালু, লাল বালু, সিমেন্ট, সার বোঝাই জাহাজ, কার্গো, ট্রলার, বড় নৌযান এসে এই ব্যস্ততম ঘাটটিতেই সকল প্রকার মালামাল লোড ও আনলোড করে।
এসব মালামালগুলো আবার এখান থেকেই পরিবহনে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায়। বন্দরঘাট কর্তৃপক্ষের দৈনিক হিসেবে মাসে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার বিভিন্ন ধরনের বড় বড় যানবাহন এখান থেকে ছেড়ে যায়, ফের ঘাটে ফিরে আসে। বৃষ্টির দিনে কিংবা বর্ষাকালে যখন এই পরিমাণ যানবাহন এসব সড়কে চলে তাতে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কই কাদা-পানি আর খালে পরিণত হয়। ওই কাদা-পানি ট্রাক ও ট্রলি মাল বোঝাই করে আসা যাওয়ার সময় উপচে উঠে সড়কের দুই পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডুকে পড়ে।
অন্যদিকে শুকনোর দিনেও এসব সড়ক ধুলোর সড়কে পরিণত হয়। সাথে যোগ হয় শত শত ট্রাক ট্রলি চলাচলের কালো ধোঁয়া।
এসব নিয়ে কারোরই কোনই মাথা ব্যথা নেই। প্রশাসন থেকে মাঝেমধ্যে কিছুটা উদ্যোগ নিয়ে থাকলে বেশিরভাগ সময়ই নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায় বলে স্থানীয়দের দাবি।
ফরিদপুর একটি প্রস্তাবিত বিভাগীয় জেলা শহর। সারা বাংলাদেশের মধ্যে টাঙ্গাইল এবং দ্বিতীয় ফরিদপুরকে ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসি ঢাকা জেলাকে ভেঙ্গে ফরিদপুর জেলার সৃষ্টি করেন। তখন ফরিদপুরের জন্য চারটি মহাকুমা ছিল। পরে ১৯৮৩ সালে ১৮ই জুলাই চারটি মহকুমাকে বিকেন্দ্রীক করে এরশাদ সরকার ফরিদপুরকে এক অধ্যাদেশ বলে মহাকুমা থেকে জেলায় উন্নতি করেন। সেই অতি পুরাতন ও ঐতিহ্যের জেলা ফরিদপুর বিগত ৫৫ বছরেরও তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
ফরিদপুর সদর উপজেলার বৃহত্তর দু'টি ইউনিয়ন নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রীরচর । এখানে প্রায় ৭/৮ ওয়ার্ডেই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী ও পুষ্টিহীন মানুষের বসবাস। পাশাপাশি সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৩/৪ টি ওয়ার্ডই পদ্মানদীর তীর ঘেঁষে উঠা। শহরের মধ্যে থেকে বহমান পদ্মার শাখা কুমার নদ প্রবাহিত। ফরিদপুর নৌ বন্দরের নিকটবর্তী মদনখালী ঘাট থেকে এই কুমার নদের বিস্তৃতি। তবে এ নদ গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা ও নড়াইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
বর্তমানে জেলা সদরের টেপাখোলা এলাকাটির গো- হাঁটের জন্য যেমন কাদা মাটি আর ধুলোয় ভরে উঠছে। তেমনি নৌবন্দর ঘাট এলাকাটিও ধুলোর ধূষনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বৃদ্ধ-আবাল-বণিতা দিশেহারা। এক কথায় বলা যায়, বৃষ্টির দিনে কাদা আর শুকনো মৌসুমে ধুলো।
বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এটা আরও বেড়ে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে কাদা আর পানি।
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আশরাফ আলী খান ইনকিলাবকে বলেন এই ধুলো দূষণের হাত থেকে শহরবাসীকে বাঁচাতে প্রশাসন এবং সামাজিক ভাবে উভয় কে দায়িত্বশীল হতে হবে। চলতি বছর শীতের শুরুতেই টানা কয়েক দিন বাতাসের মান খুবই খারাপ ছিল। পাশাপাশি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ৭-৮টি ইটের ভাটা এবং তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) সকালেও ঢাকার বাতাসের পরে ফরিদপুরের বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠছে।
এ অবস্থায় শিশু-কিশোর বৃদ্ধ-আবাল-বনিতা এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে ও অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, পরিবেশবিদ মোঃ আশরাফ উদ্দিন ফকির। তিনি ইনকিলাবকে আরো বলেন ধুলো সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ এবং অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর। পরিবেশ রাজেন্দ্র কলেজেরন পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইনকিলাবকে বলেন, সকলের জন্য পরামর্শ হলো ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না।অবশ্যই ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। এই হিসেবে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জও আছে বায়ু ধূষন, ধুলোয় দূষণ এবং শব্দ দূষণের অন্যতম।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ফরিদপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান লিমনের সাথে। তিনিও একজন পরিবেশবিদ, তিনি ইনকিলাবকে জানান, 'জেলা শহরের প্রাণ হলো ভাঙ্গা রাস্তার মোড়। এখানে থেকে প্রকাশ্যে মাটি বালুর ট্রাক ধুলো উড়িয়ে চললেও তাদের চোখে পড়ে নস।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় তরুণ সমাজ সেবক মো. সিদ্দিকুর রহমানের সাথে।
তিনি ইনকিলাবকে বলেন, দিনরাত নিয়ম অমান্য করে যেভাবে মাটি, ভরাট বালু ভর্তি ট্রাক যেভাবে ধুলো উড়িয়ে চলে যায় তাতে শহরে বসবাস করাটাই কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, 'ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ের সাথে জেলা পরিবেশ অফিস। কোন দিন দেখা যায়নি পরিবেশ নিয়ে তারা কিছু ভাবে বা কিছু করেন। করে শুধু ইট ভাটা, করাত কল ও মিষ্টির দোকানে তোলাবজি।'
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় নর্থ চ্যানেল ইউপি সদস্য মো. মেহেদী হাসান ইয়াকুবের সাথে।
তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, 'ভাই নৌবন্দর ঘাটে আমি ব্যবসা করি। দোকানে যে পরিমাণ ধুলো ঢুকে তাতে চারজন কর্মচারী লাগবে ধুলো পরিষ্কার করতে।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় সিএন্ডবি ঘাটের ব্যবসায়ী মো. মজিবর মিয়ার সাথে।
তিনি ইনকিলাবকে বলেন, নৌবন্দর ঘাটের ইজারা, খাজনা, টোল সব কিছু ভাগ নেন আশেপাশের ইউপি চেয়ারম্যান এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা ঘাটটি ধুলো-মাটি, কাদা-পানি নিষ্কাশনের বা পরিষ্কার করার কোন ব্যবস্থাই করেন না।
কথা হয় নৌবন্দর ঘাটের টোলপ্লাজার দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেরানীর সাথে।
তিনি ইনকিলাব বলেন, 'আমি কর্মচারী কাদা-মাটি ধুলো-বালি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবো না।'
এব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, 'সাবেক পৌর মেয়র অমিতাভ বোস বর্তমানে পলাতক আছে। তাইতো অতিরিক্ত দায়িত্বে জেলার ডিডি এলজি। বিষয়টি তাকে জানাবেন।'
এব্যাপার যোগাযোগ করা হলে ডিডি এলজি ও পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, 'ফরিদপুর পৌরসভার মধ্যে যেসব ধুলো কিংবা বায়ু দূষণ হয় সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিয়মিত জেলার উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়।
আমরা কিছুটা উদ্যোগও নিয়ে থাকি। তবে, বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এছাড়া সিএন্ডবি ঘাট ও নৌবন্দর আমার জানা মতে পৌরসভার মধ্যে না সেটা জেলা সদরের একটা ইউনিয়নের মধ্যে। তবুও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।'
এব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মোল্যা বলেন, 'বালু ও বায়ু দূষণের বিষয়টি সত্যি। তবে, আমি যোগদানের পর শহর দিয়ে দিনের প্রথমভাগে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করেছি। এছাড়া বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান করা দুষ্কর বটে। তবে, এরপর থেকে বালুবাহী ট্রাক যাতে বালু ঢেকে নেন সেটা নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া বালু ও ট্রাক মালিকদের সাথে বসে এব্যাপারে স্থায়ী কোনো সমাধান বের করা যায় কি-না সেটা নিয়ে কাজ করবো।'
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ছাগলনাইয়ায় বিজিবি'র হাতে আটক ভুয়া এনএস আই কর্মকর্তা

ঝিনাইদহে ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ২৫ জন, আবেগে কাঁদলেন অভিভাবকরা

কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে বিজিবির অভিযান স্কুল ব্যাগে মিললো হেরোইন

হামলার হুমকিতে ফের অনিশ্চয়তায় আইপিএল

শেষ মিনিটের নাটকীয়তায় জিতে বার্সার অপেক্ষা বাড়ালো রিয়াল

পিএসএলে দল পেলেন সাকিব

বেস্ট হোল্ডিংসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে দুদক

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে যৌথ বাহিনী মাঠে নামছে

বিদেশে উন্নত চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ

নতুন ‘স্ট্যান্ডার্ড’ স্থানের নামের তালিকা প্রকাশ করল চীন

ডা. জুবাইদা রহমানের জামিন

থানা ম্যানেজ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি লুৎফর

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সউদীতে ঐতিহাসিক ও বিলাসবহুল অভ্যর্থনা

নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত পাওয়ার আপিলের রায় ১ জুন

সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ

ছাত্রদল নেতা হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি

চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বমানের হলে অর্থনীতি দ্রুতবেগে পরিবর্তন হবে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নির্বাচনের দেখা নেই!

আদর্শ ইসলামী মিশন মহিলা কামিল মাদরাসা ফাজিল (ডিগ্রীতে) শতভাগ পাশের ধারা অক্ষুণ্ন

গাজীপুরে মহিলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার