রক্তদূষণ, রক্তে বিষক্রিয়া সেপসিস নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

জনসচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণার গুরত্বারোপ ভিসি’র

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:১৬ পিএম

 

রক্তদূষণ, জীবাণুদুষণ বা রক্তে বিষক্রিয়া সেপসিস বা সেপ্টিসেমিয়া নিয়ে এক সেমিনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি মাসে একটি সেমিনার এর অংশ হিসেবে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে রোববার (৯ এপ্রিল) সেমিনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

জীবাণুদূষণ বা ইংরেজিতে সেপসিস হলো খুব মারাত্মক অসুস্থতা যা ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু) দ্বারা রক্তের কার্য ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে। শরীরের একটি সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীর অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠলে সেপসিস হয়। রক্তদূষণের এই রোগে বিশ্বজুড়ে পাঁচজনের একজন মৃত্যুবরণ করেন। এটি রক্তের বিষ হিসাবেও পরিচিত। বছরে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এই সংখ্যা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার চাইতেও বেশি। সেপসিসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৮৫ শতাংশ। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০জন শিশুর মধ্যে চারজনের সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ’র ভিসি ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি এই রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণার উপর গুরত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সেপসিসে আক্রান্ত রোগীর ফুসফুস কিডনীসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর করে দেয়। সেপসিসে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা আইসিইউতে ভর্তি হয় সেক্ষেত্রে মৃত্যু হার আরো বেশি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা অধিক মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। তবে সেপসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে অনেককে বাঁচানো সম্ভব। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমিক) প্রফেসর ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম। সেমিনারে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেনারেল সার্জারি বিভাগে প্রফেসর ডা. মো. আবুল কালাম চৌধুরী, আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সজীব, প্যাথলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ফারহানা খানম।

সেমিনারে বলা হয়, জীবাণুদূষণ বা সেপসিস খুবই মারাত্মক অসুস্থতা যার মাধ্যমে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তের কোষগুলির কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায়। এটি দেহের প্রধান অঙ্গসমূহ যেমন- যকৃত, বৃক্ক (কিডনি), হৃদপিন্ড, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, অস্ত্র, এড্রেনাল গ্রন্থিকে সংক্রমিত করে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা আছে বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্রান্স জীবাণুর দ্বারা সংক্রমিত রোগীর দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে। জীবাণু রক্তে প্রবেশের পর মানবদেহে অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। জীবাণুর কোষপ্রাচীরের অংশ মানবদেহের রক্তনালীর কোষ, মনোসাইট এবং নিউট্রোফিলকে সক্রিয় করে এবং বিক্ষত- প্রদাহপূর্ব সাইটোকাইন নিঃসরণ করে। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত ও রক্তচাপ কমে যায়। টিস্যু ওডিমা হয়। ক্ষুদ্র রক্তনালিতে থ্রম্বোসিস হয়। ফলাফল স্বরূপ অঙ্গ ও অন্ত্রসমূহে অর্গান ফেইলর হয় । শেষ পর্যন্ত রোগীর সেপটিপসিম ডেভেলপ করে। রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তে ভর্তি করাতে হয় এবং শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ মৃত্যুবরণ করে।

সেপসিস ‘গুপ্ত ঘাতক’ হিসাবেও পরিচিত কারণ এটি সনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এই সেপসিস হতে পারে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কেবল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে শরীরের অন্যান্য অংশগুলিতেও আক্রমণ শুরু করে। এক পর্যায়ে মানুষের অঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এমনকি বেঁচে থাকা মানুষদেরও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ও অক্ষমতা নিয়ে চলতে হতে পারে। যেসব ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া সংক্রমণ বা ফুসফুসের রোগ হয়ে থাকে সেগুলোই সেপসিস হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ। সেপসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট রেট স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হয়।

রোগের চিকিৎসা হলো রোগীকে সাধারণত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা বিভাগে ভর্তি করা হয়। ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু) প্রতিরোধক ওষুধ ও তরল একটি শিরার মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়। অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং যে ওষুধ রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে, প্রয়োজনে তাও দেওয়া হয়। বিকল বৃক্ক বা কিডনির জন্য ডায়ালাইসিস করা প্রয়োজন। অকৃতকার্য ফুসফুসের জন্য একটি যান্ত্রিক শ্বাসযন্ত্র প্রয়োজন হয়। কিছু রোগীর জন্য ক্ষমতাশালী প্রদাহনিরোধক ঔষধ যেমন, করটিকোস্টেরয়েডস অথবা সহায়ক মানব-সক্রিয় প্রোটিন সি দ্বারা চিকিৎসা করা উপকারী হতে পারে।

রোগের প্রতিরোধ হিসেবে নির্ধারিত সুপারিশ ও সতর্ক অনুসরণ করে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। বিশেষভাবে হাসপাতালের শিশুদের জন্য চিকিৎসা-শাস্ত্রগত পদ্ধতি সতর্কতা ও যতœ সহকারে অনুসরণ করলে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

অনেক দেশের ক্ষেত্রে সেপসিস প্রতিরোধের উপায় হল, সুষ্ঠু পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি এবং সঠিক সময় সঠিক টিকার যোগান। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হল, দেরি হওয়ার আগেই সেপসিস আক্রান্ত রোগীদের ভালভাবে চিহ্নিত করা এবং দ্রুত তাদের চিকিৎসা শুরু করা। অ্যান্টিবায়োটিক্স বা অ্যান্টি-ভাইরাসের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নবজাতকের মধ্যে সেপসিস প্রতিরোধে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা দরকার এবং এই রোগের এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স মোকাবেলায় প্রয়োজন আরও বেশি সজাগ হওয়া।


বিভাগ : অর্থনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম রিজার্ভ মেটাল ক্রেডিট কার্ড-বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তিন বহুজাতিক কোম্পানি
ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটি ব্যাংক করা হবে: গভর্নর
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যে ১০৪% শুল্ক কার্যকর, বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি মো. রবিউল ইসলাম
আরও
X

আরও পড়ুন

সিরাজদিখান থানায় ওসির হেফাজতে ছাত্র হত্যা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা

সিরাজদিখান থানায় ওসির হেফাজতে ছাত্র হত্যা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা

আল্ট্রা স্লিম ডিজাইনে ৬৫০০ এমএএইচ ব্লু-ভোল্ট ব্যাটারির ভিভো ভি৫০ লাইট

আল্ট্রা স্লিম ডিজাইনে ৬৫০০ এমএএইচ ব্লু-ভোল্ট ব্যাটারির ভিভো ভি৫০ লাইট

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববন্ধন

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববন্ধন

ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

এ সরকারকে আরও ৫ বছর ক্ষমতায় চায় সাধারণ মানুষ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এ সরকারকে আরও ৫ বছর ক্ষমতায় চায় সাধারণ মানুষ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিবাদ করতে হবে: চবি ভিসি

জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিবাদ করতে হবে: চবি ভিসি

নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে চার ভাইযের সব পুড়ে ছাই

নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে চার ভাইযের সব পুড়ে ছাই

মেহেরপুরে হারানো ১০৭টি মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করে মালিককে তুলে দিল জেলা পুলিশ

মেহেরপুরে হারানো ১০৭টি মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করে মালিককে তুলে দিল জেলা পুলিশ

দৈনিক ইনকিলাবের সিংগাইর উপজেলা সংবাদদাতার মায়ের ইন্তেকাল

দৈনিক ইনকিলাবের সিংগাইর উপজেলা সংবাদদাতার মায়ের ইন্তেকাল

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

হাজীগঞ্জ পৌরসভার বেশীরভাগ খুঁটিতে জ্বলছে না সড়কবাতি, বেড়েছে মাদক সেবীদের আড্ডা

হাজীগঞ্জ পৌরসভার বেশীরভাগ খুঁটিতে জ্বলছে না সড়কবাতি, বেড়েছে মাদক সেবীদের আড্ডা

২০২৮ অলিম্পিকস ক্রিকেটে হবে ৬ দলের লড়াই

২০২৮ অলিম্পিকস ক্রিকেটে হবে ৬ দলের লড়াই

ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ ওসি আশরাফ হোসেন

ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ ওসি আশরাফ হোসেন

চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ও ভারতের  ৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ

চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ও ভারতের  ৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ

সিলেটে  লালগালিচা দেখে যেভাবে  বিরক্তি প্রকাশ করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সিলেটে  লালগালিচা দেখে যেভাবে  বিরক্তি প্রকাশ করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজবাড়ীতে ৩ ফসলী জমি থেকে মাটি বিক্রির অভিযোগ

রাজবাড়ীতে ৩ ফসলী জমি থেকে মাটি বিক্রির অভিযোগ

বিমানবাহিনী ঘাঁটির নাম পরিবর্তন

বিমানবাহিনী ঘাঁটির নাম পরিবর্তন

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন মফিদুর রহমান

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন মফিদুর রহমান

লৌহজংয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

লৌহজংয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন