আইএফসির রেকর্ড অর্থায়নের বছর
৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু প্রকল্প, অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ (এমএসএমই) এবং নারী ও কৃষকরা আইএফসির রেকর্ড অর্থায়ন থেকে উপকৃত হয়েছে । এসব তহবিল জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ বৈষম্য, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা এ অঞ্চলে দারিদ্র্য কমাবে এবং সমৃদ্ধি বাড়াবে।
উদীয়মান বাজারগুলোর বেসরকারি খাতে নিবেদিত বৃহত্তম বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আইএফসি জুনে শেষ হওয়া গত অর্থবছরে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ১০৮টি প্রকল্পে রেকর্ড ১১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রয়েছে আইএফসির নিজস্ব হিসাব থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং বাণিজ্য প্রবাহ সহজ করতে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্য ও সাপ্লাই চেইন অর্থায়ন ।
আইএফসির নিজস্ব হিসাব থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রতিশ্রুতির ৩৯ শতাংশ এমন সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রে প্লাষ্টিক দুষণ মোকাবেলায় সহায়তা করবে, যা এই অঞ্চলের অনেক দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এবং প্লাষ্টিক দূষণে মূখ্য ভূমিকা রাখছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে – মঙ্গোলিয়ায় প্রথম গ্রিন বন্ড এবং থাইল্যান্ডে সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থায়ন থেকে শুরু করে ভারতে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি রূপান্তরে সহায়তায় প্রাইসিং ইনসেনটিভসহ সাসটেইনিবিলিটি-লিঙ্কড অর্থায়ন ।
এই অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেকর্ড ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন ব্যবসার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসহ ১৬ লাখের বেশি সংখ্যক ঋণের ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে এমএসএমইতে অর্থায়ন সহজ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এমএসএমই গুলো এই অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদন্ড, যার আওতায় রয়েছে মোট ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯৭ শতাংশের বেশি এবং শ্রমশক্তির অর্ধেকেরও বেশি নিয়োজিত। ঋণের উচ্চ সুদের হার এবং ব্যাংকগুলোর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থায়ন বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অর্থায়ন প্রাপ্তি আরও উন্নত করা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইএফসির বিনিয়োগ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বীমা গ্রহণের সুযোগ বাড়াতেও সহায়তা করেছে। অন্যান্য প্রকল্প সাশ্রয়ী বাসস্থানের জন্য ৫ লাখেরও বেশি সংখ্যক ঋণ সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার অনেকগুলো সবুজ আবাসনের জন্য এবং এর ফলে এই অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উন্নতি হবে।
রেকর্ড ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে এবং পরামর্শূলক বা অ্যাভভাইজরি প্রকল্পের ৬৯ শতাংশের মধ্যে লিঙ্গ সমতা গুরুত্ব পেয়েছে। এই লক্ষমাত্রা ছিল ৪৫ শতাংশ।এই অঞ্চলে গ্রাহক কোম্পানিতে আইএফসি মনোনীত নারী পরিচালকদের হার ৬৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক করপোরেট লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমান অগ্রগতি অনুযায়ী লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পূর্ব এশিয়ায় আরও ১৮৯ বছর এবং দক্ষিণ এশিয়াতে আরও ১৪৯ বছর লাগবে, যেখানে বৈশ্বিক প্রাক্কলন ছিল ১৩১ বছর। বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ ও চাপ থাকায় এবং নারী শ্রমশক্তির কাঙ্খিত অগ্রগতি না হওয়ায় লিঙ্গ সমতার উন্নতির জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন সংকট একত্রিত হয়ে ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের খাদ্য ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে , যা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং কয়েক বছরের উন্নয়ন অর্জন মুছে ফেলেছে। এ অবস্থায় আইএফসি এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে একটি টেকসই চালের বাজার উৎসাহিত করা। নতুন গঠিত গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এটি আইএফসির প্রথম বিনিয়োগ। খাদ্য সংকট সামাল দিতে ৬ বিলিয়ন ডলারের এই বৈশ্বিক সহায়তা কার্য্রক্রম চালু হয়েছে। গত বছর এই অঞ্চলে নেওয়া আইএফসির প্রকল্পগুলো নারী কৃষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসহ ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত আইএফসির আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো পুলিতি বলেন, ’’ বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত এই অঞ্চলের বৃহত্তম উন্নয়ন ইস্যুগুলো মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই রেকর্ড অর্থায়নের বছর বেসরকারি খাতে সহায়তার ক্ষেত্রে আমাদের আঞ্চলিক নেতৃত্বকে মজবুত করেছে এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বিবর্তন পথনকশার আকাঙ্খা পূরণে সহায়ক হয়েছে।
এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কানেকটিভিটি বা সংযোগ এবং অন্তর্ভুক্তির চালিকাশক্তি হলো ডিজিটাইজেশন, যা গত বছর আইএফসির বিনিয়োগে গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে অত্যাধুনিক সাবমেরিন কেবল সিষ্টেমের মাধ্যমে বৈশ্বিক ইন্টারনেট সুপারহাইওয়েতে সংযোগে সহায়তা করতে মালদ্বীপে বিনিয়োগ প্রকল্প , ইন্দোনেশিয়াতে এমএসএমইর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সোশ্যাল কমার্স ষ্টার্টআপ প্রকল্প এবং জাতীয় ডিজিটাল পেমেন্ট সিষ্টেমস তৈরিতে ফিজি, সামোয়া এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সরকারগুলোকে পরামর্শ দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে।
এই অঞ্চলে নেওয়া আইএফসির অন্যান্য প্রকল্প ইন্দোনেশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং ফিজিতে শিশু পরিচর্যা পরিস্থিতির উন্নতি করবে, কম্বোডিয়ায় লজিষ্টিকস অবকাঠামো সুবিধা বাড়াবে এবং তিনটি স্থানীয় ব্যাংকে ক্রস–কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করবে। ##
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় সাবেক মেয়র তাপসসহ ৩০ জনের নামে মামলা
সরাইলে বিএনপি-যুবদলের সংঘর্ষে আহত ১০
পিকনিক বাসে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু : ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুতের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকবে আজ
বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস
কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আজ ঢাকায় বাংলাদেশ-বেলজিয়াম রাজনৈতিক সংলাপ
চকরিয়ায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন
আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত
ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে
ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি
ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক