ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কয়েকটি ইসলামি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, জবাবদিহিও নেই : ড. আহসান মনসুর

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম

 

ব্যাংক খাতের বেহাল অবস্থা তুলে ধরে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এখন সময় এসেছে ঘোষণা না দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু নতুন মুদ্রানীতিতে তেমন কিছুই দেখা গেল না। দেশের ১০-১৫টি ব্যাংক দুর্বল অবস্থায় পৌঁছে গেছে। দেশের এসব দুর্বল ব্যাংককে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ শুরু করতে হবে। সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করলেও ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংককে ঠিকই টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে। আবার এসব ব্যাংকের কোনো জবাবদিহিও নেই।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘অর্থনীতি: নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী নেতা ও শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক হাতে টাকা ছাপানো বন্ধ করে আরেক হাতে টাকা ছাপছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা দেওয়া হচ্ছে কয়েকটি ইসলামি ব্যাংককে টিকিয়ে রাখার জন্য। একদিকে কঠোর হওয়ার কথা বল হয়, অন্যদিকে ব্যাংক বন্ধ হবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পুরো খাতে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এখন বলা উচিত, দুর্বল ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে।

বিশিষ্ট গবেষক বলেন, বলা হচ্ছে, গভর্নরকে দেওয়া ক্ষমতায় ইসলামি ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। জনগণের টাকা এভাবে কোনো ব্যাংককে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। এভাবে টাকা দেওয়ার জবাবদিহি থাকতে হবে। কেন দু-তিন বছরে ব্যাংকগুলো এত খারাপ হয়ে পড়লে, এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন সরকারকে স্বল্প মেয়াদে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। সুদহার বাড়ালে ডলারের বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা আসবে। ব্যাংকের তারল্যসংকটেরও সমাধান হয়ে যাবে। বাইরে থাকা টাকা আবার ব্যাংকে ফিরে আসবে। পাশাপাশি আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় যা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে।

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশের অর্থনীতিতে আরেকটি সমস্যা হলো আর্থিক হিসাবের ঘাটতি। বড় করপোরেটরা আগে কম সুদে বিদেশি ঋণ নিয়েছিল, ডলারের দাম বাড়তে থাকায় এখন তা শোধ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে ঋণ নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সুদের হার দিয়ে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি, ডলারÑসংকট ও মূল্যস্ফীতি ঠিক করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার আবার কমে আসবে। এ ছাড়া আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ঠিক না হলে ডলারÑসংকট কাটবে না।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার দশমিক ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এ দিয়ে কোনো কাজ হবে না। পদক্ষেপ যত ছোট হবে, সমস্যা তত জিইয়ে থাকবে এবং আরও বড় হবে। ৯/৬ সুদের হার এমনিতেই বহুভাবে অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। ডলারের দাম নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু হলেও তা বাজারের কাছাকাছি রাখতে হবে। না হলে নতুন পদ্ধতি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ডলারের দামে অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ হলো বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ খাতে যেসব চুক্তি হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। বিদ্যুৎ ব্যবসাকে ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা হিসেবে আর রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাজারভিত্তিক করে দিতে হবে। যেসব চুক্তি হচ্ছে, তা প্রকাশ করতে হবে। বিশেষ করে আদানির মতো কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশ করা উচিত। কোনো একক কোম্পানিকে কাজ দেওয়া বন্ধ করে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে তা দিতে হবে। না হলে মনে হবে, বুকের ওপর পাথর চেপে বসেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে করের হার যৌক্তিক করতে হবে।

পণ্যের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও পণ্যের স্বল্পতার কারণে দাম বাড়ছে। দেশীয় উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়েও এখনো পণ্যের স্বল্পতা আছে


বিভাগ : অর্থনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো খুলনার তরুণরা
কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
সরকার কোনো ব্যাংক বন্ধ করবে না : অর্থ উপদেষ্টা
প্রাইম ব্যাংক’র সাথে চুক্তি করলো কাশপিয়া গ্রুপ
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাথে হজ এজেন্সি প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আরও

আরও পড়ুন

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক