‘বাজেটে কালোটাকা সাদা করার দাবি ব্যবসায়ীদের ছিল না’
০৮ জুন ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম
# বাজেটে পোশাক শিল্পে উৎসে কর অর্ধেক করার দাবি
আগামী অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক, নিট ও বস্ত্র মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। একই সঙ্গে বাজেটে কালোটাকা সাদা করার কোনো দাবি তাদের ছিল না বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্পের এই তিন ব্যবসায়ী সংগঠন। ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে ব্যবসায়ীদের তিন শীর্ষ সংগঠন বলছে, এমন কোনো দাবি অর্থমন্ত্রীর কাছে জানানো হয়নি। গত শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘কলোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’; আপনাদের পক্ষ থেকে আসলেই এমন কোনো দাবি ছিল কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই তিন ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিই বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘আমাদের এ সংক্রান্ত কোনো দাবি ছিল না।’
শনিবার (৮ জুন) ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে তারা। বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান বলেন, শুল্ক ০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ নির্ধারণ নতুন বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বা শিল্পাঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ করার জন্য আরও পাঁচ বছর যেন সময় দেয়া হয়, সেই দাবিও আমরা জানিয়েছি। এই সুযোগ যদি না দেয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগে বড় বাধা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না এবং রফতানি আয়ও বাড়বে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল। তা হয়নি। আগামী অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করার দাবি জানাই।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, মজুরি খরচে সরকারি সহায়তা না দিলে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করার পাশাপাশি এনবিআরের হয়রানি বন্ধ করা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কিছু প্রত্যাশা ছিল তিনটি সংগঠনের। যেমন- বাজেটে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউর ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানি কর রেয়াত, পোশাক শিল্পের ঝুট থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে। কিন্তু এসব ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে তিন সংগঠন।
সংগঠন তিনটি মনে করে, শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। গত অর্থবছর বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। ভবিষ্যতে রফতানি বৃদ্ধির আরও সম্ভাবনা আছে। সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় রফতানিতে কাক্সিক্ষত সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে করহার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। এতে অর্থনীতি বেশি উপকৃত হবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে এসেছে। একইসঙ্গে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পোশাক শিল্প একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তারা বলে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্প যখন এ রকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল সিংহভাগ রফতানি আয় অর্জনকারী পোশাক শিল্পকে সহায়তা দেয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
তিনটি সংগঠনের দাবি, কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ১৭১ ধারায় আমদানি করা পণ্যের এইচএস কোড ভুল হলে যে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান করা হয়েছে, সেটা তারা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। ভুলের জন্য অতি উচ্চ হারে মাশুল নেয়া কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। পাশাপাশি নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়নের আগে সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ বলেছে, তাদের মূল দাবিগুলো আমলে নেয়া না হলেও কিছু কিছু প্রস্তাব শিল্পের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সেগুলো হলো- আগে ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো; সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৭টি বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেয়া। এছাড়া শিল্পকারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ১ শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। তারা আবারও এই রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া। একই সঙ্গে পলিয়েস্টার ফাইবার ও পেট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ১০ ও ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুচ্ছ থেকে বের হতে শাবিকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম
ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পদযাত্রায় থাকুন : পিটিআই কর্মীদের উদ্দেশে বুশরা বিবি
তালায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু, আহত মা
লিভারপুলের বিপক্ষে ভিনিসিউসকে পাচ্ছে না রিয়াল
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে গণঅধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা
নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ৩৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত
বগুড়ায় ঢাকা চট্টগ্রাম কোচ টার্মিনালে শান্ত পরিবহনের কাউন্টার বন্ধের জেরে আতংক উদ্বেগ ও অস্থিরতা !
নির্বাচন কমিশন সংস্কারে ১৭ দফা প্রস্তাব বাংলাদেশ লেবার পার্টির
আন্দোলনে যোগ দিতে রোমানিয়া থেকে দেশে আসেন
মমতাকে নিয়ে সিনেমা বানালেন সৃজিত মুখার্জি, রুদ্রনীল বললেন প্রোপাগান্ডা নয়, এগুলো তো ঠাকুমার ঝুলি…’!
আইপিএলে দল পেলেন না রাহানে-উইলিয়ামসন-আগারওয়ালরা
স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা, ৩ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
একুশে টেলিভিশন দখল ছিলো গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধের বড় উদাহরণ
এবার নেতানিয়াহুর নাগালে পেলে গ্রেফতারের কথা জানাল ব্রিটিশ সরকার
‘ইমরান খানকে নিয়েই ফিরব’ সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন বুশরা
মহেশখালীতে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর সন্ত্রাসী হামলা -অভিযুক্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলাকারী
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে মাটি চাপা পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
নৌকায় উঠে বিপদে এখন সিলেটে এক শিবির নেতা : গ্রেফতার করলো পুলিশ
ডিবি হেফাজতে সনাতন মঞ্চের চিন্ময় কৃষ্ণ