দুষ্টচক্র ভালো উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে বাধা সৃষ্টি করছে
১০ জুন ২০২৪, ০৭:২২ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
# বাজেট বরাদ্দের চেয়ে বাস্তবায়নে গুরুত্বে দিতে হবে
# জলবায়ু মোকাবেলায় মেগাপ্রকল্প নেয়ার দাবি
# জলবায়ুর নীতি বাস্তবায়নে সমন্বয় এর অভাব
অর্থনীতিবীদ ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, প্রতিবছরই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজেট আসবে, কোথাও বরাদ্দ বাড়বে আবার কোথাও কমবে। কিন্তু বাজেটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাস্তবায়ন কিভাবে হচ্ছে ও কোথায় হচ্ছে সেটা। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের প্রথম তিন মাসে হয় ৩ শতাংশ, পরের তিন মাসে হয় ৯ শতাংশ এবং শেষ নয় মাসে সেটা হয়ে যায় ২৭/২৮ শতাংশ। তার পর থাকে তিন মাস, সেই তিন মাসে বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়। বাজেট বাস্তবায়ন হয়ে যায় ৮০ শতাংশ। এটার ম্যাজিকটা কি আমি জানিনা। ওই সময় বাজেটের টাকা ব্যয় করতে হবে তাই করা হয়, এবং তাড়াহুড়া করে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আরেকটা দিক হচ্ছে এই রকম ব্যয় করার হিড়িক যখন পড়ে তখন নয়-ছয় করার সুযোগ হয়, অনেকের পকেট ভাড়ি হয়।
সোমবার (১০ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ডর্প ও হেলভেটাস বাংলাদেশ আয়োজিত জলবায়ু, পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক বাজেট প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা’র সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্প চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্র্র্যাটেজিক স্টাডিজ- বিআইআইএসএস এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির।
ইআরএফ কার্য নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় সমাপনি বক্তব্য দেন ডর্প এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এএইচএম নোমান।
খলীকুজ্জমান বলেন, অনেকে বলেন এই খাতে বরাদ্দ বাড়েনি ওই খাতে কম হয়েছে, কিন্তু আমি বলি বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে কি হবে যদি খরচ না হয়। তার পর খরচ কোথায় হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়, কতটা মান সম্পন্ন হচ্ছে সেটাও আরেকটা বিষয়।
তিনি বলেন, আমাদের নীতি তৈরি করায় কোন সমস্যা নেই, সার্বিক দিক নির্দেশনায় কোন ঘাটতি নেই। টেকসই, উন্নয়ন ও কল্যান রাষ্ট্র গঠনের কথা বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন- তেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সমস্যা হয় বাস্তবায়নে।
এবার যে বাজেটে আমাদের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হলো ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা কিভাবে হবে? বাজেটেও এবিষয়ে বাজেট বক্তব্যে কিছু বলাও নেই। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ এটা সারা বছরে কমেতো নাই বরং বেড়েছে, বাজেট দেয়ার পর আরো বেড়েছে, এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
অথচ মূল্যস্ফীতি শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতিও আমাদের চেয়ে কম। তাদের যেটুকু বেড়েছিল তারা তা নিয়ন্ত্রণ করেছে। যে দুয়েকটি আর্থিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সেগুলো কোন কাজ করছেনা। অন্যদেশে এসব পদক্ষেপ কাজ করে আমাদের দেশে করেনা, কেন?
কারন আপনারা যাকে বলেন সিন্ডিকেট আমি বলি দুষ্ট চক্র। এই দুষ্ট চক্রগুলোতে যারা আছে তারা সঠিক পদক্ষেপগুলোকেও বাস্তবায়ন করতে দেয়না। আমাদের দেশে দুষ্টচক্র প্রায় সবজায়গাতেই রয়েছে, দুষ্ট চক্র আছে আলুর বাজারে, পানসুপারির বাজারে, ডলারের বাজারে আছে। বিদেশের শ্রমবাজারেও দুষ্ট চক্র রয়েছে, যার প্রমান কয়েকদিন আগেই দেখা গেল।
দুষ্টচক্রগুলো যেখানে আছে সেখানে যত ভালো পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত দুষ্টচক্রের লম্বা হাতগুলো হ্রাস করা না হয় ততক্ষণ তা বাস্তবায়ন হবেনা।
আমরা অগ্রগতি অনেক করেছি আর এই অগ্রগতিগুলো ধরে রাখতে ও তরান্বিত করতে হলে এই দুষ্ট চক্রগুলোকে দমন করতে হবে। আমাদের যদি এগিয়ে যেতে হয় তা হলে দুর্নীতির ক্ষেত্রে শুন্য সহনশীল হতে হবে। এবার দুজন রাঘব বোয়ালকে বিচারের মুখুমোখি করার প্রক্রিয়া চলছে। আমি আশা করবো শেষ পর্যন্ত বিচার হবে।
তিনি বলেন, আইএমএফ বলছে ব্যাংক খাতে সুশাসন বাড়াতে হবে, কর জিডিপি বাড়াতে হবে, বিদ্যুতের দাম ও গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। আইএমএফ’র যে শর্তগুলো মানলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সুসংগঠিত হতে পারতো সেগুলো বাস্তবায়ন হলো না।
এর মধ্যে কোনটা বাড়ছে যেটা সাধারণ মানুষের উপর পড়ে সেটা, যেমন বিদ্যুতের দাম। কারন সাধরন মানুষ খুব একটা প্রতিবাদ করতে পারবেনা। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি, কর জিডিপিও বাড়ছেনা। কেন হচ্ছেনা? কারন যারা বাস্তাবায়ন করেন তারা সঠিকভাবে কাজ করেন না। এক্ষেত্রে দিক নির্দেশনার সমস্যা নেই আমি আগেই বলেছি। যারা বাস্তাবায়ন করেন তারা অনেক সময় দিক নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কাজ করেন, নিজের মতো করে করেন। তারা এক চোখা সিদ্ধান্ত নেন, ঘুম থেকে ওঠেই মনে হলো এটা করবো করে ফেলেন। উদাহরন হলো- ডলারের মূল্য হঠাৎ ১১০ টাকা থেকে একদিনেই ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা। এটা আস্তে আস্তে বাড়াতে পারতে। তারা এটা চিন্তা করলোনা এটাতে মূল্যস্ফীতি কতটা বেড়ে যাবে, আমদানি খরচ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, অথচ মনোযোগ দেয়া দরকার কর জিডিপিতে। কারন আমরা যে বাজেটই দেইনা কেন তা বাস্তবায়নে সরকারের সামর্থ বাড়াতে হবে। এজন্য করজিডিপি বাড়াতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে কর জিডিপির হার ৩৪ শতাংশের উপরে। সেখানে আমরা ৮-৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছি। শ্রীলাংকা ও পাকিস্থানও আমদের চেয়ে বেশি রয়েছি।
এই পিছিয়ে থাকার কারন হলো যাদের আছে তারা কর দিচ্ছেনা, আর সাধারন মানুষকেই হয়রানি করা হচ্ছে। যারা দিচ্ছেনা তারা বহাল তবিয়তেই আছে। যারা নজরদারি করেন তাদের যোগসাজসে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় জন্য তিনটি পদক্ষেপের কথা বলেন। তিনি বলেন, বাজেটের অর্থ বা সম্পদ যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হয় ব্যবহার হয়। যেখানে ব্যয় করার জরুরি সেখানে আগে ব্যয় করতে হবে। বিশেষ করে উপকুল ও চড়াঞ্চলে যেখানে সাধারণ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না, উন্নত স্যানিটেশনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে এবং লোনাপানির কারনে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
এছাড়া জলবায়ুর ক্ষতিপ্রতিরোধ ও তার প্রভাব মোকাবেলায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বা মন্ত্রণালয় জড়িত তাদের মধ্যে কাজের সমন্বয় আনতে হবে। দেশে জলবায়ু নিয়ে ২৬টি নীতি ও পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তাবায়নে সমন্বয় নেই। অনেকে হয়তো সেই নীতিগুলোও জানেনও না। তৃতীয়টি সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা হলো দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। তাদের লম্বা হাতগুলো কমাতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহীতার আওতায় আনতে হবে।
আইপিসিসি লক্ষ্য অনুসারে ২০১৯ সাল থেকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে। অন্যথায় আমরা ভালো থাকতে পারবোনা।
তবে এক্ষেত্রে বিদেশি ফান্ড যে পরিমান প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায় তা আসেনা। অথচ উন্নত দেশগুলো যে পরিমান গ্রীনহাউস গ্যাস নি:স্বরন করে তার ৬ শতাংশও আমাদের হয়না। দেশের উপর দিয়ে সমুদ্রে যে পরিমান পানি সাগরে যায় তার ৯২ শতাংশই আসে দেশের
বাইরে থেকে। অথচ এই পানির কারনে আমাদের দেশে বন্যা হয়। তাই আমাদের গঙ্গার চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে এখনই আলোচনা করা দরকার।
ড. মাহফুজ কবির তার মূল আলোচনায় বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েল জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তার ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাউজিন (ওয়াশ) খাতে। যার পরিমান ৯৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৩৮৫ কোটি টাকা বড় শহরগুলোতে ওয়াসার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাকিটা চরাঞ্চল, উপকুল, পাহাড়ি অঞ্চলসহ পুরো দেশে কাজ হবে। ওয়াসার জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪৬৩ টাকা এবং সেই অনুপাতে সারাদেশের সাধারন মানুষের সুপেয় পানির, উন্নত স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ মাত্র ৫৫৫ টাকা খুবই অপ্রতুল। ন্যায্যতার ভিত্তিতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিৎ। অনেক অঞ্চলের মানুষকে এখনও বহুমাইল দূর থেকে সুপেয় পানি এনে জীবন বাচাতে হয়। উপকুলে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা দেশের মানুষের উন্নত পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য মেঘা প্রকল্পের দাবি জানান। তারা বলেন দেশের লোনাপানির মাধ্যমে ক্ষতি করে যে পরিমান আয় হচ্ছে তা এই ক্ষতি পোষানোর জন্য যথেষ্ট কিনা তা চিন্তা করতে হবে।
ডর্প এর উপ-নির্বাহী পরিচালক বিবিএস এর জরিপ তুলে ধরে বলেন দেশে প্রতিবছর নিরাপদ পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে প্রতি লাখে ১৬৭ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই এখাতের বরাদ্দ ও বাস্তাবায়নে অগারধিকার দিয়ে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে গণঅধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা
নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ৩৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত
বগুড়ায় ঢাকা চট্টগ্রাম কোচ টার্মিনালে শান্ত পরিবহনের কাউন্টার বন্ধের জেরে আতংক উদ্বেগ ও অস্থিরতা !
নির্বাচন কমিশন সংস্কারে ১৭ দফা প্রস্তাব বাংলাদেশ লেবার পার্টির
আন্দোলনে যোগ দিতে রোমানিয়া থেকে দেশে আসেন
মমতাকে নিয়ে সিনেমা বানালেন সৃজিত মুখার্জি, রুদ্রনীল বললেন প্রোপাগান্ডা নয়, এগুলো তো ঠাকুমার ঝুলি…’!
আইপিএলে দল পেলেন না রাহানে-উইলিয়ামসন-আগারওয়ালরা
স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা, ৩ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
একুশে টেলিভিশন দখল ছিলো গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধের বড় উদাহরণ
এবার নেতানিয়াহুর নাগালে পেলে গ্রেফতারের কথা জানাল ব্রিটিশ সরকার
‘ইমরান খানকে নিয়েই ফিরব’ সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন বুশরা
মহেশখালীতে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর সন্ত্রাসী হামলা -অভিযুক্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলাকারী
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে মাটি চাপা পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
নৌকায় উঠে বিপদে এখন সিলেটে এক শিবির নেতা : গ্রেফতার করলো পুলিশ
ডিবি হেফাজতে সনাতন মঞ্চের চিন্ময় কৃষ্ণ
পাকিস্তানে ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক গ্রেপ্তার
হাসিনা হটানোর অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায় : মাহফুজ
মোল্লা কলেজে হামলা-লুটপাট ও ছাত্র নিহতের ঘটনায় বিচারের দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের
পাকিস্তানে শিয়া সুন্নি সহিংসতায় নিহত ৮০, সাত দিনের যুদ্ধবিরতি