বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ১২ দফা দাবি বিনিয়োগকারীদের
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পিএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পিএম
ধারাবাহিক মার্কেট পতন ও অযোগ্যতার দায়ভার নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদ’ এর ব্যানারে এই দাবি জানানো হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা, ছাত্র-জনতার সরকারকে বেকাদায় ফেলতে এবং পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, স্বার্থ হাসিলে বিগত বিএসইসির জেড ক্যাটাগরি সংক্রান্ত উদ্যোগ বর্তমান সময়ে বাস্তবায়নে কারো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এদিন ১২টি দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর কারণে শেয়ারধারীরা মূলধন হারাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি উক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। কোম্পানি সম্পর্কিত নন-কমপ্ল্যায়েন্স এর জন্য পরিচালকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে কমপ্ল্যায়েন্স ঠিক করতে হবে। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ট বিতরণের অনিয়ম দূর হবে।
২) পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে সকল স্টেকহোল্ডারদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করে পারস্পরিক অনাস্থা দূর করে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেয়ার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ধারাবাহিক মার্কেট পতন ও অযোগ্যতার দায়ভার নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে তার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত।
৩) পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজির নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশে ‘পুঁজি বিনিয়োগ আইন’ প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। প্রকৃত লভ্যাংশ না পেলে এবং কোম্পানিগুলো প্রতারণার আশ্রয় নিলে যাতে বিনিয়োগকারীরা আইনী সুযোগ নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএসইসিকে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা বাড়াতে আইনের সময়োপযোগী সংশোধন করতে হবে।
৪) বিগত ১৫ বছর কারসাজির কারণে সৃষ্ট পতনে সর্বস্ব হারিয়ে যে সব বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা ও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, সে সব বিনিয়োগকারীর পরিবার থেকে একজনকে চাকরির সু-ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
৫) ২০১০ সালের ধসের পর থেকে আজ অবদি পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ পুঁজির জোগান দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে।
৬) চিহ্নিত কারসাজিকারকদের কারণে ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে বিগত সরকারের হামলা-মামলার রোষানলে পড়ে নিরীহ বিনিয়োগকারীরা। চরম আর্থিক সংকট, পারিবারিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। যার খবর কেউ রাখেনি। সুতরাং সকল হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে যত টাকা খরচ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৭) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য না দেয়া, প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা, কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে কথা বলার সুযোগ না দেয়া এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে এজিএম সম্পন্ন করে কোম্পানির এজেন্ডা পাস করানোর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সর্বপ্রকার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থার নামে চাঁদা আদায় ও এজিএমকে ঘিরে চলমান অনিয়ম দুর্নীতি অনুসন্ধান করে প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অবিলম্বে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
৮) পুঁজিবাজারের বর্তমান সংকটকালে ব্যাংকগুলোকে সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে, কারণ রাইট শেয়ার ছেড়ে সুবিধামতো সময়ে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তাই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নিশ্চিত করার কার্যকর ভূমিকা ও উদ্যোগগ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে।
৯) সবকিছু শুধু আইন দিয়েই হয় না, মানবিক বিষয়টি অনেক সময় আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায়। কারণ আইন যেহেতু মানুষের জন্যই। বর্তমান ধারাবাহিক দরপতনে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব। সুতরাং মানবিক কারণে ফোর্সসেল আপাতত বন্ধ রাখার আকুল আবেদন জানাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারকে অব্যাহতভাবে গতিশীল রাখার স্বার্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় করতে উদ্যোগ গ্রহণ করলেই ক্যুইটি মাইনাস অ্যাকাউন্টগুলো দ্রুত লেনদেনের আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামোয় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলোকে তহবিল বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে বিএসইসিকে নজর দিতে হবে।
১০) অতিদ্রুত বাইব্যাক আইন করতে হবে। কারণ সেকেন্ডারি মার্কেটে মৌলভিত্তি সম্পন্ন অনেক শেয়ারের মূল্য ফেসভ্যালুর কাছাকাছি। এমতাবস্থায় প্রিমিয়ামসহ ইস্যু মূল্যের নিচে শেয়ার দর নামলে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা মালিককে বাইব্যাক করতে হবে।
১১) আইনি নির্দেশনা থাকা সত্বেও ইস্যু ম্যানেজাররা মৌলভিত্তি সম্পন্ন ইস্যু না এনে, নাম সর্বস্ব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে অধিক প্রিমিয়ামসহ আইপিওএর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করার পর আর কোন দায়বদ্ধতা নিতে চায় না। অথচ তালিকাভুক্তির ৩ বা ৬ মাসের মাথায় অনেক কোম্পানি বিভিন্ন অজুহাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ বছরের পর বছর আটকে যায়। এর জন্য দায়ী ইস্যু ম্যানেজারদের চিহ্নিত করে জরিমানা আদায় পূর্বক লাইসেন্স বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন কোম্পানির সেকেন্ডারি মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর তাদের সার্বিক কার্যক্রম সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
১২) ‘পুঁজিবাজার বিষয়ক তথ্য ব্যাংক’ গঠন করে বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল প্রকার তথ্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করার সহজ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিএসসিইকে ডিএসই ও সিএসই সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান