প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই উদ্যোগের আওতায়, ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন দেশের বিচ্ছিন্ন চর, নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ও অন্যান্য দুর্গম এলাকার দুই লাখ ৪১ হাজার ৬০০ মানুষ।
‘জীবন খেয়া’ নামের এই ভাসমান হাসপাতাল দেশের নদীপথে ভ্রমণ করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। এটি খুলনা ও বরিশাল (দক্ষিণাঞ্চল), রাজশাহী ও রংপুর (উত্তরাঞ্চল) ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প পরিচালনা করছে। জাহাজে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।
প্রথম পর্যায়ে, ‘জীবন খেয়া’ ৪০ দিনের জন্য দেশের নদীপথে ভ্রমণ করেছে। খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও অন্যান্য দুর্গম এলাকায় ২৯টি স্থানে থেমে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে এই হাসপাতাল।
নতুন পর্যায়ে নদীপথের পাশাপাশি স্থলভিত্তিক আউটরিচ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প পরিচালিত হবে। এতে সাধারণ চিকিৎসা, চক্ষু চিকিৎসা, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সেবা এবং নির্দিষ্ট প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সেবা দেওয়া হবে। প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পরামর্শ ও এক সপ্তাহের মৌলিক ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। কল সেন্টার সুবিধার মাধ্যমে এসব রোগীদের জন্য চিকিৎসা-পরবর্তী সেবাও নিশ্চিত করা হবে। জরুরি প্রয়োজনে ক্যাম্প চলাকালীন অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্টও প্রদান করা হবে। প্রতি বছর ‘জীবন খেয়া’ ৯৬ দিন নদী ও সড়কপথে ভ্রমণ করবে এবং ৯৬টি স্থানে সেবা ক্যাম্প আয়োজন করবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমাদের দেশের বিচ্ছিন্ন চর বা নদী-দ্বীপগুলোতে প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রাম চলছে। সেখানে স্বাস্থ্যসেবার অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এসব এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারছি। জীবন খেয়া’ প্রথম পর্যায়ে যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে, তাতে আমরা আনন্দিত। এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের সেবা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। এছাড়া ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সঙ্গে মিলে পরিহারযোগ্য দৃষ্টিহীনতা প্রতিরোধেও আমরা কাজ করছি।‘
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস বলেন, “চিকিৎসা সেবার অভাবে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল এবং দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে গড় আয়ু অনেক কম, যেখানে প্রায় ঘরে অপমৃত্যু কিংবা রোগের ভোগান্তি চরমে। স্ট্যান্দার্ড চাটার্ড বাংকের স্পন্সরে এই ভ্রাম্যমান চিকিৎসা সেবায় উদ্যোগে এমন লাখো পরিবার উপকৃত হবে। রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি জন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।"
বাংলাদেশের অগ্রগতির দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার হিসেবে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেশের অনুপ্রেরণামূলক প্রবৃদ্ধি ও টিকে থাকার গল্পের সাথে সবসময় যুক্ত থেকেছে। ১১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ব্যাংকটি সমাজে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্য ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছে। সেবার পরিসর ও পরিধি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা বিভাগের অধীনে নিবন্ধিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের দরিদ্র সম্প্রদায়ের সাহায্যার্থে কাজ করে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।