বড় নোট-ছোট নোটের সমস্যা
০৩ মে ২০২৩, ০৭:২২ পিএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

বেশিরভাগ শহরে এটিএম বুথ রয়েছে। টাকা তোলার ঝামেলা এখন আর আগের মতো নেই। যখন ইচ্ছা তখনই টাকা তোলা যায়। তা একদিন জনৈক ভদ্রলোক এটিএম বুথে এলেন টাকা তুলতে। কার্ড পাঞ্চ করে, সিক্রেট কোড নম্বর টাইপ করে দশ হাজার টাকার উইথড্রল দিলেন। খানিক বাদে মেশিন থেকে দশ হাজার টাকা বের হলো। টাকা হাতে নিয়ে দেখেন ৫০০ টাকার নোট উনিশটি ও ১০০ টাকার নোট পাঁচটি। বেতন তুলতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। ছোট-বড় সব উইথড্রলে বড় নোটের আধিক্য বেশি থাকে। যে পরিমাণ টাকাই উঠানো হোক না কেন, নব্বই শতাংশ থাকবে এক হাজার বা পাঁচশ টাকার মতো বড় নোট। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ হয়তো মিলবে একশ টাকার নোট।
প্রতিষ্ঠিত নামিদামি একটি ব্যাংকের জমা তহবিল থেকে তুলতে ব্যাংকের ব্রাঞ্চে প্রতিমাসেই আসেন আব্দুল মালিক। এ মাসের পাঁচ তারিখেও আসলেন। ১৫,০০০ টাকা তুলবেন। কাউন্টারের পেমেন্ট ক্লার্ক পনেরোটি এক হাজার টাকার নোট দিলেন। বার কয়েক অনুরোধ করেও ১০০ টাকার একটি নোট পাননি। খুব চেনা জানা না থাকলে আজকাল ব্যাংক থেকে একশ বা পঞ্চাশ টাকার নোট পাওয়া যায় না।
অফিসে যাতায়াত, বাজার করা থেকে শুরু করে হরেক রকম কাজে হামেশাই ছোট নোটের দরকার পড়ে। একটি এক হাজার টাকার নোট নিয়ে এক ব্যাংকে ভাঙাতে গিয়েছিলেন এক প্রবীণ শিক্ষক। ‘নেই’ বলে হাসিমুখে তাকে ফিরিয়ে দিলেন কাউন্টারে থাকা ব্যাংককর্মী। ২, ৫, ১০ টাকার নোটের জোগান ব্যাংকেও কম বলে জানিয়ে শিক্ষককে বিদায় দিলেন।
দিন কয়ক আগের কথা। পেশায় বিমাকর্মী এক ভদ্রলোক এসেছেন স্কুটারে পেট্রোল কিনতে। লাইনে দাঁড়িয়ে তিন লিটার পেট্রোলের জন্য কাউন্টারের লোকটার হাতে তিনি ৫০০ টাকার একটা নোট দিলেন। টাকাটা হাতে নিয়ে পাল্টে দিতে বললেন কাউন্টারের মাঝবয়সী লোকটা। কেন পাল্টাতে হবে, জানতে চাইলে কর্কশ স্বরে উত্তর এল-এটা জাল নোট। কেন এটাকে জাল বলা হলো, জানতে চাইলেন বিমাকর্মী। বাদানুবাদ শুনতে পেয়ে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এসে টাকাটা হতে নিয়ে দেখলেন পাম্প-মালিক। এরপর ধমকের সুরে কর্মচারীকে নোটটা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতে বললেন।
সুলতান উদ্দীন বাজারে এসেছেন বাজার করতে, বাজেট ৮০ টাকা। অল্প শাকসবজি নিয়েছেন। ১৫ টাকার আলু চেয়ে শেষ সম্বল ২০ টাকার নোটটা দোকানির দিকে বাড়িয়ে দিলেন। দোকানি ২০ টাকার আলু দেবার প্রস্তাব দিলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে পাশের দোকানে এসে হাজির হলেন সুলতান উদ্দিন। পাঁচ টাকা নেই, একই উত্তর শুনতে হলো। পরে বাধ্য হয়ে ২০ টাকার আলু নিলেন।
টাকা নিয়ে টানাপোড়নের এ ঘটনাগুলোর সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। ছোট নোটের আকালের কারণে এখন বাজার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফাপড়ে পড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা। অপরদিকে বড় নোট নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটা সন্দেহের বাতাবরণও সৃষ্টি হয়েছে। আর এর মূল হচ্ছে বাজারে জাল নোটের ছড়াছড়ি। বিক্রেতারা স্বভাবতই অতিরিক্ত সতর্ক। একশ শতাংশ নিশ্চিত না হয়ে কোনো বড় নোট কেউ নিতে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু ছোট নোটগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই বললেই চলে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, ছোট নোটের এত সুবিধা স্বত্ত্বেও বাজারে এগুলোর ঘাটতি কেন?
বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি কমবেশি বাড়ছে। বাড়ছে মাথাপিছু গড় আয়। ফলে দ্রব্য ও সেবার চাহিদাও বাড়ন্ত। বৃদ্ধির এ উচ্চহারের সাথে সঙ্গতি রেখেই অর্থের বাজারে ১০০০ বা ৫০০ টাকার মতো বড় নোটের চাহিদা বাড়ছে। অপরদিকে এদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে আগুন।
আয় বণ্টনেও বৈষম্য বাড়ছে তাই দারিদ্রের প্রকোপও ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশিরা নগদ টাকার বিনিময়েই বাজারে কেনাকাটা করে। তাঁরা ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার এখনো খুব বেশি করে না। এ কারণেই দেশের অর্থনীতিতে নগদের প্রাধান্য পুরোমাত্রায় রয়ে গেছে। এ ধরনের নগদ প্রাধান্য অর্থনীতিতে বড় বড় নোটের বাড়াবাড়ি রকমের উপস্থিতি সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। সমস্যা আরো জটিল হচ্ছে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে।
ইদানীং এ কথাটা প্রায়ই শোনা যায়, দশ টাকায় এখন কিছুই মেলে না। সাত আট বছর আগে এক টাকার ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য ছিল। এর অর্থ হলো টাকার মূল্যে ধস নামছে।
বাজারে বড় নোটের আধিক্য অর্থের বাজারের আর একটি দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। এটি দুর্বল আর্থিক সংযুক্তিকরণকে ইঙ্গিত করে। এর থেকে বুঝা যায় লেনদেনের বিকল্প চ্যানেলগুলোর উপস্থিতির ঘাটতি রয়েছে। বিকল্প চ্যানেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড। উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তারা বড় বড় কেনাকাটার জন্য কার্ড ব্যবহার করে থাকে। আর ছোট ছোট লেনদেনের জন্য ছোট নোটগুলো ব্যবহার করে। তাই উন্নত দেশগুলোতে বড় নোটের চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
উন্নত দেশগুলোতে ছোট ছোট নোটগুলোকে বাজারে বেশি বেশি করে ছাড়া হচ্ছে। বড় নোটগুলোকে ক্রমেই বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাজারে বড় নোটের দাপট বেশি থাকলে সমাজে অপরাধ, দুর্নীতির প্রকোপ বাড়ে। জাল নোট বাজারে ছাড়ার সুযোগ বাড়ে। কিছুদিন আগে ব্রিটেনে পাঁচশত পাউন্ডের নোট বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অপরাধ জগতের সাথে বড় নোটের সংযোগ বেশি হয়। এ সব কারণেই আমেরিকাতে ১০০ ডলারের চাইতে বড় নোট বাজারে ছাড়া হয় না।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিস্ফোরণে প্রকম্পিত পোর্ট সুদান, নতুন করে দানা বাঁধছে মানবিক বিপর্যয়

খালেদা জিয়ার আগমনী অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণকারীগণকে ধন্যবাদ: বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

বছর জুড়ে শিশুর টিকার সংকট, অভিভাবদের দুশ্চিন্তা

গাজায় ইসরাইলি হামলা চলছেই, যুদ্ধবিরতি ‘অর্থহীন’ জানালো হামাস

নরসিংদীতে দাফনের ৬ মাস পর সাবেক পৌর কমিশনারের মরদেহ উত্তোলন

চিকিৎসাধীন মাকে দেখতে আজই হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জোবাইদা

হেঁটে ফিরোজায় ঢুকলেন খালেদা জিয়া

বহুল আলোচিত তালার ইউএনওকে রংপুরে বদলি

সালথায় আমগাছে ঝুলছিল যুবকের ঝুলন্ত লাশ

পঞ্চগড়ে সাবেক ডিসি-এসপি ও এমপি-মন্ত্রীর নামে হত্যা মামলা

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা

ঝিনাইদহে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু

নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন নিহত, আহত-১

ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন : প্রেস সচিব

ইরান-ভারত-পাকিস্তান কূটনীতি, উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার পথে আব্বাস আরাগচি

এটিএম আজহারের আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

মেট গালায় কিয়ারার ঐতিহাসিক মূহুর্ত উদযাপন;গ্লো ছড়িয়েছে বেবিবাম্প

সেই বাবুর্চির হাতে খালেদা জিয়া-দুই পুত্রবধূর জন্য বিশেষ রান্না

পুলিৎজার জিতলেন ফিলিস্তিনি লেখক মোসাব আবু তোহা, গাজার রক্তাক্ত গল্পে বিশ্বজয়