দাবদাহে উৎপাদন ও পরিবেশে বিপর্যয়
১১ মে ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

বৈশাখ মাস শেষ হতে চলেছে। দেশের কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। প্রখর রৌদ্রে পুড়ে যাচ্ছে ফসলের মাঠ, প্রান্তর। অব্যাহত তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না ঘটলেও সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় মোচার আগমন নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তাপের কারণে ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বোরো মওসুমে বৃষ্টিপাত না হলেও পরিকল্পিত সেচব্যবস্থা এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাম্পার ফলন হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিজনিত ফসলহানি, কিংবা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ফসলহানিও এবার হয়নি। তবে অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে গ্রীষ্মকালীন সব্জি আবাদে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। বগুড়াসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর অনেক কৃষক এবার অব্যাহত খরায় শুকিয়ে যাওয়া মাটিতে শাক-সব্জি চাষাবাদের সাহস করতে পারেননি। গতবছর বগুড়ার কৃষকরা সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সব্জি আবাদ করেছিলেন, এবার তা কমে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বরাতে গতকাল একটি সহযোগী ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন সব্জি উৎপাদনে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৬৬ লাখ হেক্টর, সেখানে মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত ২.৯৬ লাখ হেক্টর জমিতে সব্জি আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যে জানা যায়।
অব্যাহত খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে অনেক কৃষক সব্জি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর কম জমিতে আবাদ হওয়া গ্রীষ্মকালীন সব্জির ফলন নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত তাপ এবং দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন আবহাওয়ায় গাছপালার বর্ধন ও সব ধরনের শাক-সব্জি ও ফলফলাদির উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত বৈশাখের বৃষ্টিপাতের উপর ভর করেই গ্রীষ্মকালীন শাক-সব্জি চাষের আয়োজন হয়ে থাকে। এবার চৈত্র মাস থেকে বৈশাখের শেষাবধি বৃষ্টি না হওয়ায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক কৃষক সব্জির ক্ষেতে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সব্জির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বর্ধিত মূল্যে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের উপর পড়বে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সংকটে অব্যাহত তাপপ্রবাহ বাজারের উত্তাপকে আরো বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে। তাপপ্রবাহ আমাদের জনজীবনের সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাবের সাথে সাথে খাদ্য নিরাপত্তাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়, বিশ্বের উষ্ণায়ন ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা তথা জনজীবনে নানামুখী প্রভাব প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
যতই দিন যাচ্ছে, ভূম-লের উষ্ণায়ন ও আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে শুরু করেছে। একদিকে দীর্ঘমেয়াদি খরা, অব্যাহত তাপপ্রবাহ অন্যদিকে একের পর এক ভূমিকম্প, বজ্রপাত এবং সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে বিপর্যস্ত হচ্ছে বিশ্বের সব প্রান্তের জনপদ। আমাদের মতো দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে প্রকৃতির এমন বেখেয়ালি আচরণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং অব্যাহত মূল্যস্ফীতি কোটি কোটি মানুষকে নিরব দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। হঠাৎ করেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ পরিস্থিতির জন্য তথাকথিত উন্নয়নের নামে জীবন ও প্রকৃতির উপর দীর্ঘদিন ধরে চলা বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞই দায়ী। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তরফে কয়েক দশক ধরে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের কথা বলা হলেও আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারকরা এসবে তেমন কর্ণপাত করেনি। নির্বিচারে সবুজ বনভূমি উজাড় করা হয়েছে। ফসলি জমির উপর, জলাভূমি ভরাট করে, খাল ও নদী দখল করে শিল্পায়ন ও আবাসন গড়ে তোলা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে আমাদের রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সবগুলো বিভাগীয় শহরের বাতাস, নদীর পানি ও পরিবেশ চরমভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। অনেক দেরিতে হলেও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও প্রভাবশালী মহলের জবরদখল থেকে শহরের খাল, ভরাট হওয়া জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সবুজায়নের উদ্যোগকে সফল করতে না পারলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়। শহরে অগ্নিকা- নিরোধ, যানজট নিরসন, পরিবেশগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সবুজ প্রকৃতি, জলাভূমি এবং সুপেয় পানির উৎসগুলোকে দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা ও সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিস্ফোরণে প্রকম্পিত পোর্ট সুদান, নতুন করে দানা বাঁধছে মানবিক বিপর্যয়

খালেদা জিয়ার আগমনী অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণকারীগণকে ধন্যবাদ: বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

বছর জুড়ে শিশুর টিকার সংকট, অভিভাবদের দুশ্চিন্তা

গাজায় ইসরাইলি হামলা চলছেই, যুদ্ধবিরতি ‘অর্থহীন’ জানালো হামাস

নরসিংদীতে দাফনের ৬ মাস পর সাবেক পৌর কমিশনারের মরদেহ উত্তোলন

চিকিৎসাধীন মাকে দেখতে আজই হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জোবাইদা

হেঁটে ফিরোজায় ঢুকলেন খালেদা জিয়া

বহুল আলোচিত তালার ইউএনওকে রংপুরে বদলি

সালথায় আমগাছে ঝুলছিল যুবকের ঝুলন্ত লাশ

পঞ্চগড়ে সাবেক ডিসি-এসপি ও এমপি-মন্ত্রীর নামে হত্যা মামলা

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা

ঝিনাইদহে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু

নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন নিহত, আহত-১

ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন : প্রেস সচিব

ইরান-ভারত-পাকিস্তান কূটনীতি, উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার পথে আব্বাস আরাগচি

এটিএম আজহারের আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

মেট গালায় কিয়ারার ঐতিহাসিক মূহুর্ত উদযাপন;গ্লো ছড়িয়েছে বেবিবাম্প

সেই বাবুর্চির হাতে খালেদা জিয়া-দুই পুত্রবধূর জন্য বিশেষ রান্না

পুলিৎজার জিতলেন ফিলিস্তিনি লেখক মোসাব আবু তোহা, গাজার রক্তাক্ত গল্পে বিশ্বজয়