ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

দেশে চলমান তীব্র তাপদাহের বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের আশায় মহান আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি কামনা করে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা খোলা ময়দানে দুরাকাত ‘সালাতুল ইসতিসকা’ নামাজ আদায় করছে। মুসলমানরা শত শত বছর ধরে বৃষ্টির আশায় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে এ নামাজ আদায় করে আসছে। এ প্রেক্ষিতে, গত বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের মাঠে ‘সালাতুল ইসতিসকা’ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে অন্যান্য বিভাগের ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সাড়া দেয়। তবে গরমের অজুহাতে তাদের খোলা মাঠে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরস্বতী পূজা, হোলি উৎসব, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মাচার পালনে কোনো বাধা দেয়া না হলেও বৃষ্টির জন্য ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমান শিক্ষার্থীরা দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে চাওয়ায় গরমের অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং উঠা স্বাভাবিক। খোড়া যুক্তি দেখিয়ে নামাজ আদায় করতে না দেয়াকে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে। কারণ, প্রচ- তাপদাহের মধ্যেই মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে। ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে প্রায়ই মিছিল-মিটিং করছে এবং তাতে গরম কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। অথচ কয়েক মিনিটের নামাজে গরম অসুবিধা করবে, এ অজুহাতে অনুমতি না দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বিমুখী নীতি ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ। এটা দুঃখজনক এবং এতে শিক্ষার্থীসহ মুসলমান মাত্রই ক্ষুব্ধ এবং প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব বাংলার মুসলমানদের দাবীর মুখে। নবাব সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন মুসলমান নেতৃবৃন্দ বৃটিশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে, দেন-দরবার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তখন প্রভাবশালী হিন্দুরা চরম বিরোধিতা করেছিলেন। তারা মুসলমানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সুযোগ দিতে নারাজ ছিলেন। মুসলমান কৃষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে তারা প্রচার চালিয়েছিলেন। এই ইতিহাস কমবেশি সবারই জানা। অথচ মুসলমান নেতৃবৃন্দের দৃঢ়তা এবং দাবির মুখেই বৃটিশ সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিল। নবাব সলিমুল্লাহ জমি দিয়ে, অন্যরা অর্থ দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। স্বাধীনতা সংগ্রামসহ তার আগে পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। যে মুসলমান কর্তৃক মুসলমানদের শিক্ষা ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুসলমান শিক্ষার্থীরাই নামাজ পড়তে পারবে না, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। হিন্দুদের ধর্মাচার ও সাংস্কৃতিক উৎসব হতে পারলে, মুসলমানদের ইসতিসকা নামাজ কেন হবে না? শুধু এই নামাজই নয়, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কুরআন নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেয়া হয়নি। ইফতার অনুষ্ঠনেও বাধা দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? কিছুদিন আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই এক সেমিনারে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়েছে। তাতে অংশগ্রহণকারী সকলেই দাঁড়িয়ে কণ্ঠ মিলয়েছে। এ নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। এসব কর্মকা- থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার কাছে আত্মা বন্ধক দিয়ে রেখেছে এবং কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই ‘অসাম্প্রদায়িক’ হিসেবে পরিচিত। এখানে সব ধর্মের ধর্মাচার পালনে কোনো বাধা নেই। এখানে যেমন মুসলমানদের মসজিদ, হিন্দুদের মন্দির, শিখদের প্রার্থনালয় রয়েছে, তেমনি সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও ধর্মাচার পালন করছে। এ অবস্থায় যখন, সারাদেশের তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির আশায় প্রার্থণার জন্য মুসলমান শিক্ষার্থীরা ‘সালাতুল ইসতিসকা’ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে, তখন কর্তৃপক্ষের বাধা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত দেয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের বিধি-বিধান অনুসৃত ও পালিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ তাদেরই ধর্মাচার পালনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একের পর এক বাধা দিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মুসলমানদের মনে আঘাত পাওয়া স্বাভাবিক। তারা ধর্মাচার পালনে এ ধরনের বাধা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এ থেকে দেশের মানুষের কাছে যদি প্রতীয়মান হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলেই ধর্মাচার পালন করতে পারছে না, তাহলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে থাকে, মুসলমান বিদ্বেষী কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, তাহলে ভুল করবে। আমরা আশা করব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বিবেচনায় রেখে যথাযথ আচরণ করবে। কোনো ধরনের বৈষম্য প্রশ্রয় দেবে না। নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখবে। বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রাফায় ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : মস্কো

রাফায় ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : মস্কো

চীনের বিরুদ্ধে এবার আমেরিকার নতুন জোট ‘স্কোয়াড’, কেন বাদ ভারত?

চীনের বিরুদ্ধে এবার আমেরিকার নতুন জোট ‘স্কোয়াড’, কেন বাদ ভারত?

জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ছে

জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ছে

ড. ওয়াজেদ কর্মের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বেঁচে থাকবেন : প্রেসিডেন্ট

ড. ওয়াজেদ কর্মের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বেঁচে থাকবেন : প্রেসিডেন্ট

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলা

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলা

বুড়িমারী এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বুড়িমারী এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ