কৃষক ও গবেষকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম

গত ৫ দশক ধরে দেশের জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কৃষি উৎপাদন। বিশেষত ধান গবেষণায় অভাবনীয় সাফল্য এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এক সময়ের দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলের মানুষের জন্য এখন দু’ বেলা পেটভরে খেয়ে বেঁচে থাকা অনেকটা সহজসাধ্য হয়েছে। তবে একদিকে প্রকৃতির হেঁয়ালি আচরণ, অন্যদিকে নানা কারণে কৃষি জমির পরিমান ও উর্বরতা কমে যাওয়ার বাস্তবতা আমাদের আগামীদিনের খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতিকে এক অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষত উজানে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর উপর ভারতের বাঁধ নির্মান ও পানি প্রত্যাহারের কারণে এক সময়ের নদী বিধৌত দেশ এখন মরুময় হয়ে উঠেছে। নদীতে এবং প্রধান প্রধান সেচ প্রকল্প এলাকায় পর্যাপ্ত পানি না থাকা এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়ার বাস্তবতায় কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন নতুন বিকল্প ভাবনা ও প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের জন্য প্রকৃতির হেয়ালিপনাকে মোকাবেলা করে ক্ষরা সহিষ্ণু, বন্যা সহিষ্ণু, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন আমাদের কৃষি গবেষকরা। এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বেশকিছু সাফল্যও এসেছে। সেই সাথে অধিক ফলন ও পুষ্টিমান সম্পন্ন ধানবীজ উদ্ভাবনেও সফল হয়েছেন আমাদের কৃষি গবেষকরা।
প্রয়োজনই আবিষ্কারের পথ দেখায়। আমাদের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিগত ৬ দশকের অভিজ্ঞতার আলোকে এ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ব্যাপক সেচ তথা পানি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। পানির সংকট মোকাবেলা করে সেচ নির্ভর কৃষি আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। অতএব, সেচবিহিন ও খরা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনে আরো মনোযোগ দাবি করে। এ ক্ষেত্রে ক্ষরা সহিষ্ণু নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের চেয়েও আরো বেশি কিছু ইতিমধ্যে আমাদের হাতের নাগালে ধরা দিয়েছে। একবার রোপণের পর বছরে পর্যায়ক্রমে একই ধানগাছ থেকে পর পর ৫ বার ধান আহরণের মত ঘটনাও ইতিমধ্যে ঘটেছে। এমন এক ধানজাত উদ্ভাবন করেছেন মৌলভীবাজারের জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। অষ্ট্রেলিয়ার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধান গবেষক হিসেবে কর্মরত আবেদ চৌধুরী পঞ্চবৃহী নামের নতুন ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন, যাতে একই গাছ থেকে ৫বার ধান উৎপাদনে সক্ষম। ব্যাপক সেচ নির্ভর ধানচাষের সংকট উত্তরণে এ ধরণের ধানবীজ জাতিকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ ধরণের ধানচাষে উৎপাদন খরচ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বড় সাফল্য হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আমাদের ধান ও কৃষি গবেষণা সংস্থার গবেষক ও বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ কৃষক ও খামারিদের উদ্ভাবনী প্রতিভা ও শ্রমসাধনায় কৃষির প্রতিটি সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য ধরা দিয়েছে। ধান, আলু, ভূট্টা, সব্জি, মাছ, পোল্ট্রি ও গবাদিপশু উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অজর্নের পথে দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা এ ক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় অবদান রাখছেন। সম্প্রতি চীনের কৃষি বিজ্ঞানীরা মরুভূমিতে ধান উৎপাদনে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ উষর মরুতে কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। মেগা প্রকল্পের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার চেয়ে কৃষি গবেষণা, খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়গুলো সংরক্ষণ করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে উ””শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ, প্রণোদনা ও সরকারি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। দেশে চলমান খরা ও তাপপ্রবাহ আমাদের সামগ্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। এ ধরণের প্রাকৃতিক বাস্তবতার কথা মাথায় রেখেই আমাদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে হবে। যাদের অক্লান্ত শ্রমে কৃষি উৎপাদনের প্রতিটি খাতে আমাদের জন্য সাফল্য নিয়ে এসেছে এবং প্রতিকুল বাস্তবতা মোকাবেলা করে আগামী দিনের সম্ভাব্য সংকট উত্তরণের পথ দেখাচ্ছে, তাদের প্রতি আমাদের অফুরাণ সালাম, শুভ কামনা। এরাই জাতির সত্যিকারের সূর্যসন্তান। কৃষক এবং কৃষি গবেষকদের পাশে থাকতে হবে এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুমকীতে কাপ পিরিচ মার্কার প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-৫

দুমকীতে কাপ পিরিচ মার্কার প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-৫

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেনের ইন্তেকাল

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

রাজবাড়ীতে ভোট চেয়ে বাড়ী ফেরার পথে একজনকে কুপিয়ে জখম

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে