মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম

চলমান তীব্র তাপদাহে দেশের উৎপাদনশীল খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তীব্র গরমে পোল্ট্রি খাতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মুরগী মারা যাচ্ছে। ডিম উৎপাদন কমে গেছে। এ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অনেক ছোট ছোট খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব বাজারেও পড়েছে। মুরগী ও ডিমের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। অন্যদিকে, তীব্র গরমে মৎস্য খামারে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ডেইরি শিল্পেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গরমে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে গরুর দুধ উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গেছে। অর্থনীতি এবং পুষ্টির অন্যতম উৎস এ খাতগুলো এখন মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার। অথচ এ অবস্থায় তাদের সহায়তা ও পরামর্শ দেয়ার কথা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তা না করে, মন্ত্রণালয় নীরব হয়ে রয়েছে। কোনো ধরনের বিচলন নেই। এমন একটা প্রবণতা প্রতীয়মান হচ্ছে, খাতগুলো ধ্বংস হয়ে গেল কি গেল না, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। সঙ্গতকারণে প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রণালয়ের কাজ কি?

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এ অর্জনে সরকারের ভূমিকা যৎসামান্য। উদ্যোক্তারাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বছরের পর বছর শ্রমে-ঘামে খাতগুলোকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তাদের অর্জনকে সরকার নিজের অর্জন বলে জাহির করে। তা করলে সমস্যা হতো না, যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতরসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ খাতগুলোতে সহায়তা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো সার্বক্ষণিকভাবে বিবেচনায় রাখত। বরং দেখা যায়, উদ্যোক্তারা নানা সমস্যা নিজেরা মোকাবেলা করেই খাতগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ পরিশ্রমের কৃতিত্ব নিচ্ছে সরকার। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘কেউ মরে বিল সেঁচে, কেউ খায় কৈ।’ উল্লেখিত খাতগুলোর অসংখ্য উদ্যোক্তা যে, তাপদাহের মতো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো বিকার নেই। তাদের সুরক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। একটা সময় দুধ, ডিম ও গরু আমদানি করা হতো। দেশ এখন সেই অবস্থায় নেই। মাছ, দুধ, ডিম ও গোশতে দেশ সমৃদ্ধ। আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। এক সময় গরুর সংকটে ভারতের গুরু আমদানি ছাড়া কোরবানি হতো না। এখন আমদানি করতে হয় না। বরং দেশি গরুতে কোরবানি দেয়ার পর উদ্বৃত্ত থেকে যায়। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ই জানিয়েছে, আগামী কোরবানি ঈদে ১ কোটি ৩০ লাখ গরু প্রস্তুত রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ভারতীয় গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, চলমান তীব্র তাপদাহে যে মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প কঠিন সংকটে পড়েছে। আবহাওয়াবিদরা ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হতে পারে। ফলে চলমান তাপদাহের বিপর্যয়ের মধ্যেই খাতগুলো আরেকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সুরক্ষার আগাম পদক্ষেপ যদি না নেয়া হয়, তাহলে খাতগুলোর অস্তিত্ব তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। ৫৩ বছরের অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে। এ প্রেক্ষিতে, মন্ত্রণালয় বা সরকরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এহেন আচরণ থেকে মনে হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইছে, খাতগুলো ধ্বংস হয়ে যাক এবং দেশ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়–ক। আমদানি নির্ভর হলে, তা ভারত থেকে আমদানি করা হবে। ভারতের বাণিজ্য সুবিধা দিতেই যেন এই নিরবতা।

চলমান তীব্র তাপদাহ করোনার বিপর্যয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। করোনার সময় সরকার গার্মেন্টসহ কৃষি খাতে প্রণোদনা দিয়েছে। তাপদাহে যে মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে করোনার সময়কালের মতোই বিপর্যয় চলছে। অথচ তাদের পাশে কোনো কর্তৃপক্ষই দাঁড়াচ্ছে না। তারা যেন ঘুমাচ্ছে। প্রণোদনা দূরে থাক, কিভাবে খাতগুলোকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যায়, তার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা এখন অথৈ সাগরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। বিপর্যয় ঠেকানো এবং কি করতে হবে, কিভাবে তাপদাহ থেকে মাছ, মুরগী, গরু রক্ষা করতে হবে, তার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের এই নিরুপায় অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে করণীয় ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। বলা বাহুল্য, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন বড়বে বৈ কমবে না। বিরূপ আবহাওয়া মোকাবেলা করে কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরির মতো সমৃদ্ধ খাতগুলোর স্বাভাবিক উৎপাদন কিভাবে ধরে রাখা ও বৃদ্ধি করা যায়, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে খাত সংশ্লিষ্ট গবেষকদের নিয়ে মহাপরিকল্পনা করতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সমৃদ্ধ খাতগুলো রক্ষায় উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, পরামর্শ দেয়াসহ যা যা করা প্রয়োজন, তাই করতে হবে।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মঞ্চে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি মাহিরা খান

মঞ্চে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি মাহিরা খান

আ.লীগ সমর্থিত দুই সামাজিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২১

আ.লীগ সমর্থিত দুই সামাজিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২১

শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান

শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান

মেসির সেই ন্যাপকিন পেপারের মূল্য সাড়ে ৯ লাখ ডলার

মেসির সেই ন্যাপকিন পেপারের মূল্য সাড়ে ৯ লাখ ডলার

ডিএ তায়েবের বিরুদ্ধে মামলা করবেন নিপুণ

ডিএ তায়েবের বিরুদ্ধে মামলা করবেন নিপুণ

কালকিনি পৌরসভার সব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবী চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুজ্জামানের

কালকিনি পৌরসভার সব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবী চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুজ্জামানের

প্রহসন, কারচুপি ও দুর্নীতির উপজেলা নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বর্জন করবে-শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রহসন, কারচুপি ও দুর্নীতির উপজেলা নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বর্জন করবে-শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

শিরোপার সামনে দাঁড়িয়ে স্বতর্ক গুয়ার্দিওলা

শিরোপার সামনে দাঁড়িয়ে স্বতর্ক গুয়ার্দিওলা

ইউরো শেষ ইসকোর

ইউরো শেষ ইসকোর

একটি জাল ভোট পড়লেও কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে : নির্বাচন কমিশনার

একটি জাল ভোট পড়লেও কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে : নির্বাচন কমিশনার

শিরোপা খরা কাটাতে ভারতকে অনেক চাপ সামলাতে হবে: মিসবাহ

শিরোপা খরা কাটাতে ভারতকে অনেক চাপ সামলাতে হবে: মিসবাহ

বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করছে ‘রেমাল’, আঘাত হানতে যেসব অঞ্চলে

বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করছে ‘রেমাল’, আঘাত হানতে যেসব অঞ্চলে

কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা শাহনাজ পারভিনের কারাদন্ড

কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা শাহনাজ পারভিনের কারাদন্ড

ভারতে লোকসভা নির্বাচন : বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তিন দিন বন্ধ

ভারতে লোকসভা নির্বাচন : বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তিন দিন বন্ধ

বিহারে পুলিশ হেফাজতে বর-কনের মৃত্যু, থানায় আগুন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর

বিহারে পুলিশ হেফাজতে বর-কনের মৃত্যু, থানায় আগুন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর

কুয়াকাটায় দুর্যোগে পূর্বাভাস-ভিত্তিক আগাম কার্যক্রম বিষয়ক বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত

কুয়াকাটায় দুর্যোগে পূর্বাভাস-ভিত্তিক আগাম কার্যক্রম বিষয়ক বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত

বাকশাল সদস্য হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : ওবায়দুল কাদের

বাকশাল সদস্য হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : ওবায়দুল কাদের

ভূঞাপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহত

ভূঞাপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহত

মির্জাপুরে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় বিএনপির ২০ নেতাকে সতর্ক বার্তা

মির্জাপুরে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় বিএনপির ২০ নেতাকে সতর্ক বার্তা

বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীরা

বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীরা