ইউরোপীয় রাজনীতিতে শরণার্থী প্রসঙ্গ

Daily Inqilab ইলিয়াজ হোসেন রানা

০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম

জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন গঠন করা হয়েছিল ইউরোপকে মাথায় রেখে, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পালিয়ে আসা বিপুল পরিমাণ শরণার্থী এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট শাসিত পূর্ব-ইউরোপ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের কথা ভেবে। পশ্চিমের বাইরে থেকে আসা বিপুলসংখ্যক মানুষ পশ্চিমে আসবে এ বিষয়টি কখনোই তাদের মাথায় ছিল না এবং কনভেনশনও তাদের কথা ভেবে রচিত হয়নি। কারণ, ১৯৫১ সালে বিশ্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলো নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ফলে ইউরোপের বর্তমান অভিবাসন সংকট এবং জাতিসংঘের রিফিউজি কনভেনশনের ব্যর্থতা বর্তমান বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। আগে যেটাকে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্ব হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল, এখন সেটিকে দ্বিতীয় ডিকলোনাইজেশনের মতো দেখাচ্ছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, প্রথম ধাপের ডিকলোনাইজেশন ছিল কলোনাইজারদের ঘরে ফিরে যাওয়া। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় রাউন্ডের ডিকলোনাইজেশনে খোদ কলোনাইডরা কলোনাইজারদের রাজধানী অভিমুখে ছুটছে। অর্ধ-শতাব্দী আগে উপনিবেশিতরা তাদের মুক্তির ভিত্তি হিসেবে ইউরোপিয়ানদের দেওয়া শাসনের উপর জোর দিয়েছিল। এখন তারা মানবাধিকারের দাবির মাধ্যমে নিজেদের ইউরোপে যাওয়ার এবং সেখানে স্বাগত হওয়ার অধিকারকে ন্যায্যতা প্রদানের চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশাল পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সময়ের সাথে ষাটের দশকের মানুষের আবেগ-অনুভূতির মিল রয়েছে। উদ্বিগ্ন নাগরিকদের অধিকাংশই শঙ্কিত এই কারণে যে, বিদেশিরা তাদের দেশ দখল করে ফেলছে, তাদের জীবন ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তারা আরো নিশ্চিত যে, বর্তমান সংকটের পিছনে কসমোপলিটন-মনস্ক এলিট শ্রেণি এবং উপজাতীয়-মনস্ক অভিবাসীদের মধ্যকার যৌথ ষড়যন্ত্রই দায়ী।

অভিবাসন সংকট লিবারেলিজমকে একটি দ্বন্দ্বের ভেতর ফেলে দিয়েছে, যা সরাসরি তার মৌলিক দর্শনে আঘাত হেনেছে। দ্বন্দ্বটি হচ্ছে, আমরা একদিকে বৈশ্বিক নাগরিকত্ব কামনা করছি অন্যদিকে অভিবাসীদের ইউরোপে আশ্রয় দিতে চাইছি না বা তাদেরকে একটি উন্নত সমাজের সম স্তরের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করতে পারছি না। একজন ব্যক্তি সারা জীবনে কতটুকু উপার্জন করবে, সেটা তার অর্জিত শিক্ষা বা পিতামাতার শিক্ষার উপর নির্ভর করে না; বরং নির্ভর করে জন্মস্থানের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে শিশুদের পাঁচ বছর বয়সের আগেই মৃত্যুর আশঙ্কা পাঁচ গুণ বেশি। আর যারা জীবনের শুরুর দিনগুলোয় কোনভাবে টিকে যাবে, তারাও নিরাপদ পানির মতো মৌলিক জীবিকা পাবে না এবং তাদের অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা দশগুণ বেশি। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হবে বেশি। কেউ যদি চায় তার সন্তান অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ থাকুক তাহলে উচিত হবে তার সন্তানের জন্ম যেন জার্মানি, সুইডেন বা ডেনমার্কে হয়, তা নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বড় বড় ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি, সফল ব্যবসা বা কম বাচ্চা নেওয়ার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসীরা বিশাল জনসংখ্যার কোনো বাহিনী নয়। যদিও অ্যালাইন বাদিউর মতে, উগ্রবাদী তাত্ত্বিকরা তাদেরকে বাহিনী হিসেবেই বিবেচনা করে। অভিবাসীরা বরং ‘নিঃসঙ্গ বিপ্লবী’। তারা কোনো ম্যানিফেস্টো লেখেও না, পড়েও না। এই নতুন বিপ্লবের সফল হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আদর্শগত ভিত্তি, রাজনৈতিক আন্দোলন এমনকি নেতৃত্বেরও প্রয়োজন নেই। যেকোনো ইউটোপিয়া বা দুনিয়াবী স্বর্গের চেয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সীমান্ত পার হওয়া অধিক আকর্ষণীয় ব্যাপার। আগে পরিবর্তন বলতে সরকার পরিবর্তন বোঝাতো। আজ অনেকের কাছে পরিবর্তন মানে আপন দেশত্যাগ করে উন্নত দেশে পাড়ি জমানো। ১৯৮১ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রথমবারের মতো বিশ্ব মূল্যবোধ নিয়ে জরিপ পরিচালনার পর এটা জেনে অবাক হয়েছিলেন যে, একটি জাতির সার্বিক সুখ বস্তুগত উন্নতির ওপর নির্ভর করে না। সে সময়ে নাইজেরিয়ানরা তাদের জীবন নিয়ে উন্নত বিশ্বের পশ্চিম-জার্মানদের মতই পরিতৃপ্ত ছিল। অথচ অর্থনীতিক দিক বিচারে জার্মানরা নাইজেরিয়ানদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু নাইজেরিয়ানরা যেহেতু তখন জানতো না জার্মানরা কতটা উন্নত জীবনযাপন করে, তাই তারা আপন জীবনযাত্রার মান নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। অথচ, এখন নাইজেরিয়ার সবার টিভি-সেট আছে। ইন্টারনেটের কারণে তরুণ আফ্রিকান বা আফগানরা মাউসের এক ক্লিকে দেখতে পারছে ইউরোপিয়ানরা কীভাবে বসবাস করে এবং স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল কীভাবে পরিচালিত হয়। বিশ্বায়ন পুরা বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছ, কিন্তু এই গ্রাম যেন এক স্বৈরশাসকের অধীন। আর স্বৈরশাসকটি হচ্ছে বিশ্বের একে অপরের সাথে তুলনা। মানুষ এখন আর আপন প্রতিবেশীর সাথে নিজের জীবনের তুলনা করে না; তারা তুলনা করে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষদের সাথে। সবাই ইলেন মাস্ক বা বিল গেটসের মতো ধনী মানুষের মতো জীবন-যাপনের চিন্তায় বিভোর। তারা এখন মনে করে ব্যাপক বস্তুগত ও অর্থগত উন্নতির মধ্যেই মানসিক শান্তির উৎস নিহিত। বিশ্বায়নের প্রভাবে মানুষ যত অপরের ব্যাপারে জানবে, নিজের অবস্থা নিয়ে ততটাই অসন্তুষ্ট হতে থাকবে।

শরণার্থী সংকটের কারণে সৃষ্ট পূর্ব-পশ্চিম বিভাজনের প্যারাডক্স হচ্ছে, আমরা যে জার্মানদের একসময় শরণার্থীদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হতে দেখেছি, আজ তারা বর্ণবাদী হাঙ্গেরিয়ানদের মতো আচরণ করছে। এখানে জার্মান ও হাঙ্গেরিয়ানদের মনোভাবের মিশ্রণ ঘটেছে। এ ছাড়া, যেহেতু অনেক জার্মান ব্যক্তিগতভাবে বছরখানিক আগে শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছিল, তাই তাদের পক্ষে তাদের দেশে বিদেশিদের অবস্থানের বিরোধিতা করা নৈতিকভাবে সহজতর। কিন্তু মনোভাবের মিল বাড়লেও এতে ইউরোপের ঐক্য বাড়ছে না। আবার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিম-ইউরোপে গিয়ে এশিয়ানরা তো বটেই; এমনকি পূর্ব-ইউরোপিনরাও এখন নিজেদের অনেকটা বিদেশি বিদেশি মনে করে, বহিরাগত মনে হয়। ব্রেক্সিটের পর খোদ যুক্তরাজ্যে পূর্ব-ইউরোপিয়ানদের ওপর আক্রমণ বাড়ছে। মহাদেশজুড়ে অন্য ইউরোপিয়ানদের প্রতিও শত্রুতা বাড়ছে। ভিয়েনার এক রেস্তোরাঁর মালিক বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। তিনি সার্বিয়া থেকে আগত। মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন। অস্ট্রিয়ানরা কেন শরণার্থীদের স্বাগত জানালো, সেজন্য তিনি উন্মুক্তভাবেই তাদের সমালোচনা করতেন। কিন্তু যখন অস্ট্রিয়ানদের মনোভাব বদলে গেল, তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, অনেক স্থানীয় তার রেস্তোরাঁয় আসা বন্ধ করে দিয়েছে এ কারণে যে, তারা তাকে সার্বিয়ান ভাষা বলতে শুনেছে। ইউরোপিয়ান রাজনীতিতে শরণার্থী সংকটের একটি বড় প্রভাব হচ্ছে, এটি নৈতিক মানদ- হারানোর ব্যাপারে ইউরোপিয়ানদের মনে একটি শঙ্কা তৈরি করেছে এবং এই ধারণাটি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের দিকে জার্মান ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশ যুদ্ধ ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের গ্রহণ করার ব্যাপারে নিজেদের উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু এখন তার ঠিক উল্টোটা দেখা যাচ্ছে। সেই একই অভিবাসীদের, যাদের তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল এক বছর আগে, তারা এখন তাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করছে যে, এরা ইউরোপের ওয়েলফেয়ার মডেল ও চিরায়ত সংস্কৃতিকে নষ্ট করে ফেলবে এবং লিবারেল সমাজকে ধ্বংস করে দেবে। ২০১৭ সালে পোলিং ফার্মের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ৮১ শতাংশ ফ্রেন্স, ৬৮ শতাংশ ব্রিটিশ এবং ৬০ শতাংশ জার্মান আশঙ্কা করে যে, তাদের দেশে খুব শীঘ্রই বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঘটবে। ইউরোপিয়ানরা তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যে ভরসা রেখেছিলো এবং যে উন্নত ভবিষ্যতের আশা করেছিলো, তাতে ক্রমাগত আঘাত হানছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সীমান্তে ভিড় জমানো শরণার্থী ও অভিবাসীরা।

অভিবাসী সমস্যা পশ্চিম-ইউরোপকেও বিভক্ত করছে। ২০১৫ সালে জার্মান চ্যান্সেলর আ্যঞ্জেলা মার্কেল দেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেন এবং সে সময় জার্মানি দশ লক্ষ শরণার্থী গ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানরা মার্কেলের উন্মুক্ত সীমান্ত নীতির ওপর আরও ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তদুপরি জার্মানিতে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কাজে অংশ নেয়। অন্যদিকে পূর্ব-ইউরোপের জনসাধারণের অধিকাংশকে শরণার্থীদের দুর্দশা স্পর্শ করতে পারেনি। ব্রাসেলস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে শরণার্থী পুনর্বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিলে সেখানকার নেতারা এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জ্ঞাপন করে। যেহেতু শরণার্থীদের দুর্দশায় তাদের অধিকাংশের যায় আসে না। স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো জানিয়েছেন যে, তার দেশ কেবল খ্রিস্টানদের গ্রহণ করবে। কারণ, সেখানে কোনো মসজিদ নেই, তাই তার দেশে মুসলিমরা টিকতে পারবে না। পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতা, জারোস্লো কাকজিনিস্কি সতর্ক করেন যে, শরণার্থীদের গ্রহণ করা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ, অভিবাসীরা তাদের সাথে প্রাণঘাতী রোগ বহন করে আনতে পারে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবান দাবি করেছেন যে, শরণার্থীদের সাহায্য করা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নৈতিক দায়িত্ব নয়; বরং তারা সাধারণ নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে পারে।

ইউরোপের শরণার্থী সংকটের প্রভাব সম্পর্কে আপন চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করতে গিয়ে এলিজাবেথ কুবলার রসের ‘ক্লাসিক স্টাডি অন ডেথ অ্যান্ড ডায়িং’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক মন্তব্য করেছেন এভাবে: আমরা যখন জানতে পারি, আমাদের দেহে মারাত্মক কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে তখন পাঁচ ধাপে প্রতিক্রিয়া জানাই: এক. অস্বীকার (না, আমার সাথে এটা কোনভাবেই হতে পারে না), দুই. রাগ (আমার সাথে এটা কীভাবে ঘটতে পারলো?), তিন. দরকষাকষি (অন্তত আমার সন্তানের গ্র্যাজুয়েশনটা দেখে বিদায় নিই), চার. ডিপ্রেশন (বাঁচবই না যেহেতু, তাহলে এত ভাবাভাবির কী দরকার?), পাঁচ. মেনে নেওয়া (লড়াই করে লাভ নেই; বরং মরার জন্য প্রস্তুতি নিই।) জিজেকের মতে, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা উদ্বাস্তুদের স্রোতের ব্যাপারে পশ্চিম-ইউরোপের জনমত ও সরকারের প্রতিক্রিয়া অনেকটা এমনই ছিল। তবে ইউরোপ এখনও শরণার্থীদের এ সংকটকে পুরোপুরি মেনে নেয়নি, যেটি প্রতিক্রিয়া জানানোর পঞ্চম বা শেষ ধাপ। সেটি হবে পুরো ইউরোপে শরণার্থী মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। শরণার্থীদের আগমনের প্রবাহের ব্যাপারে বামপন্থিদের বর্তমান সংকটের কারণ তারা এখানে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড প্রদর্শন করছে। ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমা বামপন্থিরাই উৎসাহের সাথে ভারতের গ্রামীণ সম্প্রদায় কর্তৃক তাদের নিজ জীবনযাত্রাকে রক্ষা করার দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। বর্তমানে সাধারণ ডানপন্থি দলগুলোও একই কাজ করে থাকে। বামপন্থিরা প্রগতিশীল ইউরোপিয়ান সমাজের উন্নত চকচকে জীবনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষে কথা বলে। আবার তারাই সেসব শরণার্থীদেরও প্রতিহত করতে চায়, যারা নিজের দেশের মতো করে ইউরোপে বসবাস করতে চায়। নতুন এ বাস্তবতাকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়ে বামপন্থিরা দ্বিধান্বিত। ইউরোপিয়ান মধ্য-বামপন্থি দলগুলোও আপন আত্মপরিচয় সংকটে ভুগছে।

বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক অভিবাসনের কারণে তারা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। মহাদেশজুড়েই গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক দলগুলো পতনোন্মুখ, যেহেতু শ্রমিকদের ভোট সব চলে যাচ্ছে অতি ডানপন্থিদের ঘরে। অস্ট্রিয়ার ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৯০ শতাংশ ব্লু-কলার (নি¤œ আয়ের) শ্রমিকরা কট্টরপন্থি প্রার্থীকে ভোট দেয়। ফ্রান্সের নির্বাচনে শ্রমজীবী মানুষের ৫০ শতাংশ ভোট পায় ন্যাশনাল ফ্রন্ট; সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট গণভোটে যারা বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে, তারা উত্তর-ইংল্যান্ডের শ্রমজীবী সিটধারীরাই। তারা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ভোট দেবে, এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু, তা শরণার্থী সংকটের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। কারণ, এটি জাতীয় সংহতির অনুভূতিকেও শক্তিশালী করে। এতে জাতির উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক দেশই ইউনিয়ন থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এভাবে শরণার্থী-সংকট ইউরোপীয়ান প্রকল্পের রাজনৈতিক গতিশীলতায় একটি টার্নিং পয়েন্টে রূপ নিয়েছে। এটি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যার ফলে ইউরোপীয়ান প্রজেক্ট আর বৈশ্বিক লিবারেলিজমের বিস্তার হিসেবে বিবেচিত হয় না; বরং সংকীর্ণ উগ্র জাতীয়তাবাদ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

লেখক: প্রভাষক, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু