সমুদ্রের তেল-গ্যাসের সম্ভাবনা দ্রুত কাজে লাগাতে হবে
১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম
দেশের মাটি ও সমুদ্রের নিচে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মজুদ থাকার তথ্য দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও আদতে এসব অধরাই থেকে গেছে। এক দশক আগে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনাকে বাংলাদেশের ‘সমুদ্র জয়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার বিশাল সম্পদকে ঘিরে ব্লু-ইকোনমির হাতছানি নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর শোনা গেলেও বাস্তবে তা এখনো কাজে লাগানো যায়নি। সমুদ্র বিজয়ের এক দশক পর দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি নিরাপত্তার এক সন্ধিক্ষণে আবারো সমুদ্র সম্পদ নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠার মতো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশে সমুদ্রোপকূলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট ২৬টি ব্লকের মধ্যে ২৪টিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৭টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে এবং আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ বিডিং রাউন্ড শেষ হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানিয়েছেন। বিডিং প্রক্রিয়া শেষ হলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন প্রক্রিয়া পর্যন্ত আরো ৭-৮ বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন।
এনার্জি ডেটা এনালাইসিস অ্যান্ড জিওফিজিক্যাল কোম্পানি টিজিএস-এর সিনিয়র জিওলজিস্ট এলিজাবেথ গিলবার্ট বঙ্গোপসাগরের জ্বালানি সম্পদ নিয়ে যে জরিপ রিপোর্ট তুলে ধরেন তা রীতিমত আশাব্যঞ্জক। সেমিনারে গিলবার্ট বলেন, প্রায় একই মহীসোপানে অভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারের অগভীর উপকূলে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ উপকূলেও বিপুল তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। আন্তর্জাতিক পরিম-লে মিসিসিপি ফ্যান, নাইল বা নীলনদ অববাহিকা ফ্যানের মতো অভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বাস্তবতায় বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস রিজার্ভের অবস্থানকে বেঙ্গল ফ্যান নামে অভিহিত করেন গিলবার্ট। সিসমিক জরিপে তেল-গ্যাসের বিশাল ভান্ডারের অস্তিত্বের ইন্ডিকেটর সম্পর্কে ব্যাখা তুলে ধরেন বিদেশি কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা। শেভরনের মতো বড় কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন। তবে চলমান বিডিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সম্ভাবনাময় নতুন কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ভারতীয় কোনো কোম্পানিকে দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। নানা কারণে ভারতীয় কোম্পানির প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের অনাস্থা অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে দুইটি ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি কাজ করছে বলে জানা যায়।
দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি নিরাপত্তা এখন এক টালমাটাল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিগত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ ও ভর্তুকি দিয়েও শুধুমাত্র জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে না পারায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। এক দশক আগে দেশের সমুদ্রোপকূলের সম্পদ আহরণের সুযোগ হাতের নাগালে আসলেও নিজস্ব সম্পদ আহরণের বদলে এ খাতে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসলেও নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উন্নয়নে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় আমদানিনির্ভর এ খাত এখন গভীরে সংকটে নিপতিত হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে সরকার জ্বালানি ও গ্যাস আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না। কয়েক বিলিয়ন ডলারের বকেয়ার চাপে দিশাহারা সরকার। মিয়ানমার ও ভারত গ্যাস উত্তোলনে সফল হলেও বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। একটি সম্ভাবনাময় খাতকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানিনির্ভর খাতে পরিণত করার পেছনে আমলাতান্ত্রিক অস্বচ্ছতা ও কায়েমী স্বার্থবাদিতার অভিযোগ অগ্রাহ্য করা যায় না। অনেক দেরিতে হলেও বঙ্গোপসাগরের ব্লকগুলোতে তেল-গ্যাস উত্তোলনের দরপত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। কোম্পানির স্বার্থের কথা বলে দেশের স্বার্থ যেন বিকিয়ে দেয়া না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। দেশীয় কোম্পানি পেট্রোবাংলার বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জ্বালানি অনুসন্ধান ও উন্নয়নে রাষ্টীয় কোম্পানি পেট্রোবাংলার সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জ্বালানি সম্পদের দেশীয় কোম্পানি ও নিজস্ব উৎসগুলোর উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হলে আজকের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হতো না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আজ মৌমাছি দিবস, এর যে সাতটি বৈশিষ্ট্য খুবই চমকপ্রদ
লৌহজংয়ে রাত পোহালে ভোট, ৬১ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৭টা ঝুঁকিপূর্ণ
দোয়ারাবাাজরে বজ্রপাতে নিহত ২
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিরিজে আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত উইন্ডিজ ক্রিকেটাররা
কোপার ব্রাজিল দল থেকে ছিটকে গেলেন এদেরসন
সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ, নোয়াখালীর হাতিয়ায় তীরে ফিরেছেন জেলেরা
চৌদ্দগ্রামে বিদেশ প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে সেমিনার অনুষ্ঠিত
দখল দূষণ ও ফারাক্কার প্রভাবে মরা খালে পরিণত ঝিনাইদহের ১২ নদী
বরগুনায় সাংবাদিকদের নিয়ে এলজিইডির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
আগামীকাল বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
রাইসির এমন মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন মুসলিম বিশ্ব
রাইসির মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে হামাসের বিবৃতি
আধুনিক যুদ্ধেও কেন রাশিয়া দেড়শো বছরের পুরনো মোর্স কোড ব্যবহার করছে?
রাইসির মৃত্যুকে ‘ঐশ্বরিক ন্যায়বিচার’ বললেন ইহুদি পুরোহিতরা
লামায় শেষমুহুর্তে জমে উঠেছে ভোটের লড়াই
ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন আমার প্রিয় একটি ভাই : এরদোগান
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের বেহাল দশা।। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা
নোয়াখালীর হাতিয়াতে ৩০ কেজি হরিণের গোশত জব্দ
জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইরানের মন্ত্রিসভা
রাঙ্গামাটিতে চলছে ইউপিডিএফের সড়ক ও নৌপথ অবরোধ