মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম
অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বছরে পা দিয়েছে। মেয়াদও ছয় মাসের দ্বারপ্রান্তে। এই সময়ে এবং নতুন বছরে সরকার কি করেছে এবং করবে তার বিচার ও প্রত্যাশা নিশ্চয়ই জনগণ করবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তী সরকার, যারা বিপ্লব করে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। তার পালানোর ভিডিও এখনো সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যতদিন এই মাধ্যম থাকবে, ততদিন তা থাকবে। বলা যায়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হাসিনার পালানোর দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হবে। তার নিষ্ঠুর স্বৈরশাসন দেখে শিউরে উঠবে। দেশের সরকার প্রধান নিজের জনগণকে এভাবে হত্যা, নির্যাতন করতে পারে, তা দেখে বিস্মিত হবে। বিস্মিত হবে এই ভেবে, শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে স্টিম রোলার চালিয়েছিলেন। গত জুলাইয়ে হাসিনার এই নিষ্ঠুর শাসনের বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। খালি হাতে তার প্রশিক্ষিত বাহিনীর বন্দুকের সামনে নির্ভয়ে বুক পেতে দাঁড়ায়। শত শত তরুণ, কিশোর, এমনকি শিশুর বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করতে হাসিনাবাহিনী একটুও দ্বিধা করেনি। তারা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের গড়া মানবদেয়ালকে বিদ্ধ করতে পারেনি হাসিনাবাহিনী। গুলিতে একটি ইট খসে পড়লে, আরেকটি এসে খালি জায়গা পূরণ করে দিয়েছিল। গণহত্যার শিকার এবং অন্ধ ও পঙ্গু হয়েও ছাত্র-জনতা হার মানেনি। হার মেনেছেন হাসিনা। ছাত্র-জনতা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা বিশ্বে বিরল। এই বিরল ত্যাগের ফসল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শত শহীদের রক্তে রাঙ্গানো পথে হেঁটেই তাঁরা হাসিনার ধ্বংস করে যাওয়া দেশের হাল ধরেছেন। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হবে, এটাই স্বাভাবিক।
দুই.
অন্তর্বর্তী সরকার এক বিধ্বস্ত পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। হাসিনার সৃষ্ট সীমাহীন সংকট ও সমস্যার বোঝা তাদের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। দায়িত্ব নিতে না নিতেই ভারতের আশ্রয়ে থাকা পলাতক হাসিনা ও মোদি মিলে সরকারকে ফেলে দেয়ার জন্য একের পর এক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করে। হাসিনার তৈরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তার দোসররা নানা ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা চালায়। তবে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সেসব ষড়যন্ত্র নস্যাত করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন কোনো সরকার ছিল না। সে সময় ছাত্র-জনতাই সরকার হয়ে উঠে। তারা অন্তর্বর্তী সরকার না আসা পর্যন্ত দেশকে আগলে রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই সরকার দেশের মানুষের কত মায়া-মমতার, তা বলে বোঝানো যাবে না। সরকারে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া নেতারাও ঠাঁই পেয়েছেন। তিন জন উপদেষ্টা হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়ায়, হাসিনার ধ্বংস করে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার করা। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে খাদে পড়া অর্থনীতিকে টেনে তোলার কাজ শুরু করেন। এতে কিছুটা হলেও ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে জনগণের যে প্রথম চাওয়া, জিনিসপত্রের দাম কমানো, তা কমাতে পারেনি। পাঁচ মাসেও তা হাসিনার শাসনামলের মতোই রয়ে গেছে। কেন কমাতে পারছে না, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। অথচ, তাদের ভালো রাখার দায়িত্ব সরকারের। দেশের মানুষ ভালো থাকলে সরকারও ভালো থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ ভালো নেই। তাদের দুবেলা দুমুঠো খাবার সংস্থান করতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। তারা জীবন সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি। ঘরে-বাইরে একধরনের অনিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ পরিস্থিতি অস্বস্তিকর। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন, তখন সারাবিশ্বে তিনি ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত হয়েছিলেন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল। তাঁকে অকুণ্ঠ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। হাসিনার ধ্বংস করে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো ঋণ ও সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এতে রাষ্ট্রের শূন্য তহবিল পূর্ণ হওয়ার আশা জাগে। এসব আর্থিক প্রতিশ্রুতি, সহায়তা ও ঋণ কতটা এসেছে, কিংবা প্রতিশ্রুতি দেয়া দেশ ও সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে আনার কোনো প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি। এসব অর্থ দেশে আসলে এবং তা কাজে লাগালে অর্থনৈতিক দুর্দশা কিছুটা হলেও কাটত বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। অন্যদিকে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারিরা আস্থা পাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ মেয়াদের নয়। তাকে নির্বাচন দিয়ে চলে যেতে হবে। এই স্বল্প সময়ে তার নীতিতে বিনিয়োগে আস্থার সংকট কাজ করছে। এ কারণে, বিনিয়োগকারিরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অবলম্বন করছে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এ সংকট থাকবে না। এদিকে, অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত রেমিট্যান্সের পালে হওয়া লেগেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ৬ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা হাসিনার পালানোর আগের চেয়ে ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ বেশি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন। হাসিনার পতনের আগে যে রিজার্ভ ১০-১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, তা বেড়ে এখন ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ রিজার্ভ কমার পরিবর্তে ক্রমেই বাড়তে থাকবে বলে গভর্নর জানিয়েছেন। আর্থিক হিসাব থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতি কিছুটা হলেও ভিত্তি পাচ্ছে। তবে এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ ব্যাপক আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। নিত্যপণ্যের মূল আগুন হয়ে আছে। হাত দেয়া যায় না। টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইনে এখন দরিদ্র, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বলে কিছু নেই। তারা একাকার হয়ে পণ্য কেনার যুদ্ধ করছে। এ দৃশ্য সরকারের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।
তিন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর তার ভেঙে দেয়া রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করে মেরামতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এটি জনআকাক্সক্ষাও বটে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই হাসিনার তৈরি জনপ্রশাসন, সংবিধান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, দুদক এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা মেরামতের জন্য ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। দেশের প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞদের প্রধান করে এসব কমিশন গঠন এবং জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়। এছাড়া আরও ৯টির মতো বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসিনার সময় গুমের ঘটনা উদ্ঘাটনে গুম কমিশন, অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশন, বিডিআর হত্যাকা- কমিশন অন্যতম। ইতোমধ্যে গুম কমিশন ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশিন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গুম কমিশনের প্রতিবেদন থেকে হাসিনার সময় গুমের ঘটনার নৃশংসতা প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিশনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা ও তার দোসর দুর্নীতিবাজরা ১৫ বছরে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। যেসব সংস্কার কমিশনকে জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা তারা অচিরেই জমা দেবে। এর মাধ্যমে কি ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব করা হবে, তা জানা যাবে। তবে সংস্কার করা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বৃহৎ দল বিএনপি সংস্কার করতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যাতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় না থাকে এ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে। বলেছে, অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘকাল থাকা উচিৎ নয়। পাশাপাশি এ কথাও বলেছে, সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক সময় পর্যন্ত তারা সরকারকে সময় দিতে রাজী। নির্বাচন কবে হবে, এ নিয়েও মতপার্থক্য এবং ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। গত ১৬ ডিসেম্বর সকালে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২৫ সালের শেষে অথবা ২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন হবে। তার দুইদিন পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন হবে ২৬ সালের জুনের মধ্যে। এ নিয়ে বিএনপি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা কোনটি বিশ্বাস করব? প্রধান উপদেষ্টার কথা, নাকি প্রেস সচিবের কথা? সরকারের তরফ থেকে এর স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন করার জোর দাবি জানিয়েছে। বিএনপি বলেছে, প্রয়োজনীয় যে সংস্কার করা দরকার তা দ্রুত করে নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে। বিএনপি দুই বছর আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার করছে, তা এই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। বিএনপির এ বক্তব্যের সূত্র ধরে সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেছেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ কেউ বলেছেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। তবে এই সংস্কার করতে কতদিন লাগবে, তার সময়সীমা তারা উল্লেখ করেননি। ফলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে কোনো কোনো উপদেষ্টা নিয়োগ এবং তাদের অতিকথন ও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হওয়া নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। তাদের কাজের শ্লথ গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ সরকার বিপ্লবী সরকার হয়নি বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব সমালোচনার কোনো জবাব বা প্রতিক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকার ব্যক্ত করেনি। সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে, সে এখন পর্যন্ত হাসিনার গড়া জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীতে থাকা তার দোসর আমলা ও কর্মকর্তাদের সরানো হয়নি। তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, হাসিনার গড়া রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে কয়েক স্তরে থাকা লোকজন রাতারাতি সরানো সহজ কাজ নয়। এজন্য সরকারের সময় প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে হাসিনার অনুসারি আমলা-কর্মকর্তাদের অপসারণ করেছে। আরও যারা রয়েছেন, তাদেরও সরানোর প্রক্রিয়া চলমান। এর মধ্যে হাসিনার অনুসারী অনেকে রং বদলে বিএনপি-জামায়াত অনুসারী হয়ে গেছে। তার উপর সাড়ে ১৫ বছরে বঞ্চিত কর্মকর্তারাও পদায়নের তোড়জোড় করছেন। ফলে সরকারকে এ কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্যেই হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সামাল দিতে হচ্ছে। ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার ও কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার অজুহাতে ভারত ও তার মিডিয়া এন্তার মিথ্যা সংবাদ ও অপপ্রচার চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। ভারত কূটনৈতিক নর্মস উপেক্ষা করে অনেকটা সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লেগেছে। সরকার অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে ভারতের অপপ্রচার ও বক্তব্যের জবাব দিয়েছে। ভারতের সাথে হাসিনার নমনম ও দাসত্বমূলক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে সমস্বার্থভিত্তিক অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে। এছাড়া, সকল দেশের সাথে সমমর্যাদা এবং সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, দেশের এই কূটনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, গণহত্যার অভিযোগে হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা। হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ইতোমধ্যে ভারতকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, এ বছরের মধ্যে গণহত্যাকারীদের বিচার করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে। তিনি বলেছেন, চারটি গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার করা হবে। এগুলো হচ্ছে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গণহত্যা, বিডিআর গণহত্যা, শাপলা চত্ত্বর গণহত্যা এবং ১৫ বছরের রাজনৈতিক হত্যাকা-। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই কথা বলেছেন। এসব গণহত্যার বিচার জনগণের একান্ত দাবি, যা সরকার উপেক্ষা করতে পারে না।
চার.
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি অবিরাম চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছে। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির পাঁয়তারাও হয়েছে। শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের দাবিও তোলা হয়েছে। একে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে বিএনপি শক্ত অবস্থান নেয়ায় প্রেসিডেন্টকে অপসারণের বিষয়টি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চক্রান্তকারিরা দেশে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করে সামরিক হস্তক্ষেপের পথ সুগম করার ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তা সফল হলে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির লাভ হতো। অন্তর্বর্তী সরকার তা রুখে দিয়ে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। এখনো হাসিনা-মোদি যৌথভাবে নানা অস্বাভাবিক ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক মহলকে সচেতন থাকা আবশ্যক। এটা মনে রাখতে হবে, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যেমন ব্যর্থ হয়ে যাবে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। কাজেই, সকল রাজনৈতিক দলকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে হবে। তাকে রাষ্ট্র সংস্কারের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এগিয়ে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; দির্দিষ্ট করে দেয়া টাইম লাইনের মধ্যে তা সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে জরুরি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে সম্ভব হলে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে সংস্কার এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটোই সমান্তরালভাবে করতে হবে। এসব করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। তাদের জীবনে স্বস্তি আনার জন্য নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট
টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির
রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান
রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল