শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৬ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫১ এএম

সারাদেশে শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে দরিদ্র, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ ও নিম্ন বিত্ত শ্রেণী। প্রচণ্ড শীতে তাদের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। কাজ করতে না পারায় খাদ্য সংকটে পড়েছে। শীত বস্ত্র ও খাদ্যের অভাবে তাদের জীবন চালানো দায় হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। অভাব-অনটনের সংসারে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে এই শীত প্রলম্বিত হবে। পাশাপাশি এ মাসে দুই-তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। শীতের তীব্রতা কতটা তা রাজধানীতে দুপুরের তাপমাত্রা দেখলেই বোঝা যায়। এ সময় গড়ে ১৯-২০ ডিগ্রি থাকে। গতকাল তা ১৬ ডিগ্রিতে নেমে এসেছিল। উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা কত, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। চুয়াডাঙ্গায় গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র শীত থাকতে পারে। এ মাসে দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুয়েকটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি) থেকে তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি) তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শীতের এই প্রকোপে নিম্ন আয়ের মানুষ যে আরো দুর্ভোগে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।

শীতকালে শীত পড়া স্বাভাবিক বিষয়। এ সময়ে প্রচণ্ড শীত বা শৈত্যপ্রবাহ কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে কখনো কখনো স্বাভাবিক শীতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এবার ডিসেম্বর জুড়ে তেমন কোনো শীত অনুভূত হয়নি। বছরের প্রথম দিন থেকেই স্বাভাবিক শীত অনুভূত হয়ে এখন তা তীব্র হয়েছে। এ সময় সাধারণ মানুষের কষ্টের মধ্যে পড়ে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে তারা, যাদের ঘর থেকে বের হয়ে কাজে না গেলে চুলা জ্বলে না। তারা খড়কুটা জ্বালিয়ে পেটে ক্ষুধা নিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতে তারা সহজে কাবু হয়ে পড়ে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেক সময় অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ মৃত্যুর দায় শীতের, নাকি শীত থেকে শীতার্তদের রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ না থাকা? প্রত্যেক শীতেই দেখা যায়, সরকারি উদ্যোগ খুবই অপ্রতুল থাকে। আবার উদ্যোগ নিলেও তা শীত চলে যাওয়ার পর নেয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। সময়মতো সরকারের জরুরি উদ্যোগ থাকে না। অনেক সময় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুধুমাত্র ফটোসেশনের জন্য শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ করতে দেখা যায়। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, এটা তার এক অপসংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও যেন এ অপসংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। সরকারের দুয়েকজন উপদেষ্টার হেলিকপ্টার বিলাস জনমনে ক্ষুব্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের বক্তৃতাবাজী করে ফটোসেশন করতে দেখা গেছে। শীতার্তদের সহায়তায় সরকারের ভূমিকা বেশি থাকলেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে শীতে কাবু হয়ে পড়া শ্রমজীবী মানুষকে না খেয়ে অসহায় হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এমনিতেই দেশে বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। কর্মসংস্থান নেই। মানুষের আয় কমে গেছে। নিত্যপণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারা দিশাহারা। শীতে কাজের তেমন সুযোগ না থাকায় আয় বলতে কিছু নেই। নিদারুণ কষ্টে আছে। তাদের দেখার যেন কেউ নেই। তারা কোথায় যাবে? কীভাবে বাঁচবে? এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিচলন, চিন্তা ও উদ্যোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না। শীতার্তদের দেখার জন্য হেলিকপ্টারে লটবহর নিয়ে উপদেষ্টাদের কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। লোক দেখানো কোনো কাজ করা, ক্যামেরার সামনে পোজ দেয়া তাদের কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে, শীতার্তদের যা প্রয়েঅজন, তা পূরণ করা।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। এ অবস্থায় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। শীত সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে আপতিত হয়েছে। টানের মধ্যে আরও টান সৃষ্টি করছে। এই শীত থেকে রক্ষায় সরকারের যে ধরনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তার কোনো আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গণঅভ্যুত্থানে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার এ সরকার গতানুগতিক সরকারের মতোই চলছে। আমরা দেখেছি, গত বছর আগস্টের অকাল বন্যায় সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এবারের তীব্র শীতে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে অতি দ্রুত ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে হবে। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র, খাদ্য, ওষুধ বিতরণের ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। প্রত্যেক জেলার ডিসিসহ দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামর্থ্যবান ব্যক্তিদেরও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
ছাত্র সংসদ এখন সময়ের দাবি
আরও

আরও পড়ুন

মেটলাইফ বাংলাদেশের “সেরা এজেন্সি ২০২৪” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নোয়াখালী জেলার “সুমন এজেন্সি”

মেটলাইফ বাংলাদেশের “সেরা এজেন্সি ২০২৪” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নোয়াখালী জেলার “সুমন এজেন্সি”

রাজধানীতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যমেলা শুরু বুধবার

রাজধানীতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যমেলা শুরু বুধবার

আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন গণমাধ্যমকর্মীরা: প্রেস সচিব

আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন গণমাধ্যমকর্মীরা: প্রেস সচিব

মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন-২০২৫ সম্পন্ন

মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন-২০২৫ সম্পন্ন

আওয়ামী লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে অতীষ্ট প্রবাসীরা; কূটনীতিক মহসিনকে অপসারণ ও শাস্তির দাবি

আওয়ামী লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে অতীষ্ট প্রবাসীরা; কূটনীতিক মহসিনকে অপসারণ ও শাস্তির দাবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা

প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

যাকাতের টাকা থেকে কি দরিদ্র ছাত্রদের লেখা-পড়া করার জন্য সহায়তা প্রসঙ্গে।

যাকাতের টাকা থেকে কি দরিদ্র ছাত্রদের লেখা-পড়া করার জন্য সহায়তা প্রসঙ্গে।

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

ড্রাম ট্রাকের সামনের চাকা ফেটে গিয়ে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২

ড্রাম ট্রাকের সামনের চাকা ফেটে গিয়ে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২