জরুরি ভিত্তিতে রেল চালু করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম

ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী ড্রাইভার ও শ্রমিক কর্মচারিদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ট্রেন চলাচাল বন্ধ ও কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। গতকাল গভার রাতে রেল মন্ত্রণালয়ের সাথে সমিতির বৈঠক হয়। বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রেল মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রেল মন্ত্রণালয় তাদের দাবি পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, সমিতির নেত্রীবৃন্দ তাদের দাবির ব্যাপারে অনড় ছিল এবং তারা বৈঠক থেকে চলে যায়। সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের দাবি মানা হবে না। তাই আমরা বের হয়ে গিয়েছি। বৈঠকে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় শ্রমিক-কর্মকর্তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল চলাচল বন্ধ কর্মসূচিতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হওয়ায় দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আমদানি-রফতানি ও উৎপাদন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। রেল বন্ধ থাকা অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলবে। এর দায় রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের উপরই বর্তায়। তারা সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

রেল শ্রমিকদের দাবিগুলো নতুন নয়। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় থেকেই তাদের এই দাবি চলে আসছে। দাবিগুলো যৌক্তি থাকা সত্ত্বেও সে সময় তাদের বারবার আশ্বাস দিয়েও দাবি পূরণ করা হয়নি। একদিকে লোকবল কম, অন্যদিকে দুজনের কাজ একজনকে করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই যে দুইজনের কাজ করবে, তাকে সেই পরিমাণ সুবিধা দিতে হবে। তারা বারবার দাবি জনিয়ে সেই সুবিধা পায়নি। ফলে তাদেরকে এই কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হয়েছে। রেল শ্রমিক সমিতির তথ্য মতে, রেলে তাদের ২ হাজার ৩৬ জন রানিং স্টাফ থাকার কথা। সেখানে বর্তমানে রয়েছে ১ হাজার ৩৬ জন। রেলকে সচল রাখতে একজনকে দুইজনের চাকরি করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের পারিশ্রমিক ও সুবিধা দিতে হবে। গত ১ থেকে ৯ ডিসেম্বর তারা আইনগতভাবে একজনের কাজ একজন করাতে ট্রেনের সব সিডিউল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতি উত্তরণে তারা পুনরায় দুইজনের কাজ একজনে করা শুরু করে। প্রশ্ন হচ্ছে, রেলের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় লোকবল কম থাকবে কেন? এ খাতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তার উন্নয়ন ঘটছে না কেন? বিগত স্বৈরাচারি সরকারের ১৫ বছরে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হলেও রেলের উন্নয়ন হয়নি। এ খাতে অর্থ লুটপাটের বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। রেলে প্রয়াত মন্ত্রী সুরঞ্জি সেন গুপ্তর রেলে ‘কালো বিড়াল’ দুর্নীতির কথা দেশের মানুষ জেনেছে। যেসব মন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গতকালও একটি জাতীয় দৈনিকে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও নুরুল ইসলাম সুজনের অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলওয়ে ‘লাইনচ্যুত’ হয়েছে ভুল পরিকল্পনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপব্যয়ের কারণে। বলা বাহুল্য, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক বাহন হিসেবে সারাবিশ্বে এখন রেলপথকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের রেলের বিপুল সম্পদ ও বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নের তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। উন্নয়নের চেয়ে দুর্নীতি ও অপচয়ের খবরই বেশি শোনা গেছে। আশা করা হয়েছিল, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর এ খাতে সংস্কার কার্যক্রম জোরোসোরে শুরু হবে। হতাশার বিষয় হচ্ছে, রেল উন্নয়নে কাজ হচ্ছে, তার কোনো আলামতই পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল নীতি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্নীতির কারণে রেলের আজকের অবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে, সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে, তা সমাধানে কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর কতটা উন্নয়ন হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার জনগণের রয়েছে এবং উপদেষ্টা, সচিবসহ প্রত্যেক কর্মকর্তাকে তাদের কাজের ফিরিস্তি উপস্থাপন করতে হবে। বিগত সরকারের মতো উদ্যোগ নিয়েছি, নিচ্ছি বললে হবে না। কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, তা জনগণকে জানাতে হবে।

রেল কর্মচারিরা যে কর্মসূচি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের রেল চালনা বন্ধ করেছে, তা বন্ধের আগেই যেকোনো উপায়ে রেল সচল রাখার জন্য উপদেষ্টার উদ্যোগ নেয়া উচিৎ ছিল। তাদের এ দাবিগুলো পুরনো এবং তা পূরণে বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেয়া হলো না কেন? তাদেরকে কেন কনভিন্স করা গেল না? উপদেষ্টার তো উচিৎ ছিল, দায়িত্ব নিয়েই রেলের প্রধান সমস্যাগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্পতম সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। তিনি ও তার সচিব কি সেই উদ্যোগ নিয়েছেন? যদি নিতেন, তাহলে কি রেল বন্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো? তাদের বেতন-ভাতা তো বন্ধ নেই। তাহলে রেল বন্ধ হলো কেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সড়ক-মহাসড়কও বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এখন রেলে অচলাবস্থা চলছে। মানুষের দুর্ভোগের সীমা অতিক্রম করেছে। নানামুখী সংকটে তারা পর্যুদস্ত। তাদের দুর্ভোগ-দুর্গতির অন্ত নেই। সাধারণ মানুষ এখন এ আশঙ্কায় রয়েছে, আসন্ন রোজায় নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং বিদ্যুৎ সংকট কোন অবস্থায় থাকে। তারপরও তারা ধৈর্য্য ধরে আছে। সরকারের প্রতি আস্থা হারায়নি। সরকারকে এ আস্থা ধরে রাখতে মানুষের জীবনকে স্বস্তিদায়ক করতে হবে। জনসমস্যা নিরসনে উপদেষ্টাদের অধিক কর্মতৎপর হয়ে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রম্য রচনার দিকপাল সৈয়দ মুজতবা আলী
জেনারেল (অব.) ভূঁইয়ার ২০টি জ্বলন্ত প্রশ্নের উত্তর দেশবাসীর জানা দরকার
তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি
জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসী সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরসহ ২১জন নেতাকর্মীদের আটক

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরসহ ২১জন নেতাকর্মীদের আটক

কক্সবাজারে অপারেশন ডেভিল হান্ট' অভিযান অব্যাহত, গ্রেপ্তার ২৭

কক্সবাজারে অপারেশন ডেভিল হান্ট' অভিযান অব্যাহত, গ্রেপ্তার ২৭

হাজীদের শত কোটি টাকা অতিরিক্ত বিমান ভাড়া আদায়: হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদ

হাজীদের শত কোটি টাকা অতিরিক্ত বিমান ভাড়া আদায়: হাব ঐক্য কল্যাণ পরিষদ

সিঙ্গাপুর থেকে ২৬৫ কোটি টাকায় কেনা হবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি

সিঙ্গাপুর থেকে ২৬৫ কোটি টাকায় কেনা হবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে গাজীপুরে যুবদলের আনন্দ মিছিল

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে গাজীপুরে যুবদলের আনন্দ মিছিল

শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

পটুয়াখালীতে হামলায় পিপি, জেলা জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

পটুয়াখালীতে হামলায় পিপি, জেলা জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

রামগতিতে আগুনে পুড়ল ২৪ দোকান

রামগতিতে আগুনে পুড়ল ২৪ দোকান

বিনামূল্যে ক্যানসারের ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা

বিনামূল্যে ক্যানসারের ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা

সীমান্তে আইইডি বিস্ফোরণে ২ ভারতীয় সেনা নিহত

সীমান্তে আইইডি বিস্ফোরণে ২ ভারতীয় সেনা নিহত

সিংগাইরে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতিসহ আটক ৪

সিংগাইরে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতিসহ আটক ৪

সাভারে কুটি মোল্লাসহ ১৩ আসামী গ্রেপ্তার

সাভারে কুটি মোল্লাসহ ১৩ আসামী গ্রেপ্তার

স্বামীকে জুতা মারলেন অঙ্কিতা

স্বামীকে জুতা মারলেন অঙ্কিতা

আ’লীগ নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিস্কার

আ’লীগ নেতাকে ছাড়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিস্কার

গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে এর সাথে সিলেট চ্যাপ্টারের মতবিনিময়

গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে এর সাথে সিলেট চ্যাপ্টারের মতবিনিময়

ময়মনসিংহ জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের বিজয়ীদের শপথ

ময়মনসিংহ জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের বিজয়ীদের শপথ

সৈয়দপুরে নাশকতা মামলায় আ'লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জুন গ্রেফতার

সৈয়দপুরে নাশকতা মামলায় আ'লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জুন গ্রেফতার

বিশ্বনাথ থানা ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ-ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলা-ক্ষতি কোটি টাকা

বিশ্বনাথ থানা ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ-ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলা-ক্ষতি কোটি টাকা

‘ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়’

‘ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বুক কর্নার

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বুক কর্নার