আবাসন খাত উন্নয়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ এএম

প্রায় দেড় দশক ধরে দেশের আবাসনখাতে মন্দা বিরাজ করছে। এ সময়ে গার্মেন্ট, জনশক্তি রফতানিসহ বাণিজ্য ও রেমিটেন্স সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধির উঠানামা ঘটলেও আবাসন খাতের স্থবিরতা কাটাতে কার্যত কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। স্বৈরাচারী শাসকের পতনের পর সেসব খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিলেও সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগ না থাকায় আবাসন খাতের স্থবিরতা যেন আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। দেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে উচ্চ নিবন্ধন ফি, নির্মাণ সামগ্রীর নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ মূল্য এবং ড্যাপ বা নগর পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা আবাসন খাতের স্থবিরতাকে প্রকট ও দীর্ঘস্থায়ী করেছে। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বিগত সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গার্মেন্ট রফতানির মতো খাতগুলোতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা করার উপায় হিসেবে প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের সুযোগ দিয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় এ খাতের বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তদোপরি বর্তমান সরকারের নতুন কর আরোপসহ কিছু সিদ্ধান্তও আবাসন খাতে স্থবিরতা বাড়িয়ে তুলছে বলে তাদের ধারণা। অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে সাথে আবাসন খাতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ না থাকায় স্থবিরতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মনে রাখা দরকার, আমাদের আবাসন খাত পুরোপুরি আভ্যন্তরীণ সম্পদ ও বিনিয়োগ নির্ভর। এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষত শহুরে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবাসন সমস্যা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস হিসেবে আবাসন খাতের সংকট ও স্থবিরতা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। দেশ থেকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনা, পাচারকারীদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের শ্রমঘন আভ্যন্তরীণ খাতগুলোর উপর অধিক মনোযোগ দিয়ে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার উদ্যোগ ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অন্যতম কাক্সিক্ষত বিষয়। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালার বদলে নতুন করারোপ, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বাস্তবতা আবাসনখাতের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে গতি সঞ্চারের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান একজন যথেষ্ট প্রাজ্ঞ আইনজ্ঞ হলেও আবাসন খাতের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণে তাঁর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। বিগত সময়ে দখলবাজ-দুর্নীতিবাজদের চাপে বহুল প্রত্যাশিত ড্যাপ চূড়ান্তকরণ সম্ভব না হলেও অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা নিয়ে তা সুরাহা করতে পারতো। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, আবাসন খাতের সমস্যা পুরনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। রিহ্যাবের সদস্যরা এ খাতে বিপুল অংকের বিনিয়োগ করে এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। করোনাকালে সারাবিশ্বে যখন বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তখন চীন সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগে মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে ইন্টার্নাল ইনভেস্টমেন্ট পলিসি গ্রহণ করে আশাব্যঞ্জক সুফল পেয়েছিল। সে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমরাও আবাসন খাতের সমস্যা দূর করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারি।

আবাসন বা বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমাদের রাষ্ট্র সব নাগরিকের আবাসনের চাহিদা নিশ্চিত করতে না পারলেও এ খাতের উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ খাতসহ এ খাতে অর্ধকোটির বেশি মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ আবাসন খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের উপর নির্ভরশীল। নগর পরিকল্পনা, পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলা এবং কোটি মানুষের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ খাতের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হতে পারে। শুধুমাত্র নীতি সহায়তা এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে বা সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটিয়ে রাজধানীতেই লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হতে পারে। সেই সাথে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবাসনের স্বপ্ন পূরণ অনেকটা সহজ হতে পারে। জমির উচ্চমূল্য, উচ্চহারে করের বোঝা, রড-সিমেন্ট, ইট-পাথরের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জমি-ফø্যাট রেজিস্ট্রেশনে নানাবিধ জটিলতা শহুরে মধ্যবিত্তের নিজস্ব আবাসনের স্বপ্ন ক্রমেই দুরূহ হয়ে পড়েছে। স্বাধীন ও ক্রমাগ্রসরমান অর্থনীতির মধ্য আয়ের দেশে আবাসান খাতে এ ধরনের বাস্তবতা অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার পাশাপাশি আবাসন খাতের বিনিয়োগ ও প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করতে নীতি সহায়তাসহ সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাতারাতি সব সমস্যা, দুর্নীতি-দুবৃর্ত্তায়ন দূর করা সম্ভব নয়। পরিবর্তিত বাস্তবতার নিরীখে ড্যাপ অনুমোদনসহ আবাসন খাতে বিগত সরকারের দেয়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ খাতের আইনগত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বালাকোট যুদ্ধ : মুসলিম নবচেতনার মাইলফলক
বেগম জিয়ার বীরোচিত প্রত্যাবর্তন : মাইনাস টু নিয়ে ভারতীয় প্রোপাগান্ডার বেলুন ফুটো
অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক সংকট বাড়ছে
আওয়ামী লীগ ঘাতক ও সন্ত্রাসী দল
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা : সম্ভাবনার পথ অন্বেষণ করতে হবে
আরও
X
  

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

ফরিদপুরে পদ্মার বিশ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে: আসিফ নজরুল

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

ঈদুল আজহায় যে শর্তে ১০ দিনের ছুটি, জানালেন প্রেসসচিব

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানালেন খালেদা জিয়া

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা একাডেমিক শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

সাকিব-তামিমকে চেনেন নেইমার!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভুট্টা চাষে চাষীদের সাফল্য ১৪০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদন

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

একইদিনে চারদেশে হামলা ইহুদীদের

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানের সম্পদ জব্দের নির্দেশ, ৬ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত,  ১জন আহত

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত, ১জন আহত

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী