বিস্কুটের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি কেন?

Daily Inqilab আব্দুর রহমান

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৭ এএম

বিস্কুট লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির প্রিয় খাবার, তাদের পুষ্টির অত্যাবশ্যক উৎস। এখন এটির উপর অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে, ফলে এর উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল লোকদের জন্য তা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এ বিস্কুটসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীর উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা এ শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এই কর বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র এবং দুর্বল সম্প্রদায়গুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিস্কুট স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয়। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলগামী শিশুদের, সুবিধাবঞ্চিত যুবক এবং নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোর জন্য এটি পুষ্টিকর খাবার। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে প্রস্তুতকারকরা আর কম দামে বিস্কুট উৎপাদন করতে পারবেন না, ফলে অনেকের ভরণপোষণের অপরিহার্য উৎস বন্ধ হয়ে যাবে।

পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তার উপর প্রভাব
শিশু এবং ছাত্রদের জন্য, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং নি¤œ আয়ের শহুরে অঞ্চলে, বিস্কুট জলখাবারের চেয়ে বেশি। এগুলি তাদের শক্তি এবং পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে শক্তিমান থাকার জন্য টিফিন হিসেবে বিস্কুটের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের উপর নির্ভর করে। এই পণ্যগুলিকে দুর্গম করে, কর বৃদ্ধি শিশুপুষ্টির উন্নতি এবং অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করার জাতীয় প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে। এটি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, বিশেষ করে, সেই পরিবারগুলির মধ্যে, যারা ইতোমধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে লড়াই করছে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি
বিস্কুট এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অন্যতম ইঞ্জিন। এই শিল্পগুলি হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য কাজ দেয়, যাদের মধ্যে অনেকেই নি¤œ-আয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডের। বর্ধিত ভ্যাট উৎপাদন খরচ বাড়াবে, চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং অনেক প্রস্তুতকারককে কাজ কমাতে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বাধ্য করবে। ফলাফল? ব্যাপক চাকরি হারানো এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। কম চাকরি এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের সাথে মানুষের সামাজিক কাঠামো গুরুতর চাপের সম্মুখীন হবে, সম্ভাব্য অশান্তি এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে।

রফতানি এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য একটি আঘাত
বিস্কুট শিল্প কেবল দেশীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ১৪৫টিরও বেশি দেশে রফতানি হয় এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। করের বর্ধিত বোঝা বিশ্বব্যাপী বাজারে এই শিল্পের প্রতিযোগিতা হ্রাস করতে পারে, ফলে রফতানি হ্রাস এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি হতে পারে। এই সিদ্ধান্তটি কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সমর্থন করার উচ্চাকাক্সক্ষারও বিরোধিতা করে। বর্তমান কর বৃদ্ধি বাংলাদেশের রফতানি ঝুঁকির বৃদ্ধিকে সমর্থন করার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে এবং জিডিপি বৃদ্ধি এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার শিল্পের সম্ভাবনাকে ক্ষুণœ করে।

পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন
এই কর নীতির পরিণতি শিল্পের বাইরেও প্রসারিত, যা পুষ্টি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের সামগ্রিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে। সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং প্রত্যাহার করতে হবে। বিস্কুটের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য আইটেমের উপর ট্যাক্স রেয়াত, যেমনটি অনেক দেশে প্রচলিত, শিল্প এবং এটি যে লোকেদের পরিবেশন করে উভয়কেই সমর্থন করার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশ এমন নীতি বহন করতে পারে না, যা বৈষম্যকে আরও গভীর করে তোলে এবং তার সবচেয়ে দুর্বল নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রভাবিত করে। সরকারকে অবশ্যই স্বল্পমেয়াদী রাজস্ব লাভের তুলনায় জনগণের প্রয়োজনগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে বিস্কুটের মতো প্রয়োজনীয় আইটেম সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের এবং অ্যাক্সেসযোগ্য থাকে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বালাকোট যুদ্ধ : মুসলিম নবচেতনার মাইলফলক
বেগম জিয়ার বীরোচিত প্রত্যাবর্তন : মাইনাস টু নিয়ে ভারতীয় প্রোপাগান্ডার বেলুন ফুটো
অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক সংকট বাড়ছে
আওয়ামী লীগ ঘাতক ও সন্ত্রাসী দল
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা : সম্ভাবনার পথ অন্বেষণ করতে হবে
আরও
X
  

আরও পড়ুন

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল ৩৭% পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

লক্ষ্মীপুর শহরে ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩কোটি টাকার মেশিনারি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

খালেদা জিয়া কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোস করেননি: কাদের গনি

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত,  ১জন আহত

পাকুন্দিয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ২ ছাত্রী নিহত, ১জন আহত

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল নাটোর পৌরবাসি

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

গোয়ালন্দে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

চান্দিনায় ন্যায্যমূল্যের  পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে   কে এম জামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট হলেন ড. শাহজাহান আলী

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের বিদায়

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের বিদায়

ভূঞাপুরে মাদক ৩ কারবারির কারাদন্ড

ভূঞাপুরে মাদক ৩ কারবারির কারাদন্ড

আমাদের প্রয়োজন অংশীদার, উপদেশদাতা নয় : জয়শঙ্কর

আমাদের প্রয়োজন অংশীদার, উপদেশদাতা নয় : জয়শঙ্কর

নারায়ণগঞ্জে হকার হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

নারায়ণগঞ্জে হকার হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

পবিপ্রবি'র পোস্ট গ্রাজুয়েট ¯ট্যাডিজ এর ৭০ তম সভা অনুষ্ঠিত

পবিপ্রবি'র পোস্ট গ্রাজুয়েট ¯ট্যাডিজ এর ৭০ তম সভা অনুষ্ঠিত

হাঁস নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মীরসরাইয়ে বৃদ্ধকে গলাটিপে হত্যা

হাঁস নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মীরসরাইয়ে বৃদ্ধকে গলাটিপে হত্যা

ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ সুপারিশ

ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ সুপারিশ

পাকিস্তানের পক্ষে ৫৭ মুসলিম দেশ, চিন্তায় ঘুম নেই ভারতের

পাকিস্তানের পক্ষে ৫৭ মুসলিম দেশ, চিন্তায় ঘুম নেই ভারতের

এবার হত্যার হুমকি পেলেন শামি

এবার হত্যার হুমকি পেলেন শামি

ছেলে-মেয়েদের খুশির জন্য এসেছি,এটাই হয়তো শেষ!

ছেলে-মেয়েদের খুশির জন্য এসেছি,এটাই হয়তো শেষ!

আমিরকে নিয়ে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরের উইন্ডিজ দল

আমিরকে নিয়ে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরের উইন্ডিজ দল