সিডি জোনের বিরুদ্ধে মালিকানা জালিয়াতির অভিযোগ তুললেন সোহাগ
১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৫ পিএম | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৫ পিএম

সংগীত ক্যারিয়ারে দীর্ঘ সময় (দুই যুগ) অতিবাহিত করেছেন সংগীতশিল্পী শরিফুজ্জামান সোহাগ। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে একক, মিক্সডসহ এই কণ্ঠশিল্পীর অ্যালবামের সংখ্যা ৫৮ টি, গানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০–এর বেশি। পাশাপাশি ঝুলিতে আছে ‘ও কন্যা’, ‘কাইন্দো না’, ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘পরান বন্ধুয়া’, ‘লাল শাড়ি’র মতো সুপার ডুপার হিট গান। খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছালেও সোহাগের মনে রয়েছে তীব্র আক্ষেপ। কেননা এখন পর্যন্ত কোনো গানের মেধাস্বত্ব থেকে এক পয়সাও পাননি বলে অভিযোগ সোহাগের।
মূলত শূন্য দশক—বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির সোনালী সময়। এ দশকের শুরুতে অনেক নতুন গায়কের উত্থান হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। মিক্সড অ্যালবামে জনপ্রিয় গায়কদের সঙ্গে সুযোগ পেতে থাকেন নতুন শিল্পীরা। ২০০২ সালে নতুন মুখ হিসেবে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু সোহাগের। সেবার জনপ্রিয় চারটি মিক্সড অ্যালবামে সুযোগ পান তিনি। প্রতিটি অ্যালবাম পায় জনপ্রিয়তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সফলতা। সোহাগ পৌঁছে যান শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ‘ফাটাফাটি প্রেম’ মিক্সড অ্যালবামে পান্থ কানাই ও বিপ্লবের সঙ্গে অভিষেক হয় সোহাগের। এরপর প্রকাশ পায় মিক্সড অ্যালবাম ‘পানি’, যেখানে বিপ্লব ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে গান করেন সোহাগ। এছাড়া তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘নদী’তে সোহাগ গান করেন পথিক নবী ও মাস্টার সোহেলের সঙ্গে। প্রথম তিন অ্যালবামে বিপ্লব, পান্থ কানাই আর পথিক নবীদের আড়ালে থেকে গেলেও সোহাগ তাঁর সাফল্যের গল্পটা লেখেন চতুর্থ অ্যালবামে। সংগীতশিল্পী হাসানের সঙ্গে ‘ও কন্যা’ অ্যালবাম সোহাগের ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দেয়। অ্যালবামটির ‘ও কন্যা কাইন্দো না’ এই গায়কের জীবনের প্রথম জনপ্রিয়তা পাওয়া গান। এ ছাড়া অ্যালবামটির ‘পালকি করে’, ‘তুমি আসো না কেন রে’, ‘রাত তুমি’ ও ‘একটু একটু প্রেম’ সোহাগকে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
‘ও কন্যা’ অ্যালবামের সাফল্যে পরের বছর হাসানের সঙ্গেই সোহাগ বাজারে আনেন তাঁর পঞ্চম অ্যালবাম ‘ও কন্যা মন দিলা না’। অ্যালবামের ‘কন্যা মন দিলা না’, ‘ও বন্ধুরে’, ‘কাইন্দ না ময়না’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গায়কের তথ্যমতে, ৬৪ লাখের বেশি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল অ্যালবামটির। স্মৃতি রোমন্থন করে সোহাগ বলেন, ‘হাসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার চতুর্থ অ্যালবাম “ও কন্যা” ব্যাপক হিট হয়। রাস্তাঘাটে বের হলেই গানগুলো শুনতাম। তবে পঞ্চম অ্যালবাম “কন্যা মন দিলা না” আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ হিট। দোকান থেকে রাস্তাঘাট, গাড়ি, যেখানেই গেছি, অ্যালবাম দুটির গান শুনতে পেয়েছি।’মিক্সড অ্যালবামের এ সাফল্যে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে সোহাগের। দেশব্যাপী কনসার্টের ডাক পেতে থাকেন এই গায়ক। তখন একটি ব্যান্ড গড়ার কথা চিন্তা করেন তিনি। ২০০৩ সালে ‘রক্ত আলতা পায়’ অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের পরিচিত করান ‘ভাটিয়াল’ ব্যান্ডের সঙ্গে। বাংলা অডিও ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় এ অ্যালবামের ‘লাল শাড়ি পরিয়া’, ‘ও পরান বন্ধুয়া’, ‘বন্ধু আমার চিঠি দিয়ো’, ‘রক্ত আলতা পায়ে’, ‘বেদনা’সহ সব কটি গানই শ্রোতাদের মুখে মুখে জায়গা করে নিয়েছিল। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও অ্যালবামটির গানগুলোর আবেগ এখনো কমেনি। একই বছর সোহাগের একক ‘প্রেম জুয়াড়ি’ ও হাসানের সঙ্গে তৃতীয় মিক্সড অ্যালবাম ‘সোহাগী কন্যা’ও ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। পরের কয়েক বছরে একক, মিক্সডসহ সোহাগ প্রকাশ করেন ৫০টির বেশি অ্যালবাম।
এদিকে ইউটিউব আসার পর সবার মতো কমতে থাকে সোহাগের অ্যালবামের সংখ্যা। তাঁর পুরোনো গানগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করতে থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি জোন। আর তা বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতারা লুফে নিতে থাকেন। তবে আক্ষেপ নিয়ে সোহাগ দিলেন অবাক করা তথ্য। বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গানগুলো প্রকাশ করে এ প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল এ মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। সোহাগ বলেন, ‘২০০২–০৭ সাল পর্যন্ত কে টি সিরিজের সঙ্গে আমার লিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু ইউটিউব এলে অনুমতি ছাড়া সব গান সিডি জোনের কাছে তারা ডিজিটাল চুক্তিতে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু কে টির সঙ্গে কিন্তু আমার ডিজিটাল চুক্তি ছিল না। জালিয়াতি করে আমার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। এক টাকাও আমি পাইনি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
প্রতিষ্ঠানটির কাছে জবাব চেয়েও উত্তর পাননি বলে দাবি সোহাগের। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করলে ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়রদের পরামর্শে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তবে এবার আইনি পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছেন সোহাগ। এই গায়কের কথায়, ‘আমি কার কাছে অভিযোগ করব? কার বিরুদ্ধে করব? সবাই তো নিজেদের মানুষ। কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করলে কল দিয়ে বলে, ভাই আমার, রাতে বাসায় এসো, দুই ভাই একসঙ্গে খাব। এর আগে একবার গীতিকারদের নিয়ে বসে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তখন অডিও সমিতি আমাকে সমাধান করে দেবে বলে ডাকে। কিন্তু সেখানে মিষ্টিমুখ করিয়ে পিঠ চাপড়ে বাড়ি পাঠায়। এবার সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব আমি। প্রয়োজনে আইনি পথে হাঁটব।’
সোহাগের বর্তমান ব্যস্ততা নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস অব সোহাগ’ নিয়ে। সব পরিকল্পনা এ চ্যানেল ঘিরেই। বাইরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের প্রস্তাব এলেও ফেরাচ্ছেন তিনি। প্রস্তাবের সময় প্রযোজকদের লোভনীয় প্রস্তাব কাজের পরই উল্টে যায় বলে দাবি এই গায়কের।
সোহাগ বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি আমার কাছে এখন ডিজিটাল ফাঁদ। সত্যি বলতে, বাইরে কাজ করে কোনো লাভ নেই। কখনো একটা টাকার হিসাব পাইনি। ভয়েস দেওয়ার সময় একটা খাম ধরিয়ে বলে, ভাই, আমাদের বাজেট অনেক কম, ছোট ভাই হিসেবে এটা রাখো। এরপর এ গান থেকে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করলেও কোনো দিন ডাক দিয়ে বলেনি, তোমার গান থেকে এই ব্যবসা করেছি। তুমি দুইটা ভাত খেয়ে যাও। কিছু না দিক, বলতে তো পারে। তাই বাইরে কাজ কমিয়ে দিয়েছি, নিজের চ্যানেলে সময় দিচ্ছি। এখান থেকেই যা–ই আসুক, সরাসরি নিজের কাছেই আসছে।’
পুরোনো অনেক গান নতুন করে প্রকাশ পাচ্ছে ইউটিউবে। গানগুলো শ্রোতারাও লুফে নিচ্ছেন। কয়েক বছর আগে সোহাগের ‘লাল শাড়ি পরিয়া’ নতুন করে প্রকাশ পায়, গানটির ইউটিউব ভিউ ৭৪ মিলিয়নের বেশি। এরপর পুরোনো আরও গান নতুন করে বানানোর প্রস্তাব দিতে থাকে কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তবে এখানেও ঠকেছেন বলে দাবি সোহাগের। তাই এসব প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিচ্ছেন গায়ক।
সোহাগ বলেন, ‘“লাল শাড়ি” নতুন করে প্রকাশ পেয়েও ম্যাসিভ হিট হয়েছে। এরপর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম পুরোনো গানগুলো নতুনভাবে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি সবাইকে “না” করেছি। “লাল শাড়ি” প্রায় সাড়ে সাত কোটি ভিউ হলেও আমি পেয়েছি মাত্র সাত হাজার টাকা। তাই আর নতুন প্রস্তাবে রাজি হইনি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কে টি সিরিজের মালিক এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রায় ১০-১৫ বছর আগের কথা। শিল্পী সোহাগের সঙ্গে আমার কেটি সিরিজের চুক্তি ছিল, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে ব্যবসা বন্ধ করে সিডি জোনের কাছে কোম্পানির সবকিছু বিক্রি করে দিই। তবে মৌখিকভাবে তাদের জানিয়েছিলাম, সব শিল্পীর প্রাপ্য যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
কথা হয় সিডি জোনের মালিক আবদুল্লাহ বুলু বলেন, ‘তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমি এ ব্যবসায়। শুধু সোহাগ কেন, কোনো শিল্পীর সঙ্গেই আমার ঝামেলা নেই। এখানে যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে, তা কে টি সিরিজের জন্য হয়েছে। এরপরও চলতি সপ্তাহে সোহাগের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তাকে ডেকেছি। আশা করি, দুজন বসে একটা সমাধানে আসতে পারব।’
ক্যারিয়ারের এ অভিজ্ঞতা নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছে সোহাগকে। কারও প্রতি অভিমান ও কষ্ট রাখতে চান না তিনি। তবে নিজের সন্তান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কেউ সংগীতে ক্যারিয়ার গড়ুক, তা চান না সোহাগ। আক্ষেপ নিয়েই বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ যেন আর সংগীতে ক্যারিয়ার না গড়েন। যে কষ্ট আমি পেয়েছি, তা যেন আর কাউকে না পেতে হয়।’ নিজের দেড় হাজারের বেশি গানের মেধাস্বত্বের এ লড়াই কোথায় থামবে, জানা নেই সোহাগের। তবে তাঁর প্রত্যাশা, তাঁর মতো এমন করে কেউ যেন আর না ঠকে।
কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বছরের প্রথম ৪ মাসেই ৩৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি

বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম সরকার আ’লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার - হাসান উদ্দিন সরকার

৭ দফা দাবিতে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি

বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান, মিলেছে সত্যতা

জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশীকে কুপিয়ে জখম, বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার

পাক-ভারত যুদ্ধের প্রভাব কতটা পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে?

বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় পাক-ভারত যুদ্ধ কাম্য নয় : ববি হাজ্জাজ

প্রথম বার হার, দ্বিতীয় দফার ভোটে জার্মানির চ্যান্সেলর হলেন মার্জ

ভারতীয় বিমান ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও

কোটালীপাড়ায় লাইসেন্স না থাকার অপরাধে মোবাইল কোর্টে ৩ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

র্যাব কার্যালয় থেকে এএসপির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ

‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে ইরান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত’

নিজস্ব সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে পাকিস্তান

৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন পেল একনেকে

ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিন: অমিত

বড়লেখায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত, আহত-২

কাশ্মীরে ধর পাকড়ের শিকার মুসলিমরা, ওমর-মেহবুবার নিন্দা

ভুরুঙ্গামারীতে পুশ-ইন করা ১৪ জন রোহিঙ্গা আটক