অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি আদায়ে প্রবাসীদের নিউইয়র্কে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি প্রবাসীদের । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়া কোটি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। প্রবাসে বসবাস করলেও দেশে যে ধরনের সেবা তাদের পাওয়া উচিত, সেগুলো তারা যথাযথভাবে পাচ্ছেন না। এর আগে বিভিন্ন সরকারের কাছে প্রবাসীরা নানা দাবিদাওয়া জানালেও তাদের বেশির ভাগ দাবি পূরণ হয়নি। সব সরকারই কেবল আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু দাবি আদায়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসীরা আশার আলো দেখছেন। তারা মনে করছেন, এবার তাদের কাক্সিক্ষত সব দাবি পূরণ হবে। তাই প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের ব্যানারে নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সারা বিশ্বের প্রবাসীদের পক্ষে ১৩ দফা দাবি পেশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও অঙ্গীকার করেছেন তারা।এ লক্ষ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪,রোববার বিকেল সাড়ে ৭টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঠিকানা নিউজ ও ঠিকানা টেলিভিশনের চিফ ইন এডিটর ও সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. মহসিন পাঠোয়ারী,রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী ,ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া, অ্যাটর্নি শেখ সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার আকাশ রহমান,মোহাম্মদ এন মজুমদার,মাফ মেজবাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মূলধারার রাজনীতিক এডভোকেট মজিবুর রহমান,বাপসনিউজ এডিটর ও মূলধারার রাজনীতিক সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন ,জেএসএফ”র সংগঠক হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন,এনামুল হায়দার,সোলাইমান ভুইয়া ,মোঃআলী,আব্দুর রহীম হাওলাদার,তাজুল ইসলাম,আবদুল মালেক ,গাজী সামছু ঊদ্দিন ,আব্দুর রহমান,আবুল কাসেম,আজাদ ও জাসির ।অনুষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট আশরাফুল হাসান বুলবুল ও রাজনীতিক,সংগঠক ও অ্যাক্টিভিস্ট সামসু ঊদ্দিন আহমেদ শামীম ।মতবিনিময় সভায় প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের আহ্বায়ক ফখরুল আলম ছাড়াও সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ফখরুল আলম। এরপর সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন আহসান হাবীব। দাবিগুলো হলো : ১. জাতীয় সংসদে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। ২. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু। ৩. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) চালু করা, যা ইতিমধ্যে ব্রিটেনে চালু হয়েছে। ৪. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট প্রদান করার ব্যবস্থা করা। ৫. দেশের ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা, বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ৬. ঢাকাস্থ হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা। ৭. দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা। ৮. বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা ও প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। ৯. প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করাসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ১০. প্রিয় জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ১১. বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা। ১২. কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা এবং ১৩. যেকোনো প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। অনুষ্ঠানটি প্রবাসীদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে হলেও কিছু কিছু বক্তা সুনির্দিষ্টভাবে দাবি তুলে ধরেন। বেশির ভাগ বক্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। একজন বক্তা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে দেশের ঋণ পরিশোধ করার কথাও বলেন। কেউ কেউ আলোচনায় তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। একজন বক্তা বলেন, আমি জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। আমার বাবা-মা বাংলাদেশি। আমার কেন বাংলাদেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে হবে। আমি আমেরিকান সিটিজেন হয়েছি। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে না দেখে দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে বলা হয়। আমি যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সারেন্ডার করিনি, তাহলে কেন দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে হবে। আমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বহাল থাকবে, সেটাই হওয়া উচিত। পাশাপাশি আমরা আমেরিকান নাগরিকত্ব নিলেও আমাদের এখানে জন্ম নেওয়া সন্তানেরাও যাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পায়, সেটাও দেখতে হবে। আরেকজন বক্তা বলেন, আমরা এ দেশে থাকলেও এখানে বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানেরা যাতে বাংলাদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমাদের অবর্তমানে দেখাশোনা ও ভোগ করতে পারে, সেই বিষয়টিও দেখা প্রয়োজন। এরপর মাগরিবের নামাজের বিরতি দেওয়া হয়। বিরতির পর আরও অনেকে বক্তব্য দেন। এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঠিকানা টেলিভিশন ও ঠিকানা নিউজের সিইও এবং চিফ ইন এডিটর খালেদ মুহিউদ্দীন। তিনি বলেন, সব সময় বলা হয় জনগণ ক্ষমতার উৎস। সংবিধান দেখলে দেখবেন, জনগণ ক্ষমতার মালিক। আর যারা দেশ পরিচালনা করেন, তারা কর্মচারী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন কর্মচারী হয়েছেন, আমরা জনগণ ক্ষমতার মালিক। যারা দায়িত্ব নেন, তারা কর্মচারী। কর্মচারীরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, এ জন্য তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। তাদেরকে প্রশ্ন করতে হবে। অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আজকে আসলে অনেক বেশি কথা বলার নেই। আগামীতে কখনো সময় হলে এক ঘণ্টা কথা বলব। আবার আপনারা যদি একটি টপিক দিয়ে বলেন যে পাঁচ মিনিট কথা বলতে হবে, ওই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমি কথা শেষ করব। খালেদ মুহিউদ্দীন আরও বলেন, যেকোনো দাবিদাওয়া আদায় করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথা বলতে হবে। কোনো ইস্যুতে ঐকমত্য হতে না পারলে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসে না। আজকে আপনারা ১৩ দফা দাবি তুলেছেন, সেসব দাবি ড. ইউনূস সাহেবকে জানাতে পারেন। তিনি সুইট টকার। তবে তিনি দাবি মেনে নিলেও লাভ হবে না। দাবিদাওয়ার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রায়োরিটি কতখানি, তা দেখতে হবে। আপনারা যেসব দাবি করেছেন, আমি মনে করি সব দাবি পূরণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন। তার সঙ্গে আমার অন স্ক্রিনে দেখা হবে কি না, জানি না। তবে অফ স্ক্রিনে দেখা হতে পারে। তার সঙ্গে দেখা হলে আমি আপনাদের দাবিদাওয়ার কথাগুলো তাকে বলতে পারি। তবে এ নিয়ে আমি এত বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, আপনারা বিমানের ফ্লাইট চালু করার কথা বলছেন। কিন্তু কাদের দোষে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হলো, সেটা আগে জানা দরকার। আবার কেন এখনো চালু হচ্ছে না, সেটাও জানতে হবে। বিমানের ফ্লাইট চালু হলেও যে আবার বন্ধ হবে না, এর নিশ্চয়তা কী? আপনারা এখানে যারা আছেন, তাদের অর্থে বাংলাদেশের এক বছরের সমান একটি বাজেট হয়ে যাবে। তাই আপনারা ইচ্ছা করলে নিজেরাই বিমানের ফ্লাইট চালু করে ফেলতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমি স্বল্প সময়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করেছি। কিছুদিন আইন বিষয়ে রিপোর্ট করতাম। সেটি করতে গিয়ে দেখেছি, বাংলাদেশের দেওয়ানি আদালতে ৯০ শতাংশ মামলাই বাবা-মা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। চাচাতো ভাই জমি নিয়ে গেছে কিংবা বোনের জমি দেয়নি। তিনি বলেন, আমি এ দেশে এসে থাকব, এটা আমার চিন্তা ছিল না। এখনো নেই। এখানে আমার আম্মা ও ভাই থাকেন। তারা ২৪-২৫ বছর ধরে আছেন। এবার আমি এখানে লম্বা সময় থাকব। আমি ঠিকানায় একটি অনুষ্ঠান শুরু করেছি। স্থানীয় সময় দুপুর বারোটায় অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হচ্ছে। আপনারা অনুষ্ঠানটি দেখবেন এবং আমার সঙ্গে থাকবেন। আপনাদের কথাগুলো কীভাবে তুলে ধরা যায়, তা আমি দেখব। সভাপতির বক্তব্যে ফখরুল আলম বলেন, আমরা প্রবাসীদের দাবিদাওয়াগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে পাঠাব। আশা করি, তারা আমাদের দাবিদাওয়াগুলো দেখবেন এবং পূরণ করার জন্য যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বিভাগ : প্রবাস জীবন
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ