মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব
২০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম
ঈদুল ফিতরের দিনটি বিশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে আসে। এদিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। নতুন চাঁদ দেখা মাত্র রেডিও-টেলিভিশন ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় খুশির বার্তা ‘ঈদ মোবারক’। সেই সঙ্গে চারদিকে শোনা যায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত রোজার ঈদের গান: ‘ও মন্ রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...’।
এক মাস সিয়াম সাধনার পর উদযাপিত হবে দেশের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ সময় নিজের গ্রামের বাড়িতে, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি যাওয়া হয়। যাওয়া হয় বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে। বিপুল উৎসাহ আর বাহারি সব খাবারের লোভনীয় আয়োজনের সমাহারে পালিত হয় এই উৎসব। তবে এই ঈদ উৎসবের আয়োজনেও আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। আর সে জন্যই অপরিমিত হারে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ পরিহার করা উচিত।
স্বাস্থ্যকর ঈদ পালনে মনে রাখবেন :
কারও কারও ঈদে গোশতের পরিমাণটা একটু বেশিই খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে গোশত খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে, বারবার পায়খানা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন।
যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে মানা নেই, কিন্তু পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই পরিকল্পনা থাকা দরকার। ঈদ-পরবর্তী দাওয়াতে তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি ও আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি খাওয়া হয়। এ ছাড়া আছে চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো টক খাবারও। এই জাতীয় খাদ্য সকাল আর দুপুরে পরিহার করাই উত্তম। কারণ বিকালে প্রচুর পরিমাণে গোশত খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই। এই গরমে ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন। খাবার আধঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যান। অনেকেই শরবত, কোমল পানীয়, ড্রিংকস এবং ফ্রুট জুস খাওয়া পছন্দ করেন। তবে মনে রাখা উচিত, এসব না খেয়ে সব সময় মৌসুমি ফল খাওয়া উত্তম, তাতে মজা ও উপকার দুই-ই পাবেন। লেবুর শরবত, বাসায় বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি ইত্যাদি খাওয়া যায়।
যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন এবং তাদের হজমেরও কোনো সমস্যা হয় না, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো, বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাদ্য। বেশি গোশত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে, তাদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। পেটে গ্যাস হলে প্রয়োজনে এন্টি আলসারেন্ট, এন্টি ফ্লাটুলেন্ট খেতে পারেন।
যাদের আইবিএস আছে, তারা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। দাওয়াতে গেলে পরিমিত খাবেন, অতিভোজন পরিহার করার চেষ্টা করবেন। হয়তো অনেক খাবার টেবিলে সাজানোই থাকবে, কিন্তু খেতে বসলেই যে সব খেতে হবে তা নয়। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজমি রসগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। পশুর চর্বি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা রান্না সুস্বাদু হবে এমন ভুল ধারণা পোষণ করে মাংসে বেশ কিছু চর্বি আলাদাভাবে যোগ করে থাকি। এটা ঠিক নয়। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। তাই এই সময়ে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে যথেষ্ট যতœবান ও সতর্ক হতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রতিকার নয় এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
> অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন:
অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে, পরিমাণে অল্প, কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং মোটা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তা ছাড়া অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খেলে পেটের সমস্যা এবং বদ হজম হয়।
> মিষ্টিজাতীয় খাবার কম গ্রহণ করুন :
মিষ্টিজাতীয় খাবার একান্তই এড়াতে না পারলে, অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। মিষ্টি খাবারের রেসিপিতে একটু বদল আনুন। তৈলাক্ত অংশ যেমন, ক্রিম, পেষ্ট্রি বাদ দিন। চিনির বদলে মধু কিংবা খেজুর যোগ করতে পারেন, যা আপনার খাবারের পুষ্টিগুণ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
> এদিনের খাবারেও শাকসবজি রাখুন:
মাংসের পাশাপাশি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করুন। প্রচুর সালাদ খান। শাকসবজিতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই পুষ্টি আপনার ক্ষুধা ভাব কমাবে, সেই সাথে আপনাকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত এবং মেদযুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখবে।
> কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন:
ভারী খাবার হজমে কোমল পানীয় কার্যকর নয়। এসব পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই যতটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে নারকেল পানি, টক দই, লাচ্ছি, লেবু পানি অথবা জিরা পানি পান করতে পারেন।
> প্রচুর পানি পান করুন:
এই গরমে শরীরে পানি ও লবন কমে যেতে পারে, আবার এসময়ে শরীরে পানির চাহিদাও বেশী। টানা এক মাস রোজা রাখার ফলে দেহের গ্লাইকোজেনের মাত্রাও কমে যেতে পারে। প্রচুর পানি পান করলে গ্লাইকোজেনের মাত্রা আবার ধীরে ধীওে স্বাভাবিক হয়।
> খাবারের রুটিন ঠিক করুন এবং প্রতি বেলার খাবারের মাঝে বিরতি নিন:
শরীর সুস্থ রাখতে অনিয়মিত খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন। ঈদের মধ্যেও খাবারের রুটিন মেনে চলুন। খাবার সঠিকভাবে হজম হওয়ার জন্য একবার খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে ৪-৬ ঘণ্টা বিরতি নিন।
> নিয়মিত শরীর চর্চা করুনঃ হাঁটাচলা এবং ব্যায়াম করলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত হাঁটাচলা আপনার পাকস্থলিকে সুস্থ রাখে এবং খাবার হজমে সাহায্য করে।
সচেতনতাঃ-
> অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান : যাত্রাপথে যানবাহনে অপরিচিত কেউ খাদ্য বা পানীয় দিলে খাবেন না। কারণ প্রায়ই শোনা যায়, এ ধরনের খাবার খেয়ে অনেকেই বড় দুর্ঘটনায় পড়েছেন। এই বিপদ এড়াতে সচেতন থাকবেন। রাস্তাঘাটের দোকান থেকে খাবার এবং পানীয় পরিহার করুন।
> গর্ভাবস্থায় ভ্রমণে করণীয় : অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা অতিরিক্ত ঝুঁকি হয়, এমন পথে ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করুন। প্রথম তিন মাস ও সম্ভাব্য ডেলিভারির ২ থেকে ৩ মাস আগে ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। গর্ভাবস্থায় কোনোক্রমেই একা ভ্রমণ না করা উচিত। নিরাপদ মাতৃত্বের স্বার্থে কোনো ধরনের বিপদের ঝুঁঁকি নেবেন না।
পরিশেষে, পুষ্টি সচেতনতা নতুন কিছু নয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি কী খাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে পছন্দের সব ধরনের খাবার গ্রহণ করুন। আর দূরের, কাছের পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
চিকিৎসক, কলামিস্ট ও গবেষক
ইমেইল: [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়েমেনে হামলার সময় বিমানবন্দরে ছিলেন ডব্লিউএইচওর প্রধান
ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি
হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা
টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড
শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?