রাতদুপুরে জরুরি সমস্যা
১১ মে ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
কার কখন হঠাৎ জরুরি সমস্যা হবে কেউ বলতে পারে না। রাতদুপুরে এমন সমস্যা হলে আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। কোথায় পাবো অ্যাম্বুলেন্স, কোন ডাক্তারকে ডাকব, কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাবো বুঝতে পারি না। অনেক সময় জরুরি টেলিফোন নম্বরও জানা থাকে না বা খুঁজে পাওয়া যায় না। এ জন্য আমাদের হাতের কাছে নিকটস্থ নার্সিং হোম, ক্লিনিক বা হাসপাতালের টেলিফোন নম্বর লিখে রাখতে হয়। যা হোক, হঠাৎ করে রাতদুপুরে কী কী সমস্যা হতে পারে? যেমন- অ্যাজমা, আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, আগুনে পোড়া, ডায়াবেটিস, মাথা ফাটা, হাড়ভাঙা, অগ্নিদগ্ধ, হার্ট অ্যাটাক, বিষপান, স্ট্রোক, প্রস্রাব বন্ধ, আহত হওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা যদি হয়, তাৎক্ষণিক কী করা যাবে?
* অ্যাজমা- বাড়িতে কোনো অ্যাজমা রোগীর বারবার হাঁচি, কাশি হতে থাকে, বুকে চাপ বোধ হতে থাকে, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস কমে যায়, ঠোঁটের চার দিক নীল হয়ে যায়, এমনকি কোনো কথা পর্যন্ত বলতে সক্ষম হয় না, কোনো কষ্ট হ্রাসকারী ওষুধেও কাজ হয় না। তখন শান্ত থেকে তাকে কোনো ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া দরকার অবিলম্বে। বেশি পানি পান করতে দেবেন না, বরং গরম দুধ বা চা বা কফি দেয়া যেতে পারে। ওখানে নিয়ে তাকে নেবুলাইজার দিন। অবিরাম হাওয়া পাম্প করতে হবে, যাতে ফুসফুস কার্যকর হয়। প্রয়োজনে অক্সিজেন লাগিয়ে রাখা দরকার।
* আগুনে পোড়া- পোড়ার কঠিন অবস্থা নির্ণিত হয় ত্বকের পোড়া দেখে। পেড়ার ক্ষতিটা তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছলে ত্বক কালো দেখা যায়। পেশি ও মাংসপেশি গভীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি জ্বালাপোড়া হয় না। যদি স্নায়ুতন্ত্র পুড়ে খতম হয় তবে জ্বালা তীব্র হয়। চিকিৎসক নবম বিধি অনুসারে শরীরের পোড়ার শতকরা হার নির্ণয় করবেন। দেহের কাপড় সরিয়ে আহত স্থান পানির ধারা দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। পানিশূন্যতা ও মাংসপেশিকৃত কিডনির ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করবে। মুখের মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। তার পর বার্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
* অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ- যদি সন্দেহ হয় যে তলপেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বা বুকে বা হজমকারী লাইনে বা কোনো হাড় ভাঙার জন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাহলে দেখা যায় মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, গায়ের ত্বক ঠা-া, দুর্বল কিন্তু দ্রুত স্পন্দন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস কম, মাঝে মাঝে জ্ঞান হারায় এবং মূর্ছা যায়; কোথায় জ্বালা-যন্ত্রণা এবং আহত জায়গায় অবস ভাব হয়। যেহেতু বাইরে রক্ত দেখা যায় না, ফলে রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনুমানে শরীরের কোনো জায়গায় কেটে কোনো রক্তক্ষরণ পাওয়া যায় না। তবে কারো পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হলে বমিতে রক্ত পাওয়া যায়। এ অবস্থায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স এনে নার্সিং হোম বা হাসপাতালে নেয়া জরুরি। যতক্ষণ কোনো চিকিৎসালয়ে না নেয়া যায়, ততক্ষণ বিছানায় শোয়া অবস্থায় পা দুটো কোনো উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। গায়ে একটা সম্বল দিয়ে ঢেকে দিন। কোনো খাদ্য বা পানীয় দেবেন না। হাসপাতালে নিয়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
* ডায়াবেটিস ও হাইপোগ্নাইসেমিয়া- ডায়াবেটিক রোগীদের না খেয়ে বা দেরিতে খাদ্য গ্রহণের জন্য সুগার ৫০মি.গ্রা/ডিএল এর নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া রোদে অনেকক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের কারণেও এমন হয়। অথবা অনিয়মিতভাবে ওষুধ গ্রহণ করলেও এমন হয়। এর ফলে মানসিক ধাঁধা লাগে, মাথা ধরে, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়। আঙুল বা ঠোঁট জ্বলে। মুখ ফ্যকাশে হয়ে যায়। কথাবার্তা অস্পষ্ট হয়। কখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন শিরার ফ্লুইড ব্যবহৃত হয়।
* হার্ট অ্যাটাক- যখন করোনারি আর্টারিতে কোনো ব্লক বা প্রতিবন্ধকতা হয়, তখন হার্টে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। তখন বুকের মাঝখানে জ্বালা হয়, ব্যথা করে, এই ব্যথা বাহুতে বিস্তৃত হয়। চোয়াল ও ঘাড়েও ব্যথা চলে যায়। শুয়ে থাকলেও এসব বাধা যায় না। পা, হাত, পা, ত্বক ঠা-া হয়ে যায়, বমি বমি ভাব হয়, কখনো বমি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। স্পন্দন অনিয়মিত হয়। যত শিগগিরই রোগী সেবা ও চিকিৎসা পায়, তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা হার্টের পেশিকে রক্ষা করবে, হার্টফেল থেকে বাঁচাবে। হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত ১৫০ মি. অ্যাসপিরিন মুখে দিতে হবে, যাতে রক্ত জমাটবদ্ধ হতে না পারে। হাসপাতালে গেলেই ইসিজি, ট্রপনিন করা হবে এবং রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হবে। হার্ট অ্যাটাকের ৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে ওষুধ দিয়ে শতকরা ৮০ ভাগ জমাট রক্ত তরল করা সম্ভব হবে। ১ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম থাকে। মরফিন বা এজাতীয় ওষুধ খাওয়ালে ব্যথা ও উদ্বেগ হ্রাস পাবে। নাইট্রোগ্লিসারিন দিলে হার্টে অক্সিজেন সরবরাহের উন্নতি হবে। রক্তসঞ্চালন বাড়বে। এসবের পর আরো কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীকে সিসিইউতে রাখা হতে পারে।
* বিষপান ও বিষক্রিয়া- যদি কোনো শিশু হঠাৎ কোনো বিষপান করে বা কেউ আত্মহত্যা করতে বিষপান করে তাহলে সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। সাথে নিতে হবে বিষের নমুনা। যদি কেরোসিন, গ্যাসোলিন, তারপিন, পরিষ্কারক তেল বা জল বা কীটনাশক ওষুধ না হয়, তবে রোগীকে বমি করাতে হয়। রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করালে কী ধরনের ওষুধ প্রয়োজন তা বোঝা যায়। নাক বা মুখ দিয়ে পাকস্থলীর ভেতর টিউব ঢুকিয়ে পাকস্থলী ওয়াশ বা পরিষ্কার করতে হবে। অক্সিজেন ও শিরায় ফ্লুইড দেয়া হতে পারে।
* স্ট্রোক- হঠাৎ যখন কোনো জমাটবন্ধ রক্তকণা মস্তিষ্কের শিরার রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় অথবা যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোনো শিরা ছিঁড়ে যায় বা বিস্ফোরিত হয় তখন স্ট্রোক করে। তখন যেসব লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো হলো হাত-পা এমনকি সর্বশরীর অবস হয়ে যায়। কথা বলতে পারে না রোগী, অবিরত মাথায় যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, প্রস্রাব হলে অকেজো হয়, পেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রোগী জ্ঞান হারায়। হাসপাতালে নিয়ে তখন ডায়াবেটিস টেস্ট, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধা, ইসিজি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়। মস্তিÍষ্কের এনজিওগ্রামও করা হয়। এসব ব্যবস্থা দ্রুততার সাথে করতে হয়। যদি রক্তবাহী শিরায় প্রতিবন্ধকতা থাকে তবে থ্রম্বলাইটিক থেরাপী দেয়া হয়। টিসু প্লাজমিনোজেন একটিভেটর করা হতে পারে ৩ ঘন্টার মধ্যে। এসব কাজ হাসপাতাল ছাড়া কোথাও করা সম্ভব নয়। হাসপাতালে দ্রুততার সাথে এগুলো করতে পারলে সমূহ মৃত্যুঝুঁকি থেকে বাঁচা যেতে পারে এবং রোগী স্বাভাবিক হতে পারে শতকরা ৩০ জন। তবে এর মধ্যে রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তখন আইসিইউতে নিয়ে বিশেষ চিকিৎসা দেয়া হতে পারে।
* প্রস্রাব সমস্যা- একজন মানুষের মুত্রথলি পূর্ণ কিন্তু প্রস্রাব বের হয় না বা হচ্ছে না, এমন সমস্যা হতে পারে। তখন হাসপাতালে নিয়ে মুত্রথলিতে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে প্রস্রাব বের করতে হয়। রোগীর বড় প্রোস্টেটের চিকিৎসা প্রয়োজন কিনা। তার কিডনি রোগ আছে কি না। পরীক্ষার জন্য রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
* ওষুদের অপপ্রয়োগ- হতাশাগ্রস্ত মানুষ রাতে অ্যান্টি-অ্যানজাইটি এবং সিডেটিভ গ্রহণ করে। কখনো এর মাত্রা বেড়ে গেলে জীবন বিপন্ন হয়। এসব মানুষ ওইসব ওষুধ বা ড্রাগ নিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন হয়তো গভীর রাত। তার রক্তের চাপ নিম্নপর্যায়ে, যারা কোকেন নেয় তাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এতে হার্ট অ্যাটাক করতে পারে। এটা সুস্থ ক্রীড়াবিদদেরও হতে পারে। তখন তাদের বিটা ব্লকার দিতে হয়। যারা ওপিওয়েড ব্যবহার করে তাদের ভেন্টিলেটরও প্রয়োজন হতে পারে। এসব বাসাবাড়িতে খুব কমই থাকে। কাজেই কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতেই হয়। এ জন্য আগে থেকে জানা দরকার, কোথায় এসব ব্যবস্থা আছে। কোথায় এ সমস্যার জন্য সার্বক্ষণিক ডাক্তার আছে।
আহত হলে- কোনো কারণে আহত হলে হাসপাতালে যেতে হয় যদি-
* কাটাছেঁড়ায় মুখের এক-তৃতীয়াংশ আহত হয়।
* যদি কাটাছেঁড়া খুব গভীরে যায়।
* কয়েক মিনিটের মধ্যেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয়।
* কাটাছেঁড়ার ভেতরে ঢুকে যাওয়া জিনিসগুলো বের করা না যায়।
* বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যদি টিটেনাস ইনজেকশন না নেয়া হয়ে থাকে।
* আহত জায়গা যদি ব্যান্ডেজ করা না যায়।
* সিদ্ধান্ত গ্রহণ- রোগীর অভিভাবক ও ডাক্তারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ চিকিৎসার জন্য খুবই কার্যকর। চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার সাথে রোগীর অভিভাবকের আর্থিক ব্যাপার, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাও ডাক্তারের চিকিৎসা বহুলাংশে নির্ভরশীল। জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ তিনি অভিজ্ঞতা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর চিকিৎসা নির্ভরশীল। ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই ডাক্তার চিকিৎসা দেন। এসব টেস্ট নিরর্থক নয়। তারপরও সব টেস্টের নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তবুও এগুলো চিকিৎসার লক্ষ্যে মেনে নিতে হয়। কারণ এতে রোগ সম্পর্কে সন্দেহ দূর হয়। অনেকের ধারণা, ডাক্তার অনর্থক একগাদা টেস্ট করাতে বলছেন। এটা সর্বদা সঠিক নয়। রোগ নির্ণয় করতে বা রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে টেস্টের প্রয়োজন হয়। ডাক্তারের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হয়।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান