পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) প্রজননক্ষম মহিলাদের একটি গুরুতর হরমোনজনিত রোগ। ১৪-৪৫ বছর বয়সি মহিলদের ৬-১৪% (গড়ে ১০%) এ সমস্যায় ভোগেন; পিসিওএস এ বয়সি মেয়েদের প্রধানতম হরমোনজনিত রোগ। এই সেপ্টেম্বর হচ্ছে পিসিওএস সচেতনতা মাস।
পিসিওএস-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যে উচ্চ মাপের আন্ড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনগুলির উপস্থিতি থাকে। মেয়েদের দেহে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের বেড়ে গেলে এর প্রভাবে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বড় হয়ে বের হবার পথে বাঁধা সৃষ্টি হয় এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্থ হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ:
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ বিভিন্নতর হয়ে থাকে এবং সেগুলো নিম্নরূপ হতে পারেঃ
অনিয়মিত ঋতুস্রাব-অধিকাংশ সময়ে ঋতুস্রাব কম হলেও কিছি কিছু সময় তা বেড়ে যেতে পারে এবং কারো বেলায় তা যন্ত্রনাময়।
মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরষালি) হয়, ব্রণ হয় মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। আরও কিছু শারীরিক সমস্যা এর সঙ্গে থাকতে পারে- তলপেটে ব্যথা, মকমলেরমতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়) বন্ধ্যাত্ব। স্বর - গলার স্বর পুরুষালী হওয়া বা মোটা (অনেক কম দেখা যায়), গর্ভপাত।
বিপাকীয় লক্ষণ: পিসিওএসে আক্রান্তদের মধ্যে দেখা গেছে সেন্ট্রাল ওবেসিটি বা শরীরের মধ্যাঞ্চলে মেদ জমার প্রতি প্রবণতা এবং ইনসুলিন রেজিট্যান্স তৈরী হওয়ার মত কিছু লক্ষণ। পিসিওএস আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে সিরাম ইনসুলিন, ইনসুলিন রেজিট্যান্স, এবং হোমোসিস্টাইন এর মাত্রা বেশি থাকে। অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিকান্স - ঘাডের পেছনে, হাতের নিচে কালো ছোপ, বগলের ত্বক গাঢ় হওয়া ও পুরু হয়ে যাওয়া।
অতিস্থূলতা, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, হৃদরোগ মেটাবলিক সিনড্রোম - স্থুলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস, মেজাজ পরিবর্তন - যেমন ডিপ্রেশন, এঙ্গজাইটি অথবা খাদ্য গ্রহণে ব্যাত্যয় ইত্যাদি, জরায়ুর ক্যান্সার।
সঠিক চিকিৎসা না হলে সম্ভ্যাব্য জটিলতাঃ
১. ডায়াবেটিস। ২. উচ্চ রক্ত চাপ। ৩. কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি। ৪. লিভারে অতিরিক্ত চর্বি। ৫. বন্ধ্যাত্বতা বা গর্ভধারনের সমস্যা। ৬. গর্ভপাত। ৭. জরায়ুর ক্যান্সার। ৮. অবসন্নতা, দুশ্চিন্তা সহ মানসিক সমস্যা। ৯. স্লিপ অ্যাপনিয়া। ১০. হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
কারণ:
অতিস্থূলতা, শারীরিক শ্রমহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস। জীনগত ক্রুটির কারনেও এটা হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ঃ
বর্তমানে পিসিওএস নির্ণয়ে একক কোন পরীক্ষা নেই। অনেকগুলো বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
রোগের লক্ষণসমূহ শরীরে দেখা দিলে দ্রুত হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
রোগ নির্ণয়ের জন্য দরকারঃ-
১) রোগের লক্ষণ। ২) শারীরিক পরীক্ষা। ৩) রক্ত পরীক্ষা- হরমোন, গ্লুকোজ, চর্বি। ৪) আল্টাসনোগ্রাফী।
কিছু টেস্টের মাধ্যমে একই রকম লক্ষণ ও উপসর্গ আছে এমন কিছু অসুখ যেমন থায়রডের সমস্যা, সিএএইচ ইত্যাদি আছে কিনা তা জানার জন্যে।
রক্তের লিপিড প্যানেল টেস্ট, হৃদরোগের কোন লক্ষণ আছে কিনা বা জটিলতা তৈরী হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়।
ওজিটিটি বা এইচবিএওয়ান্সি টেস্ট করার হয় ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস শনাক্ত করার জন্যে।
প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা:
যেহেতু একাধিক কারনে পিসিওএস জটিলতা তৈরী হয় তাই একক কোন চিকিৎসা নেই যা এটিকে ভাল করার। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জটিলতা নিরসন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। রোগের তীব্রতা, রোগীর শারীরিক সক্ষমতা এবং গর্ভধারনের ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ বিষয় নির্ভর করে। জীবনধারায় পরিবর্তন, যেমন ওজন কমানো এবং ব্যায়াম করা, এগুলিই হল এর চিকিৎসা। খাদ্য ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত পরিমিত শারীরিক শ্রম সম্পাদন এবং ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ও সময়মত পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পিসিওএস প্রতিরোধযোগ্য। প্রত্যেহ পর্যাপ্ত তাজা-সবুজ বা রঙিন শাক-সব্জি খাওয়া [আলু কোন সবজি নয়!], নিয়মিত সতেজ ফল খাওয়া (টক ও কম মিষ্টি ফলগুলো বেশি উপকারি), আমিষ বাড়িয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান কম খেয়ে পিসিওএস প্রতিরোধের ভিত্তিভুমি স্থাপন করা সম্ভব।
একই সাথে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, উচ্চ রক্তচাপ কমানো গেলে, চর্বিতে কোলেস্টরলের মাত্রা কমালে পিসিওএস দূর হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।
পিসিওএস আক্রান্তদের ওজন কমানো জরুরী, অনেক ক্ষেত্রে কষ্টকর হলেও। ওজন পাঁচ শতাংশ কমাতে পারলে, তাহলে তাঁদের পিরিয়ড নিয়মিত হতে শুরু হতে পারে। আর ওজন ১০ শতাংশ কমাতে পারলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে। প্রচুর পানি/ মিষ্টিহীন জলীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে প্রতিদিন। সপ্তাহের সাতদিনই একই সময়ে- নিয়মে সকালের নাস্তা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায় বলে গবেষণায় প্রমানিত। আর সকালের নাস্তা গ্রহণ অনিয়মিত- অপরিমিত হলে ফলাফলও বিপক্ষে যাবেই।
মেটফরমিন এবং অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে রজঃস্রাব স্বাভাবিক হয়, অবাঞ্ছিত লোম এবং ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে আরো ইনসুলিনের প্রতিরোধ্যতা হ্রাস পায় এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে। বিশেষ ক্ষেত্রে ব্রণ চিকিৎসা এবং অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পিসিওএস আক্রান্তদের মানসিক অবস্থার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনেকেই মনাসিক অবসাদ, বিষন্নতায় ভুগতে পারেন।
পরিশেষে,
১. পিসিওএস একটি হরমোনজনিত সমস্যা।
২. এটি প্রতিরোধযোগ্য, নিরাময়যোগ্য।
৩. জীবন- যাপন ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা (লাইফ স্টাইল ম্যানেজমেন্ট) পিসিওএস চিকিৎসার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
৪. এর জন্যে দ্রুত একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার দরকার হয়।
৫. যত তাড়াতাড়ি রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা যাবে, ফলাফল তত ভালো।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লাঞ্চের আগেই ৪ উইকেট নেই ভারতের
মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ
আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত
বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা