পুষ্টিকর খাবার প্রতিদিন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম
সুস্থ জীবনের জন্য দরকার সুষম খাদ্য। খাদ্য ছাড়া কোন জীবই বাঁচতে পারে না। মানুষের সবচেয়ে প্রিয় হলো তার জীবন। তাই সবার হৃদয় জুড়ে থাকে বেঁচে থাকার বাসনা। খাদ্য ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। আমরা যৌবনে খাওয়া-দাওয়া, আচার-আচরণে অনেকাংশে অনিয়ম ও উচ্ছৃঙ্খল থাকি। খাওয়া-দাওয়া ও পানাহারে অনেক প্রতিযোগিতা করি। পরিণাম ভাবি না যৌবনের তাড়নায়। ফলে পরবর্তীকালে নানা স্বাস্থ্যসমস্যায় ভুগি। কষ্ট পাই। দুরারোগ্য রোগের সম্মুখীন হই। তাই রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আমরা সবাই কী কী খাদ্য খাওয়া যাবে না শুনতে শুনতে ক্লান্ত। কিন্তু কী কী খাবার খাবো বা খাওয়া উচিত তা শুনতে পাই কম। আসুন, জেনে নেই, আপনার খাবার কেমন হওয়া উচিত।
মিষ্টিকারী খাদ্য- আমাদের খাবারের মধ্যে কিছু খাদ্যে প্রাকৃতিক মিষ্টিকারী উপাদান আছে। যারা খাবারে মিষ্টি পছন্দ করেন তারা ক্যারোট, বিট, মিষ্টি আলু, ইয়াম, পেঁয়াজ ও স্কোয়াশ খান। এগুলোর মধ্যে মিষ্টিকারী উপাদান আছে, অথচ ক্যালোরি নেই। এসব সবজি খেলে চিনির প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে।
অলিভ অয়েল- অলিভ অয়েল হচ্ছে সর্বাপেক্ষা স্বাস্থ্যবান্ধব তেল। এই তেলের ভেতর মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা হার্টের জন্য অত্যন্ত হিতকর। এতে আছে সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ব্যথা, জ¦ালা-যন্ত্রণা প্রতিরোধ করে। যারা নিয়মিত অলিভ অয়েল খান তারা বেশির ভাগ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের শিকার হন না বা এসব রোগে মারা যান না।
কালো গোলমরিচ- লবণের পরে কালো গোলমরিচ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটা ভারতে বেশি চাষ হয়। গোলমরিচের রয়েছে জ্বালা-যন্ত্রণা প্রতিরোধক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি অগ্ন্যাশয়ে এনজাইম উৎপন্ন করে হজমে সহায়তা করে। এটির শক্তি দেহে শোষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডিম- ডিম নিয়ে এত দিন অনেক ভীতিজনক কথা বলা হয়েছে। যেমন- ডিমের সাদা অংশ উপকারী। কুসুম অত্যন্ত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল তৈরি করে। কিন্তু সর্বাধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, উল্লেখিত মন্তব্য ভিত্তিহীন বরং ডিম অত্যন্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। এর সাদা অংশ অপেক্ষা কুসুম অধিক উপকারী। ডিমের সাথে হৃদরোগের কোনো সম্পর্ক নেই। ডিম হার্টের কোনো ক্ষতি করে না। হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায় না। ডিমের কুসুমে সর্বপ্রকার পুষ্টি বিদ্যমান।
নৈশখাবার দেরিতে খাবেন না- আমাদের দেশে প্রায় সব পরিবারে রাতের খাবার খেতে রাত ১০ থেকে ১২ টা বাজে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাতের খাবার রাত ৯ টার মধ্যে খেয়ে নেয়া উচিত, যাতে খাওয়ার পর ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হয়। খাওয়ার পর পাকস্থলী যদি দীর্ঘ সময় বিশ্রাম পায়, তাহলে হজমশক্তি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি শরীরের ওজনও সঠিক থাকে। জাপানিরা সূর্যাস্তের পরই রাতের আহার শেষ করে। তার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা নাশতা ও চা খায়।
কফিভীতি ভিত্তিহীন- আমাদের মধ্যে অনেকেই কফি পান করতে ভয় পায়। আসক্তি হতে পারে। কফি পান ক্ষতিকারক ইত্যাদি ভীতি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারণা ও ভীতি অমূলক; বরং কফি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। দৈনিক পাঁচ কাপ দুধবিহীন কফি পানে ডায়াবেটিস কমে আসে। তাদের মতে, কফি স্বাস্থ্যের জন্য উপাদেয় পানীয়। এতে উচ্চমাত্রায় এন্টি অক্ষিডেন্ট বিদ্যমান। গবেষকদের মতে, কফিপায়ীরা দীর্ঘ জীবন লাভ করে। কফি ডায়াবেটিস-২ হ্রাস করে। পারকিনসন্স রোগ ও আলঝিমার্স রোগ আক্রমণ করতে পারে না। কাজেই কফিভীতি অমূলক, ভিত্তিহীন বরং কফি পান (অবশ্যই দুধবিহীন) স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
নিজের ইচ্ছামতো খান- আপনার যদি জানা থাকে এবং আপনি একজন স্বাস্থ্য সচেতন সুখী মানুষ হন দৈনিক একটা নাশপাতি খান। যেসব খাদ্যে উচ্চমাত্রায় চর্বি থাকে এবং বেশি পরিমাণে চিনি থাকে এবং বেশি ক্যালোরি থাকে, সেসব খাবারের চেয়ে নাশপাতি অনেক ভালো খাবার। গবেষকেরা বলেন, ফলমূল ও শাকসবজি সবচেয়ে ভালো খাদ্য। কারণ এসব খাবার আমাদের ইতিবাচক আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি করে। তাই আমাদের সবার বেশি সালাদ ও তাজা ফলমূল খাওয়া উচিত। দিনে ১০ থেকে ১২ টার মধ্যে ফল ভক্ষণ করতে হয়। তবে সালাদ দিনে-রাতে সব সময় খাওয়া চলে।
কোন খাদ্যে কী অনুভূতি হয়- যত বেশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন আপনার মনমেজাজ তত ভালো হবে। যত বেশি ফার্স্টফুড (সিঙ্গাড়া, বার্গার, পিজা, পেটিস, মিট রোল ইত্যাদি) খাবেন তত বেশি অস্বস্তি বোধ করবেন। অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কারণ, এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নয়। বরং এগুলো আপনার পেটে গ্যাস উৎপন্ন করবে, ব্যথা হবে, বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে। হজমের গোলযোগ তৈরি করবে। পাতলা পায়খানা হতে পারে। কলেরা ও আমাশয়ে আক্রান্ত হতে পারেন।
গরমের খাবার- একটু একটু করে গরম পড়তে শুরু করেছে। গরমকালে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে যায়। পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, তাই পানিসমৃদ্ধ ফলমূল ও বেশি বেশি পানি পান অত্যাবশ্যক। গরমে স্ট্রবেরি, কালো জাম, তরমুজ, বাঙ্গি, পাকা কাকুড়, লিচু ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ খাবার। এগুলোও এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, এগুলোতে উচ্চমাত্রায় আঁশ আছে, ক্যালোরি নগণ্য এবং বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। সর্বপ্রকার প্রায় কালো ও সবুজ পাতাবিশিষ্ট সবজি যেমন- স্পিনাক, পালংশাক, মুলাশাক ও পুঁইশাক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এসব খাদ্যে হৃদবান্ধব উপাদান ফলিক এসিড, ভিটামিন ‘কে’, লৌহ ও লুটেন ইত্যাদি স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত সহায়ক। তাই বলা হয়, পুষ্টিহীন আর কম দৃষ্টিহীন- শাকসবজি খাওয়ান প্রতিদিন।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান