এ সময়ে বাচ্চাদের একজিমা
১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম
গরমের এই সময়টায় বাচ্চাদের চুলকানি রোগ বা একজিমার মধ্যে যেটি খুব বেশি দেখা দিতে পারে তা হল ইনফেনটাইল একজিমা। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটপিক ডার্মাটাইটিসও বলা হয়ে থাকে। এটা একটা জটিল বংশগত অবস্থা- যা অনেক সময় বয়স ভেদে ও পরিবেশগতভাবে বহুবিধ পার্থক্য নিয়ে দেখা দিতে পারে। শতকরা ৩ ভাগ শিশুর ক্ষেত্রে তাদের জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
শতকরা ৯০ ভাগ আক্রান্ত শিশু তাদের পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই এটপিক একজিমায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ শিশু তাদের বংশগত সমস্যার কথা বলে থাকে। একজিমায় আক্রান্ত অর্ধেক শিশুরই হয় নাকের এলার্জি, না হয় হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। যদিও সময়ের সাথে একজিমা ভাল হয়ে যেতে পারে, তথাপি শতকরা ৩০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক অথবা মানসিক চাপের সময় আবার দেখা দিতে পারে। রোগটির লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হচ্ছে প্রচ- চুলকানী, সেই সাথে লালচে র্যাশ যা কি-না দুই গালে দেখা দিতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ত্বকের প্রদাহের তুলনায় চুলকানির তীব্রতা অধিতর হিসেবে প্রকাশ লাভ করতে পারে। রোগটি আরো তীব্র হলে ত্বকে চলটার মত অবস্থা দেখা দিতে পারে এবং যা পরবর্তীতে ত্বকে ইনফেকশনের সৃষ্টি করতে পারে।
প্রথম লক্ষণ জন্মের দু’মাস পর থেকেই শুরু হতে পারে এবং দু’বছর পর্যন্ত বারে বারে দেখা দিতে পারে। এরপর কিছু ক্ষেত্রে রোগটি সারাজীবনের জন্য ভাল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শৈশবকালীন একজিমায় মোড় নিতে পারে। শৈশবকালীন অবস্থায় হাতের কনুইয়ের ও হাঁটুর উল্টোপাশে প্রধানত ত্বকের প্রদাহ দেখা যায়, যেখানে প্রচ- চুলকানি লালচে র্যাশ ও সাথে অত্যাধিক চুলকানির ফলে ত্বক মোটা ও কর্কশ হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় ত্বক শুষ্ক থাকবে কোনরকম কস অথবা নিঃসরণ থাকবে না। আক্রান্ত এলাকা বারে বারে আক্রান্ত হবে এবং যৌবনকালীন একজিমায় পর্যবসিত হতে পারে এবং যৌবনকালের একজিমা বেশি বেশি সৃষ্টি করবে ত্বকে এবং আরো কর্কশ ও মোটা হয়ে উঠবে এবং সেই সাথে মুখম-ল, গলা, ঠোঁট ইত্যাদি এলাকাও আক্রান্ত হতে পারে। রোগটির তীব্রতর অবস্থায় শরীর আক্রান্ত হতে পারে।
তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্বাভাবিকতার কারণেও রোগটির প্রকোপ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
চিকিৎসা ও করণীয় ঃ
চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে
ত্বকের প্রদাহ কমান
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখা
ত্বকে উত্তেজনা বা উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ফ্যাক্টরগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা।
ত্বকের উত্তেজনা প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া উচিত সেগুলো হচ্ছে: (ক)
গোসল যেন পর্যাপ্ত হয়, তবে অতিরিক্ত না হয়। গোসলের প্রক্রিয়ার মেয়াদ যেন স্বল্পকালীন হয় এবং পানি যেন অতিরিক্ত গরম না থাকে। হালকা তৈলাক্ত সাবান আলতোভাবে ব্যবহার করা উচিত, যেমন বগল ও রানের কুচকিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিটারজেন্ট ও ক্ষার জাতীয় সাবানের পরিবর্তে তৈলাক্ত সাবান ব্যবহার করতে হবে। সাবানের বিকল্প হিসেবে হালকা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গোসলের বিকল্প করলে শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হবে। তাই এ হিসেবে এটা প্রয়োজন নেই।
গোসলের পরে ত্বকে তেল, ক্রিম অথবা মলম ব্যবহার করতে হবে লোশন ব্যবহার যদিও আরামদায়ক, তবে ত্বককে শুষ্কমুক্ত বা তৈলাক্ত রাখতে পর্যাপ্ত নয়।
প্রয়োজনানুযায়ী শুষ্ক ত্বককেও তেল, ক্রিম বা মলম ব্যবহারে তৈলাক্ত রাখতে হবে এবং সেটা দৈনিক এক বা দু’বার ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে মুখের ত্বকের জন্য প্রতিবারেই মলম ব্যবহার করা উচিত।
(খ) লাইনিং ছাড়া উল এবং পলিস্টার কাপড় বর্জন করা উচিত। কারণ এগুলো রুক্ষ এবং শরীরের ত্বকের জন্য উত্তেজক এবং চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে, বাচ্চাদের উল এলার্জি রয়েছে। সুতি কাপড়-চোপড় সবেচেয়ে কম উত্তেজক।
যাদের ধুলোবালি, পদার্থ, অতিরিক্ত পানির ব্যবহারের সংস্পর্শে ত্বককে থাকতে হয়, তাদের সম্ভব হলে সে সকল পেশা বর্জন করা উচিত। গ্লাভস ব্যবহারে কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতে ঘামের সৃষ্টি হতে পারে এবং সেটা ত্বকের জন্য আরো উত্তেজক হিসেবে কাজ করতে পারে।
(ঘ) গরম, আর্দ্র আবহাওয়া যদি শরীরের গরমজনিত র্যাশ দেখা দেয় যা কিনা শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ এপটিক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে ঘন মলম ব্যবহারেও হিট র্যাশের সৃষ্টি করতে পারে।
একজিমার স্থানীয় চিকিৎসা : স্টেরয়েড মলমের স্থানীয় ব্যবহারই হচ্ছে চিকিৎসার প্রধান অবলম্বন। যদি একজিমা তাৎক্ষণিক মারাত্মক হয় এবং ত্বক চুলকাতে চুলকাতে মোটা ও কর্কশ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে অতিমাত্রার স্টেরয়েড মলম ব্যবহারে কখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করা উচিত নয় এবং স্বল্পকালীন ব্যবহারও নিরপদ।
হালকা মাত্রার একজিমার ক্ষেত্রে অথবা উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড ব্যবহারের পর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য হালকা মাত্রার স্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত।
টার মলম অথবা ঘন ক্রিম শুষ্ক একজিমার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। কারণ পাতলা হলে যেমন লোশন, সলিউশন ইত্যাদির ব্যবহার ত্বককে আরো শুষ্কতর করে তুলবে।
পুরাতন একজিমার ক্ষেত্রে শুধু টার মলম অথবা স্টেরয়েড মিশ্রিত টার মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি ইনফেকশন দেখা যায়, তাহলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। এন্টিবায়োটিক ওষুধ যদিও চুলকানি নিরোধক নয়, তথাপি চুলকানির অস্বস্তি কমাতে আরামদায়ক ও ঘুমের জন্য সহায়ক। বিশেষ করে যে সকল শিশু স্টেরয়েড মলম ব্যবহারে অস্বস্তিতে ভুগছে, তাদের জন্য উপকারী।
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা : রোগীর পিতা-মাতা এবং তার আত্মীয়-স্বজনের এ রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। যেমনÑ ত্বক যখন বিভিন্ন পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তাতে চুলকানি সৃষ্টি করে। ফলে ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়। যদি রোগীকে বোঝানো যায় যে, চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে চুলকানি বন্ধ করা- তাহলে রোগী স্বস্তি পাবে এবং কোন র্যাশ দেখা দেবে না।
তাছাড়া রোগীকে যদি বুঝানো যায়, বহু রোগই টেনশন ও দুশ্চিন্তায় বেড়ে যেতে পারে, তাই রোগীরা অপরাধ বোধ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে এবং বুঝতে পারবে যে, ¯œায়ুতন্ত্রের জন্য এপটিক একজিমা হচ্ছে না।
ডা. এম ফেরদৌস
চর্ম, যৌন ও কসমেটিক বিশেষজ্ঞ।
মোবাইল: ০১৭১৪৫২২৭৫২
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি