মাঙ্কি পক্স প্রতিরোধে সতর্কতা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ এএম
সম্প্রীতি এই ভাইরাসটি পাকিস্তানেও শনাক্ত হয়েছে। তাই মাঙ্কি পক্স নিয়ে আমাদের মনের মাঝে অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। গত দুই বছর ধরে মাঙ্কি পক্স নিয়ে সতর্কতা জারি করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই নতুন এই ভাইরাসটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাঙ্কি পক্স এর নতুন নাম এমপক্স। ১৯৫৮ এ প্রথম ডেনমার্কের বানরের মধ্যে এই ভাইরাস আবিস্কার হলেও ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে প্রথম মানুষ আক্রান্ত হয়। এযাবত ১২০ টি দেশে এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে, আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২২০ জনের। তবে এ বছর এই ভাইরাস কঙ্গো এবং আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু মানুষকে আক্রান্ত করেছে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন।
ভাইরাস এর পরিচয় ঃ-
মাঙ্কি পক্স গুটি বসন্ত গোত্রের একটি ভাইরাস। একসময় গুটি বসন্ত সারা পৃথিবীর জন্য ছিল বিভীষিকাময় একটি রোগ। সফল টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে গুটি বসন্ত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাসের গোত্রভুক্ত অনেক ভাইরাস এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান। তার মাঝে একটি হচ্ছে মাঙ্কি বক্স বা এমপক্স। এটি একটি বিরল প্রজাতির ভাইরাস। এটি পশু থেকে মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করেছে। এজন্য এ ভাইরাসকে বলা হয় জুনোটিক ভাইরাস।
ভাইরাসটি নতুন নয় মোটেও ঃ-
একদল গবেষক ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম গবেষণাগারের বানরের মধ্যে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে মানুষের দেহে এই রোগটি ধরা পড়ে। মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকায় এই রোগটির প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান। এই ভাইরাসটির দুটো ধরণ রয়েছে। একটি ক্ল্যাড ১ বা মধ্য আফ্রিকা (কঙ্গো) ধরণ আরেকটি ক্ল্যাড ২ বা পশ্চিম আফ্রিকা ধরণ। কঙ্গো ধরণটি সবচেয়ে মারাত্মক এবং বিস্তার ঘটে তুলনামূলক দ্রুততার সাথে। ২০২২ থেকে এখন পর্যন্ত মৃদু ধরনের ক্ল্যাড ২ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
রোগ লক্ষণ ও জটিলতা ঃ-
এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার এক থেকে দুই সপ্তাহ পর উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গগুলো হচ্ছে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো- জ্বর, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, সমস্ত শরীরে ব্যথা, পিঠে ব্যথা ইত্যাদি প্রাথমিক লক্ষণ। এর পাশাপাশি গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে অন্যতম প্রধান একটি লক্ষণ হচ্ছে পক্সের মত সমস্ত শরীরে পানিপূর্ণ দানা দেখতে পাওয়া ।
জ্বর হওয়ার তিন দিনের মাথায় সাধারণত ত্বকে শুরু হয় বড় বড় গুটি। প্রথমে মুখমন্ডলের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে সমস্ত শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এটি একসময় শুকিয়ে যায় এবং শরীর থেকে ঝরে পড়ে।
এই রোগের আরেকটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। শরীরের বিভিন্ন স্থানের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায় এই ভাইরাসটির আক্রমণে। এটিই কিন্তু এর পার্থক্য অন্য পক্স থেকে।
ভাইরাস দুষ্ট অসুখটি দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। কখনো এই ভাইরাসের আক্রমণে শরীর জুড়ে হাজার হাজার ছোট ছোট গুটির মতো তৈরি হতে পারে যা ত্বকের কার্যক্ষমতা বিকল করে দেয়। এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা ৪-৬ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। মৃত্যু হার আরো বেশি বিশেষত যাদের বয়স কম।
এই ভাইরাসের কারণে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হতে পারে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হওয়ার এই বিপর্যয়ের নাম হচ্ছে এনকেফালাইটিস। এছাড়া এই ভাইরাসের কারণে রক্ত সংক্রমিত হয়ে সেপসিস দেখা দেয়। এছাড়া এটি নিউমোনিয়া তৈরি করতে পারে। এই ভাইরাস কখনো কর্নিয়াকে আক্রমণ করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি রহিত হতে পারে।
কিভাবে বিস্তার লাভ করে মাঙ্কি পক্স ঃ-
রোগীর সংস্পর্শে দীর্ঘ সময় থাকলে এই রোগটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে পারে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও এই রোগটি ছড়াতে পারে। রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধরনের রসের মাধ্যমেও এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়াতে পারে এই ভাইরাসটি। যাদের একাধিক যৌনসঙ্গি বা অনিরাপদ যৌনসঙ্গি আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশী। আক্রান্ত মা থেকে তার গর্ভের বাচ্চা বা দুগ্ধ পোষ্য বাচ্চাতেও এটা সংক্রমিত হতে পারে। তবে আশার কথা হলো অবশ্যই এটি করোনা ভাইরাসের মতো সংক্রামক নয়।
চিকিৎসা ঃ-
যে কোনো সাধারণ ভাইরাসের মতো মাঙ্কি পক্সের চিকিৎসা একই। জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, সর্দি-কাশি ইত্যাদি সাথে থাকলে অবশ্যই এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হবে। রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার, পানীয় তরল সরবরাহ করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই রুগীকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
প্রতিরোধ ঃ-
আক্রান্ত মানুষদের ও তাদের ব্যাবহার্য সব জিনিস পৃথক রাখতে হবে ।
আক্রান্ত প্রাণী অথবা মানুষের সংস্পর্শে আসার পর অবশ্যই হাত উত্তম ভাবে ধৌত করতে হবে। সুরক্ষার জন্য মাস্ক, চশমা, গ্লাভস ইত্যাদি পরিধান করতে হবে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি যেমন হাঁচি কাশির শিস্টাচার মেনে চলতে হবে ।
মাঙ্কি পক্স করোনার মতো মহামারীর রূপ নেয়ার আশঙ্কা নেই। আর করোনার মত এই রোগটি সহজেই ছড়ায় না। এটি ছড়ানোর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময় রোগীর সংস্পর্শে থাকা। সুতরাং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার রোগ মাঙ্কি পক্স নয় মোটেও। সেজন্য ভয় বা আতঙ্কের কিছু নেই। তবে অবশ্যই আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যে কোন মূল্যে মেনে চলতে হবে। নয়তো ভয়ংকর বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন
শিশু বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
ও আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর -৬ ঢাকা।
হটলাইন : ১০৬৭২
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রূপগঞ্জে ফের হত্যা করতে সাংবাদিকের বসতঘরে সন্ত্রাসীদের গুলি
ভারত বাংলাদেশি কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ
'২০২৪ সালে শোবিজে শিরোনাম হয়েছেন টেইলর সুইফট, ওয়েসিস এবং শন ‘ডিডি’ কম্বস', এক নজরে দেখে নিন
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত
প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা
আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন
ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা
রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প
গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান
বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়
৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির
সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট
উইন্ডিজ শিবিরে নাহিদের জোড়া আঘাত
আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবির ফিন্যান্স বিভাগ
আগরতলা হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে সাদপন্থীদের মামলা