ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাদকে নিঃশেষ হচ্ছে পথশিশুরা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম

শহরের রাস্তায় ঠিকানাহীন ভাসমান শিশুদের দেখা যায়। দেশের বড় বড় শহরে তো বটেই, জেলাশহরেও এদের দেখা মেলে। পিতা-মাতাহীন, পরিচয়হীন শিশুরা উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে তাদের টোকাই বলা হয়। শহরাঞ্চলে এমন একদল শিশুর উদ্ভব হওয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই মর্যাদার নয়। পথশিশুরা মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় না; তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার। যদিও সরকার ও সামর্থ্যবানদের দায়িত্ব এদের দারিদ্র্য ঘোচানো। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও শহরের রাস্তায় এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা। লাঞ্ছনার শিকার এসব পথশিশু শুধু নিজেদেরই নিঃশেষ করে দিচ্ছে না; অনেকসময় বৃহত্তর সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

একটি গবেষণায় জানা যাচ্ছে, পথশিশুরা মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশব্যাপী পথশিশুদের ওপর ওই গবেষণা চালায়। এক হাজার ৬০০ পথশিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৯২৮ শিশু স্বীকার করেছে, তারা মাদক সেবন করে। আর নমুনার ৫৮ শতাংশ শিশু মাদকসেবী। ৫৩ শতাংশ বলেছে, তারা মাদক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সরাসরি মাদক কেনে। ১৪ শতাংশ বলেছে, ১০ বছর বয়স হওয়ার আগে থেকেই তারা মাদক গ্রহণ করছে। এদের মধ্যে আবার ৩৩৬ শিশু জানিয়েছে, তারা মাদকের বাহক হিসেবে কাজ করে। এসব তথ্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পথশিশুদের কিভাবে মাদক কারবারিরা ব্যবহার করছে। তারা শুধু পথশিশুদের ধ্বংস করছে না, তাদের সাহায্যে সমাজে মাদকও ছড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণাটির ফল প্রকাশ হয় ২০২১ সালে। জরিপকাল ছিল এর আগে। অথচ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এ সময়ে প্রায়ই মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সবচেয়ে বড় অভিযান চালানো হয়। এমনকি মাদক ব্যবসার অভিযোগে অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যারও শিকার হয়েছে। মাদকের মূল কারবারিদের যে স্পর্শ করা হয়নি তা নিশ্চিত। বরং নিরাপদে পথশিশুদের সর্বনাশ করছে। মাদক কারবারিরা জাতির বড় ধরনের ক্ষতি করছে।

জরিপে পথশিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ-অনিশ্চিত জীবন নিয়ে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, এদের ৫৫ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থ। ৬৪ শতাংশ নিজেকে পরিচালনার ক্ষমতা রাখে না। এরা আবার সস্তা এবং অপেক্ষাকৃত ক্ষতিকর মাদক গ্রহণ করে। ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। ১৫ দশমিক ২ শতাংশ ক্যান্ডি সেবন করে। এসব সেবনের আরো কারণ হচ্ছে, এমন মাদকে ক্ষুধামান্দ্য হয়। সোজা কথায় খাবার কেনার সামর্থ্য না থাকায় ক্ষুধার অভাব মাদক দিয়ে মেটাচ্ছে। আরেকটি কারণ, নিজেদের লাঞ্ছিত জীবন ভুলে থাকতে মাদক সেবন করছে।

মাদক নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে পথশিশুদের ওপর জরিপটি হয়েছে। তাদের সার্বিক জীবন সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে এটি করা হয়নি। তবে শহরের রাস্তায় প্রতিদিন আমরা এদের দেখে থাকি। দেশের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি করা হচ্ছে। মাথাপিছু আয় গণনা করা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার ডলার। পথশিশুদের ভাগ্য কোথায় সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। একটি পথশিশুর খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা-বাসস্থানের জন্য তিন হাজার ডলারের প্রয়োজন নেই। সামান্য অর্থ ব্যয় করে এর আয়োজন করা যায়। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পথশিশুদের পুনর্বাসন চলছে। তা যে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এটি রাস্তায় পথশিশুদের সংখ্যা দেখেই বোঝা যায়। আমরা কোনোভাবে এসব শিশুকে লাঞ্ছনার জীবনে ফেলে রাখতে পারি না। তাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হলে বোঝা যাবে আরো বিস্তারিত তথ্য। সরকার ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এমন একটি গবেষণা হওয়া সময়ের দাবি। তারপর এদের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যেন একটি শিশুও হেলায় হারিয়ে না যায়। এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।

মো: লোকমান হেকিম
গবেষক ও কলামিস্ট, মোবাইর- ০১৭১৬-২৭০১২০


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এইডস সম্পর্কে জানুন ও সচেতন হোন
মুখে ক্যান্সার ও দাঁত তোলা
প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন
ডেঙ্গুজ্বর বেড়েই চলেছে
বার্ধক্য ও নিঃসঙ্গতা
আরও

আরও পড়ুন

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে  চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন