শিশুর কৃমির সমস্যায় করণীয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

কৃমি একটি ক্ষতিকর পরজীবী যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। আমাদের অন্ত্রে কোটি কোটি উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে, কিন্তু এই কৃমি ক্ষতি ছাড়া কিছুই করে না। আরো ভঙ্ককর ব্যাপার- এরা অন্ত্র থেকে প্রায়ই রক্তের মাধ্যমে যকৃত, ফুসফুস এমনকি মস্তিস্কে চলে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই আমাদের শিশুদের জটিল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো কৃমির সমস্যা। শিশুদের পুষ্টিহীনতার জন্য কৃমি অনেকাংশে দায়ী। বিভিন্ন কারণে শিশুর কৃমির সমস্যা হতে পারে, যেমন- নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির অভাব, অপরিচ্ছন্নতা, খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার না করা ও খালি পায়ে হাঁটা ইত্যাদি। এর জন্য প্রতিবছর সরকারিভাবে আমাদের দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।

শিশুর কৃমি সমস্যার কারণে রক্তশূন্যতা, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, তাদের বেড়ে ওঠা এবং সুস্বাস্থ্য ব্যাহত হয়। যেভাবে বুঝবেন কৃমির সংক্রমণ- কৃমি শিশুদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তথা রোগের কারণ হয়ে থাকে। শিশুদের কৃমির প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে : আয়রনের ঘাটতি, খাওয়ার অরুচি, রক্তশূন্যতার জন্য দুর্বলতা, পেট ফাঁপা, অপুষ্টিতে ভোগা ও ডায়রিয়া। কৃমির কারণে চুলকানি, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এমনকি কাশিও হতে পারে। এ ছাড়া এক ধরনের কৃমি বিশেষ করে গোলকৃমি পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় ও অ্যাপেনডিক্সে অবস্থান নিয়ে সংক্রমণ ঘটায় ও তীব্র ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে। শরীরের নানা অঙ্গে কৃমি মরে গিয়ে স্টোন জমার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। কিছু কৃমি লিভারেরও ক্ষতি করে। চোখের ক্ষতি করে লোয়া লোয়া।

কৃমির কারণে শরীরে ভিটামিন ‘এ’ কম শোষিত হয়, ফলে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন; ত্বক, অন্ত্রের অ্যাপিথেলিয়াম ও চোখের ক্ষতি হয়। প্রচুরসংখ্যক কৃমি একসঙ্গে জমাট বেঁধে অন্ত্রের নালি বন্ধ করে দিতে পারে।

কৃমি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা- অনেকের ধারণা, পেটে ২-১টা কৃমি থাকা ভালো। এ ধারণাটি মোটেই ঠিক নয়। কৃমি শরীরের কোনো উপকার করে না বরং ক্ষতিই করে। কৃমি হজমে সাহায্য করে বলে মনে করেন অনেকে। এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা। কৃমি হজমে সাহায্য না করে উল্টো বদহজম, অজীর্ণ, ক্ষুধামন্দা ও পেটের পীড়ার সৃষ্টি করে। মিষ্টি খেলে কৃমি হয় এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে কৃমি হওয়ার ব্যাপারটি কোনোভাবেই যুক্ত নয়। নোংরা, ময়লা পরিবেশ, স্যাঁতসেঁতে মাটি হচ্ছে কৃমির জন্য আরামপ্রদ আবাসস্থল, যেখানে কৃমির ডিম ও বাচ্চা থাকে। সেসব নোংরা স্থানে চলাফেরা করলে কৃমি পায়ের তালু ভেদ করে শরীরে ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া নোংরা স্থানের মাটি ও ময়লা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অসাবধানতা ও অপরিচ্ছন্নতার সুযোগে তা নখ দিয়ে শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া নোংরা পানিতেও কৃমির ডিম বা বাচ্চা থাকতে পারে। দূষিত পানি পান করার কারণেও কৃমি শরীরে ঢুকে পড়ে।

শিশুর কৃমি রোগ প্রতিরোধে করণীয়- ১. সব সময় পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকতে হবে। ২. জন্মের পর প্রথম পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ সময় অন্য কোনো খাবার বা পানীয়ের প্রয়োজন নেই। ৩. পাঁচ মাস বয়স হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্য খাবারাদি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করে শিশুদের খেতে দেওয়া। ৪. খাবার তৈরির আগে এবং খাবার দেওয়ার পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ৫. খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে পরিষ্কার পাত্রে রাখতে হবে। ৬. সব সময় কাঁচা ফলমূল খাওয়ার আগে তা পরিষ্কার করে খাওয়া শিখাতে হবে। ৭. পরিষ্কার ও নিরাপদ পানির ব্যবহার- খাবার ধোয়া, মোছা, রান্না ইত্যাদি কাজে ব্যবহার ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কখনোই দূষিত পানি ব্যবহার করা যাবে না। ৮. পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে মলত্যাগের পর, খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ৯. স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে। ১০. নিয়মিত পায়খানা ব্যবহারের পর হাত-পা পরিষ্কার করে নিতে হবে। ১১. খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ১২. ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ১৩. হাতের নখ নিয়মিত কেটে ছোট রাখতে হবে। নেইলপলিশ দেয়ার জন্য লম্বা করে রাখা নখ কৃমি ডিমের নিরাপদ স্থল। ১৪. চিনি, গুঁড়, মিছরি, মিষ্টি খাবারের সাথে কৃমি সংক্রমণের সম্পর্ক নেই; বরং হালের বারবিকিউ, রেস্টুরেন্টের বাসি সস, পিজ্জা, বার্গার, হটডগ প্রভৃতি খাবারে কৃমির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।

চিকিৎসা : দু’বছর পর থেকে সবার জন্য কৃমির ওষুধের ডোজ একই, অর্থাৎ আপনি যে পরিমাণ ওষুধ খাবেন, আপনার আড়াই বছরের শিশুও একই পরিমাণ ওষুধ খাবে। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। বাড়ির সবার একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খাওয়া উচিত, এতে কৃমি থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। সুস্থ মানুষ বা শিশুরা যদি তিন থেকে পাঁচ মাস পর পর কৃমির ওষুধ খান, তবে কোনো ক্ষতি হয় না। আজকাল দুই বছরের কম বয়সের শিশুদেরও কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যায়। তবে তার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল-০১৭১৬-২৭০১২০।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ডায়বেটিস রোগীদের ঘা বা ক্ষত দেখা দিলে করণীয়
স্বাস্থ্য সেবায় ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
শরীর থেকে পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাত অবিশ্বাস্যভাবে জোড়া লাগালো চীনের চিকিৎসকরা!
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ক্ষত: হালকা থেকে গ্যাংগ্রিন পর্যন্ত হতে পারে
মাছ রক্ত,স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
আরও
X
  

আরও পড়ুন

গাজায় যুদ্ধ আরও বিস্তৃত করতে লাখো রিজার্ভ সৈন্য ডাকছে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধ আরও বিস্তৃত করতে লাখো রিজার্ভ সৈন্য ডাকছে ইসরায়েল

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে এনসিপির, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে এনসিপির, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় আটক ২

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় আটক ২

সাবেক মন্ত্রী-এমপি-মেয়র সহ যারা হলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে হামলা ঘটনা মামলার আসামী

সাবেক মন্ত্রী-এমপি-মেয়র সহ যারা হলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে হামলা ঘটনা মামলার আসামী

হাসিনার কুশপুত্তলিকার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই

হাসিনার কুশপুত্তলিকার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই

রাস্তায় যানজট সৃষ্টির দায়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

রাস্তায় যানজট সৃষ্টির দায়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

গুজব ও অপতথ্য মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে তথ্য কর্মকর্তাদের

গুজব ও অপতথ্য মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে তথ্য কর্মকর্তাদের

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে এবি পার্টির শোক প্রকাশ

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে এবি পার্টির শোক প্রকাশ

২০২৫ অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকে ভিসা’র ৯ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন

২০২৫ অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকে ভিসা’র ৯ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন

গাজীপুরে মসজিদের খতিব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সমাবেশ

গাজীপুরে মসজিদের খতিব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সমাবেশ

কৃষি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধানতম হাতিয়ার- ড. মোশাররফ

কৃষি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধানতম হাতিয়ার- ড. মোশাররফ

মিজানুর রহমান সোহেলের ‘জিরো টাকায় বিজনেস’ বইয়ের প্রি-অর্ডার শুরু

মিজানুর রহমান সোহেলের ‘জিরো টাকায় বিজনেস’ বইয়ের প্রি-অর্ডার শুরু

মাকে নিয়ে তারকা মেহজাবীনের সাথে ফাইভ স্টারে ডিনারের সুযোগ বিকাশ-এ

মাকে নিয়ে তারকা মেহজাবীনের সাথে ফাইভ স্টারে ডিনারের সুযোগ বিকাশ-এ

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতির শোক

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতির শোক

সড়ক দুর্ঘটনায়  চাটমোহরের মাদ্রাসা সুপারের মৃত্যু

সড়ক দুর্ঘটনায়  চাটমোহরের মাদ্রাসা সুপারের মৃত্যু

রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এখন ইউনুস ট্রেড সেন্টারে

রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এখন ইউনুস ট্রেড সেন্টারে

বীভৎস অবতারে ধরা দিলেন মোশাররফ করিম

বীভৎস অবতারে ধরা দিলেন মোশাররফ করিম

চট্টগ্রাম ‘ফিটনেস সাগা’ উদ্বোধন

চট্টগ্রাম ‘ফিটনেস সাগা’ উদ্বোধন

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

আওয়ামী লীগ ঘাতক ও সন্ত্রাসী দল

আওয়ামী লীগ ঘাতক ও সন্ত্রাসী দল