ডায়াবেটিস রোগীর হজ্জ পালন
১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ এএম

আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে এবারের হজ্জ যাত্রা। হজ্জ মুসলমানদের পঞ্চম ধর্মীয় ভিত। যাদের আর্থিক সংগতি আছে, তাদের জন্যে একবার এটি পালন বাধ্যতামূলক বা ফরজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান সৌদি আরবে হজ্জ পালন করতে যান।
হজ্জ একটি শ্রম-সাধ্য আচার। শারীরিক ভাবে সক্ষম যুবক-যুবতীদের বেলায় হজ্জ সপম্পাদন করতে খুব বেশি কষ্টকর না হলেও বয়স্কদের বেলায় যথেষ্ট কঠিন হজ্জব্রত পালন। ডায়াবেটিসের রোগী, বিশেষত যাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয়, তারা হজ্জের সময় হরহামেশাই নানাবিধ বাড়তি স্বাস্থ্য সমস্যায় পরে থাকেন। হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে থাকাকালীন সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখা যায়। একটি গবেষণাণায় দেখা গেছে, ২৭.৪% হাজির রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি। এ সময় খেজুর এবং মিষ্টি ও ভাজা খাবারের মতো উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবার অত্যধিক খাওয়ার কারণেই এমনটা হয়।
পুষ্টি-ভিত্তিক জ্ঞান- হজের সময় যেমন খেজুর, ভেড়ার মাংস, বাকলাভা, বাসবউসা, বাদাম ইত্যাদির ক্যালরি বিষয়ক শিক্ষা থাকতে হবে। ইনসুলিনের ব্যবহারের সক্ষমতা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিরীক্ষণ সম্পর্কিত শিক্ষা এবং দৈনিক ক্যালোরি খরচ সংক্রান্ত জ্ঞান এসময়ে খুবই জরুরী।
হজের জন্য প্রস্তুত করা জিনিসপত্রের চেকলিস্ট:
রক্তের গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস,
ব্যান্ড এইড এবং গ্লুকোমিটারের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি এবং সমস্ত ওষুধের পর্যাপ্ত সংগ্রহ।
ইনসুলিন সংরক্ষণের উপযোগী ফ্লাস্ক
ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি এবং মেডিকেল রেকর্ডের একটি অনুলিপি, যা সর্বদা সাথে বহন করা প্রয়োজন
চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়
মুখোশ, ছাতা, ভালো ফিটিং জুতা, সুতির মোজা এবং নন-সেন্টেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার
হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় খাবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করার জন্য শিক্ষা
হজের সময়ের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে হজ্জ যাত্রার আগে তৈরি করা ডায়েট চার্ট বহন করতেে হবে।
রৗদ্র- সুরক্ষাজ্ঞান এবং পর্যাপ্ত হাইড্রেশন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া:
বাড়তি কার্যকলাপ এবং হজ্জ কালীন খাবারের নিয়ম মেনে না চলার কারণে, ডায়াবেটিসের সব রোগী হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায়, হজে প্রায় ৩৭% ডায়াবেটিস রোগী হাইপোগ্লাইসেমিক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে; অপর ১৪.৯% এবং ১২.৫% রুগীর ক্লান্তি এবং মাথাব্যথাও ছিল। এই ধরনের রোগীরা প্রায়ই এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করে হজ্জের কার্যক্রম চালাতে চান।
হজ্জের সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমানোর সুপারিশ:
মুখে খাবার ডায়াবেটিসের ওষুধ, যেমন সালফোনাইলুরিয়াস, হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উচ্চ ঝুঁকির সাথে যুক্ত। হজ্জ যাত্রার সময় প্রয়োজন হলে রোগীর জন্য ডোজ কমানোর পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
ইনসুলিন গ্রহীতা রোগীরা হাইপোগ্লাইসেমিইয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকেন, তাই, রোগীর গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনের মাত্রার উপর নির্ভর করে ইনসুলিনের ডোজ হ্রাস করা যেতে পারে।
এনালগ ইনসুলিনের জন্য, যেমন ডিগ্লুডেক, গ্লারজিন এবং ডেটেমির ডোজ পরিবর্তন হতে পারে না।
পায়ের জটিলতা:
হাজীদের প্রায় ১৫% ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে ভুগেন, যা পায়ের ক্ষত বা ঘা হবার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের আলসার হজ্জীদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহনের সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে একটি। অনেকক্ষেত্রে কারও কারও অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে। হাঁটতে গিয়ে প্রায় ৩১% হজ্জ যাত্রীর পায়ে ফোসকা হয়ে যায়, অন্য ২৫% রুগীর পা ফুলে যায়। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে মাটির উচ্চ তাপমাত্রার কারণে পা পুড়ে যাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি, যা পরে পায়ের আলসারের কারণ হয়।
হজ্জের সময় পায়ের যতেœ করণীয়:
হাঁটার সময় ফাটল এবং ফাটল রোধ করতে রোগীকে প্রতিদিন দুবার ব্যবহার করার জন্য একটি ভাল মানের অ-গন্ধযুক্ত ময়েশ্চারাইজার সুপারিশ করা উচিত।
দৈনিক পা পরীক্ষা করা আবশ্যক এবং গরম পানিতে পা ডুবানো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
যাতায়াত ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে হলে, মোটর চালিত যান বা হুইল-চেয়ার ব্যবহার করা নিরাপদ।
মসজিদের মধ্যে কার্যকলাপের জন্য, জুতা নিষিদ্ধ এলাকায় প্যাডেড মোজা ব্যবহার করা আবশ্যক; খালি পায়ে হাঁটা উচিৎ নয়।
হাঁটার সময় হালকা ওজনের, পায়ের গোড়ালি এবং বলের প্যাডিং সহ নরম প্যাডেড জুতা পছন্দ করা উচিত।
পা শুকানো রাখা উচিৎ এবং ওজু করার পর সুতির তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
প্রদাহ এবং সংক্রমণে হলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে দেরি করা উচিত না।
পায়ের কোথাও ফোস্কা দেখা দিলে, পা শুষ্ক রাখা উচিত এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য যথাযথ পা স্বাস্থ্যবিধি গ্রহণ করা উচিত।
হজ্জের সময় কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার প্রকাশ কমাতে, হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ করা এবং শারীরিক পরিশ্রম সীমিত রাখা উচিত।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ডিহাইড্রেশন হতে দেয়া যাবে না।
হজ্জ যাত্রা শুরু করার আগে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং রক্ত চাপ এবং রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা উভয়ই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
চোখের রোগ:
ডায়াবেটিসওয়ালা হজযাত্রীদের মধ্যে, ২৪% ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত। পড়ে যাওয়া এড়াতে ভাল চশমা নিতে হবে। চোখ স্পর্স করা যাবে না।
প্রাক-হজ্জ ব্যবস্থাপনা:
আহারের আগে এবং পরে এবং গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি অবশ্যই ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে ওষুধ ঠিক করে নিতে হবে।
হজ্জের সময় খাদ্য ব্যবস্থাপনা-
নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি খাবারের মধ্যবর্তী স্ন্যাকসকে উৎসাহিত করতে হবে। অনিয়মিত খাবারের ক্ষেত্রে, রোগীদের বাদাম, ফল এবং
দুগ্ধজাত দ্রব্য খাদ্য গ্রহণ করতে বলা যায়, যা মক্কায় সহজলভ্য।
এক থেকে দু’টি খেজুর খেতে পারে। তাওয়াফের আগে প্রয়োজনে জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, এগুলি মসজিদের ভিতরে বহন করা যায়।
হজ্জের সময় অন্যান্য ব্যবস্থাপনা :
যাত্রার আগেই রোগীকে বিভিন্ন স্থানে ডেডিকেটেড স্থানীয় স্বাস্থ্য সুবিধার যোগাযোগের বিবরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করার সময়, চলমান চিকিৎসার বিবরণ সাথে রাখতে হবে যা হজ্জ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে।
হজ্জ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা:
হজ্জ সফলভাবে সম্পন্ন করার পরে রোগীদের অবশ্যই আবারও চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
রোগীদের পায়ের পরীক্ষা সহ একটি সম্পূর্ণ ক্লিনিকাল এবং জৈব রাসায়নিক মূল্যায়ন করা উচিত। এইগুলো দেশে পৌঁছানোর ১০-১৪ দিন পরে করা হয় যাতে বিপাকীয় পরিস্থিতির আরও সঠিক প্রতিফলন হয়।
ধজটিলতাযুক্ত রোগীদের অতিরিক্ত হলÑ রেটিনার পরীক্ষা, যা অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে করতে হবে।
ধসামগ্রিকভাবে, ডায়াবেটিস রোগীদের হজ্জ যাত্রার আগে, পরে এবং চলাকালীন তাদের কার্যকলাপের মাত্রার পরিবর্তন এবং আশেপাশের অপরিচিততা থেকে উদ্ভূত গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া এবং/অথবা পায়ের জটিলতা প্রতিরোধ করার জন্য তাদের সাবধানতা গ্রহণ করতে হবে। ভাল পরিকল্পনা এবং চিকিৎসকের সাথে প্রাক-ভ্রমণ পরামর্শ বড় স্বাস্থ্য জটিলতা ছাড়াই একটি নিরাপদ হজ্জ যাত্রা করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে। হজ্জ সম্পাদন করে বাডিতে ফিরে আসার পরে দ্রুত হরমোন বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে।
হ ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

গাজায় যুদ্ধ আরও বিস্তৃত করতে লাখো রিজার্ভ সৈন্য ডাকছে ইসরায়েল

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে এনসিপির, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় আটক ২

সাবেক মন্ত্রী-এমপি-মেয়র সহ যারা হলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে হামলা ঘটনা মামলার আসামী

হাসিনার কুশপুত্তলিকার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই

রাস্তায় যানজট সৃষ্টির দায়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

গুজব ও অপতথ্য মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে তথ্য কর্মকর্তাদের

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে এবি পার্টির শোক প্রকাশ

২০২৫ অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকে ভিসা’র ৯ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন

গাজীপুরে মসজিদের খতিব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সমাবেশ

কৃষি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধানতম হাতিয়ার- ড. মোশাররফ

মিজানুর রহমান সোহেলের ‘জিরো টাকায় বিজনেস’ বইয়ের প্রি-অর্ডার শুরু

মাকে নিয়ে তারকা মেহজাবীনের সাথে ফাইভ স্টারে ডিনারের সুযোগ বিকাশ-এ

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতির শোক

সড়ক দুর্ঘটনায় চাটমোহরের মাদ্রাসা সুপারের মৃত্যু

রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এখন ইউনুস ট্রেড সেন্টারে

বীভৎস অবতারে ধরা দিলেন মোশাররফ করিম

চট্টগ্রাম ‘ফিটনেস সাগা’ উদ্বোধন

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

আওয়ামী লীগ ঘাতক ও সন্ত্রাসী দল