কিটোজেনিক ডায়েটের ভালো-মন্দ
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম
কিটোজেনিক ডায়েট বলতে বুঝায় লো কার্ব, হাই ফ্যাট ডায়েট। এর অর্থ হলো আপনি ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে বেশী ক্যালরি বার্ণ করবেন এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে কম ক্যালরি নিবেন। কার্বোহাইড্রেট বা কার্ব জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে যা হজম করা সহজ যেমন সুগার, সোডা, প্যাস্ট্রি এবং সাদা রুটি। যখন আপনি দিনে ৫০ গ্রামের চেয়ে কম কার্ব খাবেন তখন আপনার শরীর থেকে ফুয়েল অর্থাৎ সুগার শেষ হয়ে যায়। এটা হতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। এর পর আপনার শরীর থেকে প্রোটিন ও ফ্যাট ভাঙ্গতে শুরু করবে শক্তির জন্য, যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এই খাবার শরীরে কিটোন বডির পরিমান বাড়িয়ে দেয়, এই বিষয়টি কিটোসিস নামে পরিচিত।
কিটোজেনিক ডায়েটের কার্যকারিতাঃ সাধারন মানুষ কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করে ওজন কমানোর জন্য কিন্তু এটি কিছু মেডিকেল সমস্যা সমাধান করতে ব্যাবহার করা হয়। যেমন খুব খারাপ অবস্থার এপিলেপসি বা মৃগি রোগের সমাধানে সহায়তা করতে পারে। কিটোসিস হৃদরোগী, কিছু ব্রেনের রোগে এবং একনি বা ব্রনের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনাকে এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে এজন্য যে কিটোজেনিক ডায়েট আপনার জন্য নিরাপদ কিনা? বিশেষ করে আপনার যদি টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে কিটোসিস সম্পর্কে অবশ্যই ভাবতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিটোজেনিক ডায়েট আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অন্যান্য খাবারের চেয়ে। এর কারণ হতে পারে এটি অধিক ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে ফ্যাটকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করতে। এমনও হতে পারে অধিক প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে তৃপ্তি দেয় এবং এর ফলে আপনি কম খান। কিন্তু এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
ইনসুলিন এমন একটি হরমোন যা শরীরকে সুগার জ¦ালানী বা ফুয়েল হিসাবে ব্যবহার করতে দেয় বা সুগারকে স্টোর বা সঞ্চয় করে রাখে। কিটোজেনিক ডায়েট সেই ফুয়েল বা জ¦ালানীগুলো বার্ন বা শেষ হতে দ্রæত সাহায্য করে। এর অর্থ হলো আপনার শরীরের কম ইনসুলিন দরকার বা আপনার শরীর কম ইনসুলিন তৈরী করে। এই লোয়ার লেভেল বা পরিমান কিছু ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে অথবা ক্যান্সার কোষের গতিকে ধীর করে। ফ্যাট সমৃদ্ধ একটি খাবার যা ভালো কোলস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে এবং খারাপ কোলস্টেরল কমিয়ে দিতে পারে। উদাহরন স্বরুপ ডিম এর কথা বলা যায়। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে আপনার ভালো কোলস্টেরল বৃদ্ধি পাবে এবং খারাপ কোলস্টেরল এর পরিমান কমিয়ে দিবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার কিটোজেনিক ডায়েট এর সাথে সম্পৃক্ত। ইনসুলিন এর লোয়ার লেভেল বা পরিমান যা কিটোজেনিক ডায়েট থেকে সৃষ্ট সেটি আপনার শরীরকে অধিক কোলস্টেরল তৈরীতে বাধা দেয়। এর অর্থ হলো আপনার উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর এবং আর্টারীতে বøক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের সাথে চর্মের যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং কার্বোহাইড্রেট কম খেলে আপনি উপকৃত হতে পারেন। ইনসুলিন আপনার শরীর থেকে অন্যান্য হরমোন তৈরীতে প্রনোদনা দিতে পারে যা ব্রনের সৃষ্টি করতে পারে। তাই কিটোজেনিক ডায়েট খাবারের ফলে ইনসুলিন এর মাত্রা কমে যাওয়া একনি বা ব্রন বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখতে পারে।
কিটোসিস এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ লো কার্ব ডায়েট আপনার সুগারকে কমিয়ে রাখতে পারে অন্যান্য খাবারের চেয়ে। কিন্তু আপনার শরীর ফ্যাট জাতীয় খাবার বার্ন বা ভেঙ্গে ফেলে শক্তির জন্য। তখন এটি কিটোসিস কম্পাউন্ড তৈরী করে। যদি আপনার টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে তাহলে বেশি কিটোন আপনাকে অসুস্থ করতে পারে। তাই ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে।
অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণঃ কিটোজেনিক খাবার মৃগি রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া কিটোজেনিক ডায়েট অ্যালজাইমারস ডিজিজ, পারকিনসনস্ ডিজিজ এবং ঘুমের সমস্যায় সাহায্য করে। যখন আপনার শরীর ফ্যাট থেকে শক্তি উৎপাদন করে তখন আপনার শরীরের কিটোন ব্রেন সেল বা কোষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। ইনসুলিন এর উচ্চ মাত্রার কারণে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। কিটোজেনিক ডায়েট ইনসুলিন এর পরিমান কমায় যা আমরা তৈরী করি বা প্রয়োজন হয়। এর ফলে কিটোজেনিক ডায়েট পরোক্ষভাবে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর সুস্থতার জন্য কাজ করে থাকে।
একটি কথা সবার মনে রাখতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ এবং পুরোপুরি জ্ঞান না থাকলে অথবা আপনি বিষয়টি সম্পর্কে জানলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো পদ্ধতি অনুসরণ অথবা ঔষধ সেবন করবেন না। যারা কিডনি রোগী তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার এর মাত্রা নির্দিষ্ট পরিমানে খেতে হয়। কিডনি রোগীরা চাইলেই অনিয়ন্ত্রিত পরিমান প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন না। তাই তাদের ক্ষেত্রে কিটোজেনিক ডায়েটের পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। যাদের হার্টে বøক রয়েছে অথবা যারা করোনারী হৃদরোগী তাদের ক্ষেত্রেও মন চাইলে সব ধরনের ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যায় না। তাই হার্ট এবং কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে কিটোজেনিক ডায়েট সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্কতা অলম্বন করতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিক ফ্যাট ও প্রোটিন জাতীয় খাবার শরীরের কি কি পরিবর্তন করছে, কি কি খারাপ পরিবেশ তৈরী করছে তা না জেনে চালিয়ে যেতে থাকলে যে কোন সময় দূর্ঘটনার সম্ভবনা আছে। তাই খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শমত তা গ্রহণ করতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, কিটো ডায়েট শুরু করার আগে এবং চলাকালীন শরীরের কি কি পরিবর্তন হচ্ছে বা হতে পারে তা ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। প্রয়োজনে প্রোটিন ফ্যাটের ধরন ও পরিমান বদল করতে হবে। তাতে করে শরীরের উপর কোন খারাপ প্রভাব পরার আগেই তা রহিত করা যাবে।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় ৫২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু
‘হাউ ইজ দ্য জোশ’! শপথের আগেই চুলে নতুন ছাঁট ট্রাম্পের
কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন
মুনাফাই লক্ষ্য! পরিবর্তনের হাওয়া ওপেনএআই-এ
সদর ইউপি চেয়ারম্যানের শোক সভা ও দোয়া মাহফিল
কেরানীগঞ্জ রূপালী ব্যাংকে ডাকাত, পুলিশের ঘেরাও
দৌলতপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসুনাল আলম এর মোবাইল কোট পরিচালনা
গারো পাহাড় সীমান্তে ভারতীয় মদসহ এক কারবারি গ্রেপ্তার
সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে সহযোগীতা চাই- -জেলা প্রশাসক
কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক নির্বাচন মঈনুল সভাপতি, হারুন সম্পাদক
কালিয়াকৈরে ড্রাম ট্রাকের চাপায় নারী পথচারী নিহত
সরকার বেক্সিমকো গ্রুপকে আর টাকা দেবে না : অর্থ উপদেষ্টা
ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
টঙ্গীতে সাদ পন্থিদের হামলায় নিহতদের বিচারের দাবিতে উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল
ইজতেমা যথাসময়ে হবে, সহিংসতাকারীদের ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দৌলতপুরে পৃথক সংঘর্ষ ও হামলায় আহত-২
কুষ্টিয়ায় চালের বাজার ১০-১২ টাকা বেড়ে চালের দাম কমলো মাত্র ১ টাকা
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
রিয়ালের সফলতম কোচ হয়ে উচ্ছ্বসিত আনচেলত্তি
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে এক যুবক নিহত