নানান অনিয়ম আর দূর্ণীতির যাতাকলে পিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল। অনিয়ম আর দূর্ণীতির কারণে গত এক দশকের বেশী সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
যদি হাসিপাতালটি বর্তমানে ৭৫০ শয্যা থেকে নামিয়ে ৫০০ শয্যা করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা চালুর পর থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রোগীরা কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বিঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাবে রোগী দেখা হলেও পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি গত এক বছরের অধিক সময়ে। কবে নাগাদ পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা সম্ভব হবে সেই বিষয়েও কোন তথ্য নেই কারো কাছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকরা রোগী দেখার পর যে সকল ওষুধ লিখছেন তার অধিকাংশই কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসী থেকে।
সেই সাথে ইসিজি ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষাও বাইরে থেকে টাকা দিয়ে করতে হচ্ছে। অথচ এই সমস্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করলেও গ্রহণ করা হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। যার ফলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়ছেন বিপাকে। এই বিষয়ে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হলে তারা জানান, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসাপাতালের বর্হিবিভাগের টিকিটের মূল্য ৫ টাকা হলেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তা ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে সরকারী ওষুধও ঠিকঠাক মত হাসপাতালের তরফ থেকে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অধিকাংশ সেবা প্রত্যাশী। সেবা প্রত্যাশীরা অভিযোগ করে বলেন, এক্সরে সহ অধিকাংশ পরীক্ষা ফ্রি করার কথা থাকলে এখানে ইসিজি ছাড়া অন্য কোন পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যার ফলে বাধ্য হয়েই বাইরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
এছাড়াও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হাসাপাতাল থেকে ওষুধ উত্তোলন করে তা বাইরের ওষুধের দোকান গুলোতে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকেদিন আগে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কর্মচারী জুঁথিকে দেখা যায় নিয়ম বর্হিভূতভাবে হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে দুইটি চিরকুটের মাধ্যমে বিপুল পরিমানে ওষুধ উত্তোলন করতে এবং চিরকুটের পিছনের অংশে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্টার ডাঃ সুমাইয়া শারমিন মিম এর স্বাক্ষর রয়েছে। যদিও মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের কর্মকর্তা দাবী করেছেন ঐ নারী কর্মচারী পরবর্তিতে ওষুধ ফার্মেসীতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যদিও সাংবাদিকদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সরে পড়েন অভিযুক্ত জুঁথি। পরবর্তিতে তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে ফোন কেটে দেন।
সরকারীভাবে কি কি ওষুধ ফ্রি দেওয়ার নির্দেশনা আছে, সেই বিষয়ে কোন তথ্য জানেননা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মেসী ইনচার্জ মো. মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্যারেরা আমাদের যে নির্দেশনা দেন আমরা সেই মোতাবেক পালন করি। শিশু বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাজিয়া সুলতানা জানান, অতিরিক্ত ওষুধ নিতে হলে পরিচালক অথবা সিনিয়র কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর লাগে। আমরা রোগী দেখার পর যে সকল ওষুধের সরকারী সাপ্লাই থাকে সেই গুলো টিক দিয়ে দেই। তবে কিভাবে চিরকুটের মাধ্যমে ওষুধ নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে তিনি জানেনা বলে দাবী করেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ মো. মঈন উদ্দীন বলেন, সবে চালু হয়েছে, কিছু লিমিটেশন আছে। এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই মেশিন আছে কিন্তু চালু হয়নি।
প্যাথলজির জন্য টেকনিশিয়ান আছে, কিন্তু ঐটাও এখনও চালু করতে পারিনি। কারণ আমাদের আউটসোর্সিং জনবলের অভাব রয়েছে। বর্তামানে কিছু টেষ্ট করার জন্য রোগীদের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। সাবাই চেষ্টা করছে যতদ্রুত চালু করা যায়। প্রতিনিয়ত সেই বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়াও কিছু টেষ্ট আমাদের নিউক্লিায়ার শক্তি কমিশনে হরমোন ও আলট্রাসনোগ্রাফি টেষ্ট করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ওষুধ উত্তোলনের বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী-পরিচালক ডাঃ সোনিয়া কাওকাবী বলেন, বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকে অবগত হলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে, হাসপাতাল পুর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে পরীক্ষাও চালু হবে। অতিরিক্ত ওষুধ উত্তোলনের বিষয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ আনোয়ারুল করীব বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন।
শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। কারণ, মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল অংশ এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। এদিকে তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু হয়নি। নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়।