‘চায়না দুয়ারী’র ফাঁদে দেশি মাছের সর্বনাশ

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মা নদী ও কুমার নদসহ বিভিন্ন স্থানে ‘চায়না দুয়ারী’ নামের বিশেষ ধরনের জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলে ও সৌখিন জেলেরা। গত বুধবার সরেজমিন ইনকিলাব সংবাদদাতার চোখে এটি ধরা পড়ে।

খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক জালে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। শুরুর দিকে পদ্মায়-এ জাল ব্যবহার হলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও। বর্তমানে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল। এক অনুসন্ধানি প্রতিবেনে বেড়িয়ে আসছে এসব তথ্য। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর কুমার নদে আছে ১০ হাজার চায়না দুয়ারি।

অপরদিকে, সদর থানার ডিক্রীরচর নর্থচানেল ইউনিয়নের অন্তর্গত পদ্মায় থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ এ জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি, হ্রাস ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারী নামক জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী ও খাল-বিল।

স্থানীয় জেলেরা জানান, চায়না দুয়ারীতে সব ধরনের মাছ ছেঁকে ওঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে বর্তমানে এ দুয়ারী ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া অনেক শৌখিন মৌসুমি মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যারা পুরোনো কৌশলে মাছ ধরতেন, তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারী কিনছেন। আরো জানান, নদীতে চায়না জাল বন্ধে মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখিনি। প্রকাশ্যেই অনেকে চায়না দুয়ারী দিয়েই মাছ ধরছে।

ফরিদপুর অম্বিকাপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক ওলি নেওয়াজ বাবু জানান, দুপুর হলেই ছোট ছোট ডিঙিতে করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।

মমিন নামক এক জেলে জানান, আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করলেও চায়না দুয়ারী আসার পর সেটি বাদ দিয়েছি। কারণ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রশাসন উৎপাত করে। এছাড়া কারেন্ট জালের চেয়ে চায়না দুয়ারীতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ৮ টি চায়না দুয়ারী কিনেছি। পেশায় জেলে নয় এমন মানুষও চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরছেন। স্থানীয় হাট-বাজারে গুণগতমান ও আকার অনুসারে তিন থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এ জাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারি আরো কিছু জেলেরা বলেন, ‘চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি’।

ফরিদপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চায়না দুয়ারী বন্ধে মৎস্য আইনে নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ক্রয়-বিক্রয় করে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। চায়না দুয়ারী ব্যবহারের ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। আমরা যদি সবাই সচেতন না হই তাহলে চায়না দুয়ারী ব্যবহার বন্ধ হবে না এবং আমাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চায়না দুয়ারী বন্ধে সর্বাতœক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়াও সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চলমান রয়েছে। কিন্ত চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ মারা দ-নীয় অপরাধ এ রকম কোনো প্রচারণা শোনা যায়নি। এবং চায়না জাল আটক করা হয়েছে এমন কোনো তথ্যও গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ঘণকুয়াশায় ফেরির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত
হিজলায় মেজরের বাসায় চুরি : এলাকায় চোর আতঙ্ক
ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় দিয়ে স্বাগত-বিদায়
টঙ্গীবাড়ীতে বীজ আলুর জমি প্রদর্শনী
কটিয়াদীতে সমলয় পদ্ধতিতে যান্ত্রিক উপায়ে চারা রোপণ
আরও

আরও পড়ুন

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

পণ্যবাহী দুটি কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি

পণ্যবাহী দুটি কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত