২৮ হাজার পরিবার গৃহহারা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার অত্যন্ত ভাঙন প্রবণ নদী। প্রতিবছর নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। গত ১৭ বছরে নদীভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার পরিবার। নদী ভাঙা এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ কিংবা অন্যের বসতভিটায়।
এক সময় যাদের ছিল ডুলি ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, ফলের বাগান এবং বিঘায় বিঘায় ফসলি জমি। তারা এখন নাম লিখিয়েছেন ভূমিহীনদের তালিকায়। সব হারিয়ে নির্বাক হয়ে এখন ব্রহ্মপুত্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানায়, ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় ১৬টি নদ-নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার পরিবার।
এর মধ্যে ২০০৬ সালে ২৬৫, ২০০৭ সালে ৪৫০, ২০০৮ সালে ২৫০, ২০০৯ সালে ২০০, ২০১০ সালে ২৭৫, ২০১১ সালে ৩০০, ২০১২ সালে ৬৬৯, ২০১৩ সালে ৪৪৪, ২০১৪ সালে ৯৫০, ২০১৫ সালে ৩৪২১, ২০১৬ সালে ৭০০০, ২০১৭ সালে ৪২০৫, ২০১৮ সালে ৬১৪৫, ২০১৯ সালে ১৮৫৩, ২০২০ সালে ৫০০, ২০২১ সালে ৬০০ এবং ২০২২ সালে ৫০৩টি পরিবার। তবে বেসরকারি তথ্যমতে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা সরকারি এই পরিসংখ্যানের চেয়ে দ্বিগুণ।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে বিশেষ করে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের শত শত ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছে নদী তীরবর্তী এসব মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোদালকাটি ইউনিয়নের পাকান্টারী ও সাজাই গ্রামে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কোদালকাটি বাজার, কয়েকটি স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ এবং বাড়ি-ঘর ভাঙনের সম্মুখীন। তৃতীয় দফা বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে।
হুমকিতে রয়েছে এই ইউনিয়নের সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যাপীঠ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালকাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাদাকাত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, কোদালকাটি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা।
গত সাত মাসে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর ও বসতভিটা। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব এসব এলাকার শত শত পরিবার। ভূমিহীন হয়ে এখন অন্যের বসতভিটা কিংবা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। অনেকেই পৈত্রিক ভিটা, জমিজমা হারিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। ভাঙন কবলিত এলাকার অনেকেই যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ নদীর তীরেই ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে আছেন।
ভাঙন কবলিত এসব এলাকার স্থানীয় অনেকেই জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার নদীতে ভেঙেছে তাদের বাড়ি-ঘর ও পৈত্রিক ভিটা। হারিয়েছেন ফলের বাগান, পুকুর ভরা মাছ ও ফসলি জমি। অনেক কষ্টে এসব পরিবার কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাই নিলেও এবারও পিছু নিয়েছে আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র। এ বছর বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় আর নতুন করে বাড়ি-ঘর তৈরি করতে পারেননি অনেকেই।
গত দশ বছরে শুধুমাত্র কোদালকাটি ইউনিয়নের ৩, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডগুলো পুরোপুরি চলে গেছে নদী গর্ভে। এই তিনটি ওয়াডের্র প্রায় ৭ হাজার মানুষ সব কিছু হারিয়ে এখন ভূমিহীনের তালিকায়। একই চিত্র পাশ্ববর্তী মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে। নয়ারচর, চর নেওয়াজি, শংকর মাধবপুর, হাজিপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়া ভাঙনে এখন বিলীন।
এ ব্যাপারে কথা হলে, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ এবং রৌমারী উপজেলার কত্তিমারী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় আপদকালীন সময়ের জন্য জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। শুকনো মৌসুম এলে ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী কাজের জন্য সমীক্ষা করা হচ্ছে’।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘নদীভাঙ্গা মানুষ, যারা একেবারে নিঃস্ব তাদের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয় প্রকল্পে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং যে সমস্ত মানুষ আশ্রয় প্রকল্পে আসতে অনিচ্ছুক তাদেরকে আপদকালীন সময়ের জন্য ঢেউ টিন এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে’।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু