বেলকুচি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ
২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
সিরাজগঞ্জের বেলকুচির তেয়াশিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম রেজা বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণির এ চাকরির ১১তম গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন ৩২ হাজার ২৪০ টাকা। এই বেতনে চাকরি করেই কোটিপতি তিনি। থাকেন সিরাজগঞ্জ শহরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে।
এ ভূমি কর্মকর্তা বর্তমানে তেয়াশিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কামারখন্দের দশশিকা গ্রামের দলিল লেখক মৃত তসলিম মহুরীর ছেলে।
জানা যায়, রেজাউল করিম রেজা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী পদে ২০০৪ সালে যোগদানের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এক ভুক্তভোগী আল জাদিদ হোসেন বাঁধন বলেন, ‘জমির নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই রেজাউল করিম রেজাকে ঘুস দিতে হয়। আমার পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া এনায়েতপুর গোপালপুর মৌজার একটি জায়গা নামজারি করার জন্য ১৬ হাজার টাকা নিয়ে দের বছর পেরিয়ে গেলও নামজারি করে দেয়নি। নামজারি কথা বলতে গেলে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে মারধরের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন, এরপর বেলকুচি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক মন্ডল বরাবর ঘুষ নিয়ে নামজারি না করে দেওয়ায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। প্রায় এক মাস হলেও উপ-সহকারী রেজাউলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর এক মাস পার হলেও এসিল্যান্ড প্রতীক মন্ডল রেজাউলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে পুনরায় নামজারির জন্য আবেদন করতে বলেন, গত ৬ আগস্ট আবেদন করার পর এখনও কোন সমাধান পাইনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এর মধ্যে নায়েব রেজাউল করিম রেজা ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মাছুমপুর ফুটবল মাঠের পশ্চিমে সয়াধানগড়ায় ৪২ লাখ টাকায় কিনেছেন প্রায় ৫ শতক জায়গা।
দশশিকা গ্রামের শাহিন রেজা বলেন, নায়েব রেজাউল করিম রেজা এই চাকরি করে নিজ উপজেলার কর্ণসুতি ও দশশিকা মৌজায় করেছেন বাড়ি, রয়েছে অন্তত ৫ বিঘা ফসলি জমি। ছেলেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে ফিনল্যান্ড পাঠিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য। তিনি আরও বলেন- ইতোমধ্যে তার নামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার ৯৪নং আসামি নায়েব রেজাউল করিম।
জানা যায়, ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৯ সালে রেজার চাকরি চলে যায়। এরপর আ.লীগর রাজনীতি করার সুবাদে নেতাদের সহযোগিতায় ২০১০ সালে চাকরি ফিরে পান। কিন্তু অবৈধ ঘুস দুর্নীতির অভ্যাস আজও ছাড়তে পাড়েননি। নিজ এলাকায়ও তিনি লাখ লাখ টাকার সম্পদ কিনেছন, তার এ চাকরির বেতনে কিভাবে সম্ভব এটা আপনারাই বলেন।
দৌলতপুর ইউনিয়নের তেয়াশিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী আল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, ‘জমির নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই রেজাউল করিম রেজাকে ঘুস দিতে হয়। গত ২০২২ সালে পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ২৪ শতক জায়গার বাবত ৩৭,৫০০/- (সাইত্রিশ হাজার পাঁচ শত) টাকা নিয়ে ১০ টাকার রশিদ কেটে দিলো, বাকি টাকার রশিদ চাইলে বলেন ওটা দেয়া হয় না। এখন ২০২৪ সালে ঔ জায়গার খাজনা দিতে গেলে ভূমি উপ-সহকারী রেজাউল বলেন, ও জায়গা আপনার নেই, পরে জানতে পারি, ২৪ শতক জায়গা আমার চাচাতো ভাইদের নামে নামজারী করে দিয়েছে। এমন কি দেখা যায় আট বছর আগে মৃত ব্যক্তি নামেও নামজারি করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক মন্ডল বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে আমাকে বলেন, আপনি নামজারির ওপর মিস কেস করেন, রেজাউলকে বলে ঠিক করে দেয়া হবে। আল-আমীন আরও বলেন- এভাবে ঘুস নিয়ে কত জনের সর্বনাশ করেছে, সরকারের কাছে নায়েব রেজাউল এর সুষ্ঠ বিচার ও দুদককে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত তেয়াশিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা উল্লিখিত অভিযোগ বিষয়ে ইনকিলাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, তবে লাখ লাখ টাকার জায়গা ও ছেলেকে বিদেশে পড়ালেখার কথা জানতে তিনি বলেন, চাকরির আগে ব্যবসার টাকা দিয়ে কিছু জায়গা কেনা ছিল আর বর্তমানে কিছু জায়গা কেনা হয়েছে। এ সময় ছেলে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ালেখার কথা তিনি এরিয়ে যান।
এ বিষয়ে বেলকুচি সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতিক মন্ডল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে জানতে বলেন।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, নায়েব রেজাউল করিম বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয়েছে এর সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ