যানজটের শহর সৈয়দপুর
২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
উত্তরের জনপদ নীলফামারীর সৈয়দপুরে যানজট ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়হীনতায় এ অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যানজটের কারণে প্রায়ই যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করছেন, অ্যাম্বুলেন্স ও দমকল বাহিনীর গাড়ি শহর অতিক্রম করতে যান জটলার সম্মুখীন হচ্ছে।
শহরের সাহেবপাড়ার অটোরিকশা চালক মালেক (৪৫)। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাসহ পাঁচজনের সংসার তার। আগে দিনমজুর ছিলেন। তখন সপ্তাহে দু’একদিন দিনমজুরির কাজ পেলেও বাকি দিনগুলোতে জুটতো না কোনো কাজ।
গত তিন মাস আগে প্রতিবেশীর উৎসাহে তিনি ভাড়া নিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। প্রথম কিছুদিন ভালো রোজগার হলেও যানজটের কারণে এখন কোনো কোনো দিন অটোরিকশার জমার টাকাই উঠছে না। এ কারণে হতাশা আর শঙ্কায় দিন কাটছে তার। প্রায় ১৫-২০ জন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে যানজটের এ ভয়াবহ অবস্থার কথা জানা গেছে।
শিল্প-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ উপজেলা সৈয়দপুর। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের মোকাম। আয়তনে ছোট হলেও প্রায় তিন লাখ মানুষের বাস এখানে। প্রতিদিন জেলার অন্যান্য উপজেলাসহ আশপাশের জেলা শহর থেকেও এখানে কয়েক হাজার লোক প্রয়োজনে আসেন। ফলে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। এতে শহরে যানজট পৌরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর ট্রাফিক পুলিশ কাজে যোগদান করলেও এখনও শহরের যানজট অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত। ট্রাফিক পুলিশও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, সৈয়দপুর-রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীসহ পাঁচটি সড়কের সংযোগস্থল পাঁচমাথা মোড়। পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপভ্যান, কার এবং মাইক্রোবাসের সঙ্গে চার হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে শহরে। এসব পরিবহন শহরে দাঁড়ানোর নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। ফলে যত্রতত্র যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও পণ্য ওঠানো নামানো হয়।
এদিকে শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে রেলওয়ের জায়গায় অসংখ্য বহুতল মার্কেট গড়ে উঠেছে। তবে পার্কিংয়ের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি। অথচ মার্কেটগুলোয়. ব্যাংক-বিমাসহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাবেচা চলছে। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা ব্যক্তিগত যানবাহন সড়কে রেখে কেনাকাটা করেন। এছাড়া শহীদ ডা. শামসুল হক সড়কের দোকানগুলোর সামনে দোকানের ভাড়াটিয়ারাই ফুটপাতটি আরেকজনকে ভাড়া দিয়েছেন। পোস্টঅফিস মোড় ও পুলিশবক্সের সামনে দোকানগুলো অস্থায়ী অবকাঠামোর হলেও যুগ যুগ ধরে রাস্তা দখল করে তারা ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়া পৌরসভায় প্রায় দুই হাজার রিকশা অটোরিকশার লাইসেন্স থাকলেও চলছে চার হাজারের বেশি। আবার অন্য জেলা থেকেও দুই হাজারের মতো অটোরিকশা ঢুকছে। এসব যানবাহনের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
শহরে অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন কমানো না গেলে সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সদস্য সাংবাদিক ফারুক। তিনি বলেন, অটোরিকশার কারণে শুধু যানজট নয়, বাড়ছে ছোট বড় দুর্ঘটনাও।
রেললাইন বা রেলঘুমটিতে দোকান বসানো নিষিদ্ধ জানিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা বলেন, এতে শুধু যানজট নয়, ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। শহরের যানজট নিরসনে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে লিখিত চিঠি দেয়া হবে। অনুমতি পেলে রেলঘুমটির দুই পাশের অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
জনবল সংকটসহ নানা কারণে শহর যানজটমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে দাবি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজার আলমের। তার ভাষ্য, মূলত চারটি কারণে সৈয়দপুর শহরে যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল, ফুটপাত দখল করে ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান বসানো, যেখানে সেখানে অটোরিকশা রেখে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং দিনের বেলায় শহরে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ। এসব কারণে শহরের ব্যস্ততম পাঁচমাথা মোড়, মদিনা মোড়, তামান্না সিনেমা হলের সামনে ও পোস্ট অফিস মোড়ে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
তিনি বলেন, বিষয়টি একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে নতুন দায়িত্বরত পৌর প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পদাধিকার বলে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দীকী। তিনি বলেন, এরই মধ্যে শহরকে যানজটমুক্ত করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। ব্যক্তি সচেতনতা তৈরি করতে একটি নাগরিক কমিটিও গঠন করা হবে। কারণ এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সচেতনতা বেশি জরুরি। এতে কাজ না হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ