ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সুন্দরগঞ্জের পাড়াসাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান

Daily Inqilab সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পাড়াসাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চার মাস আগে করাল গ্রাসী তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৪/১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। চার মাস আগে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়। সে সময় স্থানীয় জনগন ও শিক্ষকরা নিজেদের অর্থে টিনশেড বিদ্যালয়ের টিন খুলে নিয়ে ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলেও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিদ্যালয়ের জমি। এরপর অর্থের অভাবে পুরাতন টিন দিয়ে বিদ্যালয় ঘরটি অন্যত্র উত্তোলন করতে পারেনি। বর্তমানে লেখাপড়ার কোন পরিবেশ না থাকায় শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যায় না। এরপরও কোমলমতি কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গিয়ে রোদে ধবধবে বালির উপরে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে। মেঘ দেখলেই তারা বই খাতা গুটিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। এজন্যই চরাঞ্চলের মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে ওই এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীরা জানান।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সরকার পরিবর্তনের কারণে কমিটি বিলুপ্তের পরই তিস্তা নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়। সে সময় শিক্ষক ও এলাকাবাসির কাছ থেকে চাঁদা তুলে মিস্ত্রি লাগিয়ে বিদ্যালয়ের টিন খুলে নেয়া হয়। এরপর পাশাপশি স্থানে মাটি ভরাট, কাঠ ক্রয় করে ঘরের ফ্রেম তৈরি করা হয়। এখন অর্থের অভাবে কোন কাজই হচ্ছে না। বাধ্যহয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন বসতঘরের পাশে বসে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে।
অভিভবক সোলায়মান হাজারী বলেন, সরকারি কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় বিদ্যালয় ঘর উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। চরের গরীব মানুষদের পক্ষে বার বার অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। বিদ্যালয় ঘর না থাকায় চার মাস থেকে লেখাপড়ায় ভাটা পড়েছে।
হোসেন আলী নামে এক এলাকাবাসি জানান, বিদ্যালয় নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে তাৎক্ষনিক প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নজরদারীর অভাবে শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে সহজেই শিশুরা ঝড়ে পরছে। অপরদিকে শিক্ষকদের অনিয়মিত গমনাগমনের ফলে শিক্ষার্থীরা খেলা-ধুলা ও খোশ গল্প করে বাড়ি ফিরছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯৫ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে বলে জানান সহকারি শিক্ষক মোছাঃ অজিদা খাতুন। শিক্ষক রয়েছে তিনজন। বসার জায়গা নেই। নেই পায়খানা-প্রসাবের ব্যবস্থা। এজন্য শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সহকারি শিক্ষক মোহসিনা খাতুন বলেন বিদ্যালয় ঘর না থাকায় ঠিকমত পাঠদান করা সম্ভব হয় না। কারণ খোলা আকাশের নিচে পাঠদানে শিক্ষা উপকরণের সঠিক ব্যবহার করা যায় না।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গনের পর ঘরটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অর্থ বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। চার মাসেও কোন কাজ হয় নাই।
ওই ক্লাষ্টারের সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রিপন আলীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসির আন্তরিকতায় বিদ্যালয়ের টিন নদীতে ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ঘরটি পুনরায় উত্তোলনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তারাই। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে এখনো সম্ভব হয়নি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদী ভাঙনের শিকার বিদ্যালয়টির বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাটুরিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
কুরআন অবমাননাকারী যুবক আটক
আর কত লোকসান গুনবে জিল বাংলা সুগার মিলস
কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন
হাওর অঞ্চলে চলছে এলজিইডির কয়েকশ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প
আরও

আরও পড়ুন

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে  চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন