৩ ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন

ধামরাইয়ে বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা

Daily Inqilab ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা

১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:১১ এএম

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে প্রভাবশালী মাটির ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই মাটিকাটার বেশ কয়েকটি ভেক্যু জব্দসহ জরিমানা করলেও কোনভাবেই ৩ ফসলি জমির মাটিকাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

জমির মালিকদের টাকার লোভ, ভয়ভীতি ও বলপ্রয়োগসহ নানা কৌশল অবলম্বন করে কিনে নিচ্ছে ৩ ফসলি জমির মাটি। এ মাটি ক্রয়-বিক্রয় নিয়েও চলছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রুপিং, হামলা-পাল্টা হামলা ও মামলা পর্যন্ত হয়েছে। শুধু তাই নয় বালিয়া এলাকায় ভেক্যু পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এরপরও থেমে নেই তিন ফসলি জমির মাটি কাটা।

অধিক মুনাফার লোভে প্রভাবশালী অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক স্থান থেকে তিন ফসলি জমির মাটি গভীর করে কেটে নিয়ে যাওয়ায় একদিকে কমছে কৃষি জমি। অপরদিকে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে জমির শ্রেণি। এসব অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা ভেক্যু দিয়ে ২০-২৫ ফুট গভীর করে মাটিকাটার ফলে পাশের জমির আইল ভেঙে পড়ছে। এতে বাধ্য হয়ে পাশের জমির মালিকও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করতে পারছে না এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সারা ধামরাই উপজেলা জুরে ফসলি জমির মাটি কাটার এক রকমের হিড়িক পড়ে গেছে। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শুরু হয় মাটি কাটার ধুম। সারা রাত ধরে চলে ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব। মাটির ট্রাক চলাচলের শব্দে রাতে অনেক এলাকার মানুষ ঠিকমত ঘুমাতেও পাড়ে না। অপরদিকে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধুলোয় দূষর হয়ে পড়েছে। ১৬টি ইউনিয়নেই রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের চক্র। কিছুতেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ইটভাটায় যাচ্ছে। এতে গ্রামীণ রাস্তাও ভেঙে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে।

দেখা যায়, উপজেলার ভাড়ারিয়া, যাদবপুর, আমতা, কুশুরা, বালিয়া, নান্নার, সূয়াপুর, কুল্লা, গাঙ্গুটিয়া, সানোড়া ইউনিয়নসহ প্রায় ইউনিয়নেই চলছে কৃষি জমির মাটিকাটার উৎসব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে দেদারছে। এতে একটি জমির মাটি কাটারপর পাশের জমি ভেঙে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তার জমিও বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি অনেকে। এনিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানায় ও অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।

সুয়াপুর ইউনিয়নের দেলধা এলাকায় মাটি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পর পর দুই বার মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় পরস্পর বিরোধী মামলাও হয়েছে। বালিয়া ইউনিয়নের সূত্রাপুর-মাদারপুর এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে একটি ভেক্যু পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়াও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় আওয়ামী লীগের সহায়তাকারীসহ বিএনপির দু’গ্রুপ মাটির লিক (মাটি নেয়ার রাস্তা) দখল নিতে গিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়েছেন। রাস্তায় ধূলা কমাতে পানি দেওয়ার কথা বলায় আব্দুল গফুর নামে এক দোকানিকে ব্যাপক মারধর করেছে। কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। পরিস্থিতি দেখে মনে হয় প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছে। মাটি ব্যবসা চক্রের সদস্য খোরশেদ আলমকে মারামারির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দুবৃত্তরা আমার ওপর হামলা করেছে। তবে ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, তিন ফসলি জমির মাটি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করতে হলে অবশ্যই কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এলেই আমি পুলিশ পাঠিয়ে দিচ্ছি মাটি কাটা বন্ধ করতে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ধামরাই উপজেলার এরিয়া অনেক বড়। মাটির ব্যবসায়ীরা অত্যান্ত ধুরন্ধর। অনেক সময় মাটিকাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে জনবল কম থাকায় সব সময় অভিযানে যেতে পারছিনা। বিভিন্ন এলাকায় মাটিকাটার একাধিক ভেক্যু এর পূর্বেও জব্দ করা হয়েছে। মোটা অংকের টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। থানা পুলিশের সহায়তাও চাওয়া হয় মাটিকাটা বন্ধ করতে। মাটিকাটা বন্ধের জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সকলের আন্তরিকতার প্রয়োজন। ফসলি জমির মাটি রক্ষায় মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে এবং থাকবে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সিরাজদিখানে ২৪ দিনেও উদ্ঘাটন হয়নি বিধবা হত্যার রহস্য
কোটচাঁদপুরে ফুল চাষ করে বিপাকে কৃষক
আছিয়া হত্যার বিচার দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
পালিয়ে গিয়ে বিয়ের ৩ মাস পর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয় : মাহবুব আলমগীর আলো
আরও
X

আরও পড়ুন

ঈদে ট্রেনযাত্রা : আজ বিক্রি হবে ২৮ মার্চের টিকিট

ঈদে ট্রেনযাত্রা : আজ বিক্রি হবে ২৮ মার্চের টিকিট

হিন্দুত্ববাদীদের টার্গেট আওরঙ্গজেবের মাজার, ভারতে নতুন উত্তেজনা

হিন্দুত্ববাদীদের টার্গেট আওরঙ্গজেবের মাজার, ভারতে নতুন উত্তেজনা

বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় জরুরি: প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় জরুরি: প্রধান বিচারপতি

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ২০৫, স্থল আক্রমণের হুমকি

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহত ২০৫, স্থল আক্রমণের হুমকি

বিজিবির প্রতিবাদে পিছু হটলো বিএসএফ

বিজিবির প্রতিবাদে পিছু হটলো বিএসএফ

শাহরাস্তিতে প্রবাসীর বাড়ির ছাদে যুবককে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা

শাহরাস্তিতে প্রবাসীর বাড়ির ছাদে যুবককে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা

কোর্টের আদেশ অমান্য করে ট্রাম্পের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন!

কোর্টের আদেশ অমান্য করে ট্রাম্পের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন!

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই : প্রেস উইং

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই : প্রেস উইং

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ১৩১ জনের বেশি

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ১৩১ জনের বেশি

জবি শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, ১০ বাস আটক

জবি শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, ১০ বাস আটক

জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জাবির ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার

জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জাবির ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার

লামায় জাল সনদ দিয়ে চাকুরী করছে প্রাথমিকের ৫ শিক্ষক, সরকারি টাকা আত্মসাৎ

লামায় জাল সনদ দিয়ে চাকুরী করছে প্রাথমিকের ৫ শিক্ষক, সরকারি টাকা আত্মসাৎ

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেরে কুকুরটি কামড়ালো বৃদ্ধ, শিশুসহ ছয়জনকে

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর বেতের পড়তে গিয়ে তাহাজ্জুদ বেতের দু’টোই মিস হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

গুলিস্তানে মার্কেট দখল করতে গিয়ে গ্রেফতার

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে রাশিয়ার কুর্স্ক আক্রমণে ভরাডুবি কিয়েভের

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

ঢাকায় মার্কিন সিনেটর চার্লস পিটার্স

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিচার বিভাগের ওপর

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আজ?