অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব
১৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৭ এএম
অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন সেনেটে একটি বাইপার্টিজান প্রস্তাব পেশ হওয়ার পর ভারত-চীন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চীন যেহেতু অরুণাচল প্রদেশকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করে এবং ভারতের অংশ বলে মনে করে নাÑ তাই মার্কিন সেনেটরদের এই পদক্ষেপ তারা ভালভাবে নেবে না, বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, মাত্র মাসতিনেক আগেও অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনী নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ কোয়াড জোটের সদস্যরা যেভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে, মার্কিন সেনেটের এই প্রস্তাবও সেই ধারাবাহিকতার অংশ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। বস্তুত ভারতও কোয়াডের অন্যতম শরিক দেশ। আমেরিকার রিপাবলিকান সেনেটর বিল হ্যাগার্টি এবং ডেমোক্র্যাট সেনেটর জেফ মার্কলি যৌথভাবে এই প্রস্তাবটি এনেছিলেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া টেক্সাসের ডেমোক্র্যাট সেনেটর জন কর্নিনও এই প্রস্তাবের কো-স্পনসর ছিলেন। ওই প্রস্তাবটির শুরুতেই বলা হয়েছে, “১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের সময় থেকেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মধ্যেকার ম্যাকম্যাহন লাইনকে দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে আমেরিকা স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে।” চীন যে অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দাদের ভিসা দিতে চায় না এবং ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বা সীমান্ত অঞ্চলে নানা ‘প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ’ নিয়ে থাকে, মার্কিন সেনেটরদের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে সে কথাও। চীনের সরকারি মানচিত্রে অবশ্য পুরো অরুণাচল প্রদেশটাকেই তাদের দেশের ভেতরে বলে দেখানো হয়। ওই রাজ্যের ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আসলে সবটাই তাদেরÑ এটাই আজও বেজিংয়ের আনুষ্ঠানিক অবস্থান। চীন ও অরুণাচলের মধ্যেকার ৮৯০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্তটিই গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ম্যাকম্যাহন লাইন নামে পরিচিত, যার নামকরণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব স্যার হেনরি ম্যাকমোহনের নামে। ১৯১৪ সালে সিমলায় গ্রেট ব্রিটেন, তিব্বত ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে যে ‘সিমলা কনভেনশনে’র আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ভারত ও তিব্বতের মধ্যেকার এই সীমান্তরেখাটি আঁকা হয়। কোনও পার্বত্য অঞ্চলে সীমানা নির্ধারণের জন্য যে ‘হায়েস্ট ওয়াটারশেড প্রিন্সিপল’ আছে, সেই নীতিই সিমলাতে অনুসরণ করা হয়েছিলÑ কিন্তু চীনের প্রতিনিধি তা মানতে রাজি হননি। তা ছাড়া অরুণাচলের তাওয়াং-কেও তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভেতরে বলে দেখানো হয়। তিব্বতের কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যাওয়ারই এক্তিয়ার নেই, এই যুক্তি দিয়ে সিমলার ওই সমঝোতা থেকে চীন তখনই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। ম্যাকম্যাহন লাইন নিয়ে বিতর্কও সেই তখন থেকেই। পরে চীন কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে এলে তারা এই প্রশ্নে তাদের আপত্তি তীব্রতর হয়। ১৯৫৯ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে লেখেন, পূর্ব সীমান্তে ‘তথাকথিত ম্যাকম্যাহন লাইন’কে তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) বলে মনে করে। ভারত-চীন সীমান্ত যে ‘বিতর্কিত’, ভারতও পরে সেটা মেনে নিয়েছে এবং এই বিতর্ক নিরসনের চেষ্টায় এখনও দুদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এদিকে অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দারা যখন চীনের ভিসার জন্য আবেদন করেন, তখন ভারতে চীনের দূতাবাস তাদের পাসপোর্টে স্ট্যাম্প না-মেরে স্টেপল করে একটি কাগজে ভিসা দিয়ে থাকেন – ভারত বহুবার যার প্রতিবাদ জানিয়েছে। অরুণাচলকে চীন নিজেদের ভাষায় ‘জাংনান’ বলে বর্ণনা করে, যা তাদের মতে দক্ষিণ তিব্বতেরই একটি অংশ। অরুণাচলের বিভিন্ন এলাকা বা স্থানকে চীনা নাম দিয়েও তারা একাধিকবার নতুন নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে, যার জবাবে ভারত বলেছে “একটা জায়গার নতুন নাম অবিষ্কার করে সেই নামে ডাকলেই বাস্তবতা পাল্টে যায় না।” শীতল যুদ্ধের সময় বা তারও অনেক আগে থেকেই ভারত সোভিয়েত ব্লকের অংশ ছিলÑ তবে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের ইস্যুতে তারা কিন্তু বরাবরই মার্কিন সমর্থন পেয়ে এসেছে।
১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ই সমগ্র অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। তবে চীন ভারতে কর্মরত বিদেশি কর্মকর্তাদের অরুণাচল প্রদেশে সফরে যাওয়াটা কখনোই পছন্দ করত না, আর ভারতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিবিদরাও সেখানে যাওয়াটা এড়িয়ে যেতেন। “এই রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল ক্রেইগ এল হল ২০১৬ সালের এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশে যান এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান অরুণাচল ভারতেরই অংশ”, বিবিসিকে বলছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও মেনন। শুধু তাই নয়, এর মাসছয়েক পরেই দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা প্রথম বিদেশি কূটনীতিবিদ হিসেবে অরুণাচলের তাওয়াং ফেস্টিভ্যালে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন। রাষ্ট্রদূত পদে তার উত্তরসূরী কেনেথ জাস্টার-ও তিন বছর বাদে ওই একই সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দেন। নিরুপমা রাওয়ের কথায়, “ফলে সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকা বারে বারেই বুঝিয়ে দিয়েছে অরুণাচল প্রদেশকে তারা মোটেই কোনও বিতর্কিত এলাকা বলে মনে করে না এবং ওই রাজ্যটির ওপর চীনের দাবিকেও স্বীকার করে না।” যখনই কোনও বিদেশি কূটনীতিবিদ অরুণাচল প্রদেশ সফরে গেছেন, চীন সব সময়ই তার প্রতিবাদ জানিয়েছেÑ যদিও ভারত তাকে আমল দেয়নি। এখন সেনেটর বিল হ্যাগার্টি ও সেনেটর জেফ ম্যাকলির আনা প্রস্তাব সেই বিরোধকেই নতুন করে উসকে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা