গাড়ি চালিয়ে রাশিয়ার নতুন শহরে ঘুরে বেড়ালেন পুতিন
১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৪ পিএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গত বছর ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো নতুন অধিকৃত অঞ্চলে এক প্রকাশ্য সফরে গেছেন। তিনি ক্রিমিয়ার পর ইউক্রেনের বিধ্বস্ত শহর মারিউপোল পরিদর্শন করেছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে বোমা বর্ষণের পর যে শহরটি রুশ সৈন্যরা গত মে মাসে দখল করেছিল।
রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পুতিন হেলিকপ্টারে চড়ে ঐ শহরে এসে নামেন এবং অন্ধকারের মধ্যে নিজেই গাড়ি চালিয়ে শহরটির বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তিনি শহরের কিছু বাসিন্দার সাথেও কথা বলেন। সংবাদদাতারা বলছেন, মারিউপোল মস্কোর সরকারের জন্য একটি বিরল সামরিক সাফল্যের প্রতীক এবং রুশ নেতার এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে যে তারা সফল হচ্ছে তা সবাইকে দেখানো। রুশ নিউজ চ্যানেল রোসিয়া-২৪ ক্রেমলিনের প্রেস-সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, মারিউপোল সফরের সময় তার সাথে ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন, যিনি তাকে শহরের পুনর্র্নিমাণ সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সফরের সময় পুতিন স্থানীয় এক পরিবারের আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে বলা হয়েছে। তবে টিভি প্রতিবেদনে পরিবারটির সাথে দেখা করার ওপর কোন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি।
বিবিসির মনিটরিং বিভাগ জানাচ্ছে, ভøাদিমির পুতিন একই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার রস্টভ-অন-ডন শহরে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এর কমান্ড পোস্টে একটি বৈঠকও করেন। রুশ সশস্ত্র বাহিনীর স্টাফ প্রধান ও ইউক্রেনে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভসহ রুশ সামরিক কমান্ডাররা পুতিনকে তাদের সামরিক অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, জেনারেল গেরাসিমভ এবং পুতিন একসাথে একটি সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং জেনারেল প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করছেন তার হাতে কতটা সময় আছে। এর জবাবে পুতিন বলেন, ‘যতটা প্রয়োজন ততটা।’ ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের নবম বার্ষিকীতে ভøাদিমির পুতিন রুশ অধিকৃত ঐ ভূখ- সফর করলেন। এরপরই তিনি মারিউপোল যান।
মারিউপোল সফরের এক দিন আগেই রুশদের দখলে থাকা ক্রিমিয়া পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পুতিন। ২০১৪ সালেই এর দখল নিয়েছিল রাশিয়া। কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী এলাকাটি ইউক্রেনের থেকে দখলের নবম বর্ষপূর্তি ছিল শনিবার। সেই উপলক্ষে ক্রাইমিয়ার সফর করেছেন পুতিন। রুশ টেলিভিশনে দেখা গিয়েছে, মস্কোর নিয়োগ করা গর্ভনর মিখাইল রেজভোজহায়েভকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার কৃষ্ণসাগরের সেভাস্তোপোল বন্দরে যান পুতিন। এ ছাড়া একটি আর্ট স্কুল-সহ শিশুকেন্দ্রেও যান তিনি।
পুতিনের সফরের বিষয়ে ক্রিমিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সেভাস্তোপলের গভর্নর মিখাইল রাজভোজায়েভ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট জানেন কীভাবে চমক দিতে হয়। আজ আমাদের একটি শিশুদের আর্ট স্কুলের উদ্বোধন করার কথা ছিল। একটি ভিডিও কনফারেন্সের জন্য সবকিছু প্রস্তুত ছিল এবং একটি বিশেষ যোগাযোগ লিঙ্কের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছেন। এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে, প্রেসিডেন্ট সর্বদা সেভাস্তোপল এবং সেভাস্তোপলের জনগণের সাথে আছেন। আমাদের দেশে একজন অবিশ্বাস্য নেতা রয়েছেন।’
প্যাট্রিয়ার্কাল কাউন্সিল ফর কালচারের চেয়ারম্যান, পিসকভ এবং পোরখভের মেট্রোপলিটান টিখোন (শেভকুনভ) এর সাথে তিনি পুতিনকে একটি নতুন শিশুদের আর্ট স্কুল এবং শিশু কেন্দ্র করসুন ঘুরিয়ে দেখান। এটি ঐতিহাসিক এবং প্রতœতাত্ত্বিক একটি পার্কের একটি বৃহৎ মাপের প্রকল্পের প্রথম অংশ। ‘পসকভ এবং পোরখভের মেট্রোপলিটন টিখোন দ্বারা প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি, যা প্রেসিডেন্ট দ্বারা সমর্থিত ছিল, সামরিক নির্মাতাদের প্রচেষ্টার জন্য একটি অবিশ্বাস্য গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে,’ রাজভোজায়েভ বলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর তরফে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই সফরের ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধাভিযানের হত্যা এবং শিশু-নির্যাতনের ভুয়া অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে আইসিসি। এ পদক্ষেপকে মানতে নারাজ ছিল রাশিয়া। তার পর পুতিনের এ সফরকে আইসিসির বিরুদ্ধে নীরব জবাব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাইপারসনিক অস্ত্র থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করে না রাশিয়া : রাশিয়া এখন হাইপারসনিক অস্ত্র ব্যবহার করে না, যদিও সেগুলি অন্যান্য অত্যাধুনিক সিস্টেমের মতোই রাশিয়ার অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে। গতকাল প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রসিয়া-১ টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন।
‘আসলে, স্থলবাহিনীর উন্নয়নের জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হবে, কিন্তু তখন (২০১৪ সালে) হাইপারসনিক অস্ত্র ছিল না, যদিও সেগুলো এখন বিদ্যমান! হ্যাঁ, আমরা আসলে সেগুলি ব্যবহার করি না, কিন্তু আমাদের কাছে সেগুলো রয়েছে। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন? অন্যান্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থাও রয়েছে, যদিও ২০১৪ সালে এমন কিছুই ছিল না,’ পুতিন বলেছিলেন। ২০১৪ সালে বিশেষ অপারেশন শুরু করা উচিত ছিল কিনা জানতে চাইলে, তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, বাস্তবতা তখন থেকে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে রাশিয়া তখন না করলেও এখন বিশেষ অপারেশন শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।
ইউক্রেনের ৯২টি আর্টিলারি ইউনিট ধ্বংস, ২৯০ সেনা নিহত : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গতকাল জানিয়েছেন, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চলাকালীন রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী গত দিনে ১১৪টি এলাকায় গুলি চালানোর অবস্থানে ৯২টি ইউক্রেনীয় আর্টিলারি ইউনিটকে আঘাত করেছে। মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনীর পশ্চিমা দল কুপিয়ানস্ক এলাকায় ইউক্রেনের জনশক্তি ও সরঞ্জামের উপরে আক্রমণ করেছে, গত দিতে ৫০ জন সৈন্যকে নির্মূল ও দুটি সাঁজোয়া যান এবং দুটি গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান খারকভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরের কাছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর এমআই-৮ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
কোনাশেনকভ বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী গত দিনে ক্রাসনি লিমান এলাকায় ৯০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনাকে নির্মূল করেছে। পাশাপাশি তিনটি পদাতিক যুদ্ধের যান, তিনটি সামরিক যান, একটি গভোজডিকা অটোমেটিক হাউইটজার, সেইসাথে ডি-২০ ও ডি-৩০ হাউইৎজার ধ্বংস করা হয়েছে। একই দিনে ডোনেৎস্কের দিকে, দক্ষিণাঞ্চলের ইউনিটগুলির সক্রিয় অপারেশনের ফলে ৮০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত, তিনটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, চারটি পিকআপ ট্রাক, তিনটি গ্র্যাড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার এবং একটি এমস্টা-বি হাউইৎজার ধ্বংস হয়েছে।
কোনাশেনকভ রিপোর্ট করেছেন যে, রাশিয়ান বাহিনী গত দিনে দক্ষিণ ডোনেৎস্ক এবং জাপোরোজিয়ে এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা ও তিনটি পিকআপ ট্রাক এবং একটি ডি-৩০ হাউইটজার ধ্বংস করেছে। রাশিয়ান বাহিনী খেরসন অঞ্চলের ওট্রাডোকামেনকার কাছে ইউক্রেনের ১২২তম আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্রিগেডের সামরিক সরঞ্জাম সহ দুটি হ্যাঙ্গার ধ্বংস করেছে। তদুপরি, খেরসন দিক থেকে গত দিনে ২০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা, তিনটি যান এবং দুটি গভোজডিকা অটোমেটিক হাউইজার নির্মূল করা হয়েছিল। একই দিন রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স নয়টি হিমার্স ও ওলখা রকেট এবং সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
সব মিলিয়ে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ৪০২টি ইউক্রেনীয় যুদ্ধ বিমান, ২২২টি হেলিকপ্টার, ৩,৪৬৪টি মনুষ্যবিহীন আকাশযান, ৪১৪টি সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম, ৮,৩৩৮টি ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, ১,০৬৯টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ৪,৩৮৮টি ফিল্ড আর্টিলারি গান ও মর্টার এবং ৯,০১১টি বিশেষ সামরিক মোটর যান ধ্বংস করেছে, কোনাশেনকভ জানিয়েছেন। সূত্র : তাস, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু