ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পতনের শুরু মধ্যপ্রাচ্যে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৫ মে ২০২৩, ০৮:২১ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

চীনের সরকারি বার্তাগুলোতে প্রায় সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একটি কথা বারবার তুলে ধরা হয়। আর তা হলো, ‘শতাব্দীর বড় পরিবর্তনগুলো এখনও অদেখা রয়ে গেছে’। এই কথাটি পুনর্বার সামনে আনাকে প্রোপাগান্ডার চেয়ে বড় কিছু, বিশ্ব ব্যবস্থায় বৃহত্তর পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। বছরের পর পর বছর ধরে সৃষ্ট এই পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিও। ২১ শতকে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আধিপত্য দেখা গেছে। দীর্ঘদিন এই অঞ্চলে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে ভূমিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য। চলতি বছরের মার্চে এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করে চীন। বেইজিং-এর মধ্যস্ততায় দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি চুক্তিতে সই করে সউদী আরব ও ইরান। ওয়াশিংটনের সাথে তেহরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আগে থেকেই নড়বড়ে। এখন রিয়াদের সাথেও তাদের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। প্রবীণ মার্কিন কূটনীতিক চাস ফ্রিম্যান বলেন, ‘আমরা হুমকি দিই, আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করি, আমরা বোমা ফেলি, আমরা সেনা পাঠাই। কিন্তু আমরা কখনোই যুক্তি-পরামর্শ ইত্যাদি দ্বারা কাউকে রাজি করানোর শিল্পকে কাজে লাগাই না। ফ্রিম্যান ১৯৭২ সালে চীন সফরে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রধান দোভাষী ছিলেন। এই সফর শেষে তাইওয়ানের বদলে চীনকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি বেইজিং-এ খোলা হয় মার্কিন দূতাবাস। এই দূতাবাসে ফ্রিম্যান ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক গৌরবের মুহূর্ত অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন যা ঘটছে তা হলো অন্যের ওপর জোর খাটানোর মার্কিন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। তবে আমরা এখনও মনে করছি যে বিশ্বে আমরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শীতল যুদ্ধের শেষ হওয়ার পর যে কল্পনা আমরা করেছি।’বর্তমানে অনেক দেশ তাদের নিজস্ব পথ অনুসরণ করছে; যেটাকে কখনও কখনও ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বলা হয়। ধারণাটি ভারতের জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়ে গেছে। ধারণাটি সউদী আরবের মতো এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মার্কিন বন্ধুদেরও আকর্ষণ করছে। এপ্রিলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মন্তব্যেও এই নীতির আভাস ছিল। একসময় সউদী আরবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ফ্রিম্যান বলেন, ‘বিশ্ব বদলে যাচ্ছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাধান্য ধরে রাখা, যা অসম্ভব। কিছুই চিরন্তন নয়। কোনও পরাশক্তি সর্বদা সর্বোচ্চ শক্তি থাকে না। শুধু যে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান মার্কিন কর্তৃত্বের অবসান ঘটেছে তা নয়, ৫০০ বছরের ইউরো-আটলান্টিক ঊর্ধ্বগামীতারও অবসান হয়েছে।’ দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের সুবিধা নিতে নিজেদের তৈরি করেছে চীন। সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের চীন বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক হংদা ফ্যান বলেন, ‘১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে চীন পারস্পরিক সুবিধা এবং একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীর করে চলেছে’। তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে অন্যান্য দেশের সংঘাত উসকে দেয়নি চীন। এতে বিশ্ব পরিম-লে চীনের ভাবমূর্তি ইতিবাচক হয়েছে’। এটা অবশ্য ঠিক যে প্রধান প্রতিবেশীদের সাথে চীনের বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। তারপরও চীন প্রায় ১৩০টি দেশের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা প্রায় ১৫০টি দেশে বিস্তৃত অবকাঠামো প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবকে শক্তিশালী করেছে। বিশ্বের এক নম্বর তেল আমদানিকারক চীনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ঘনিষ্ঠ হওয়া বিশেষভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইরান ও সউদী আরব উভয়েই বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্লক-ব্রিকস প্লাস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় জায়গা চায়। তাদের সদস্যপদ বেইজিংকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো সম্ভাব্য মার্কিন ব্যবস্থাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দিতে পারে। সউদী আরবের ক্ষেত্রে এ কথার অর্থ হলো জ্বালানির প্রভাবকে ভূ-রাজনৈতিক পুঁজিতে রূপান্তর করা। এই পরিবর্তনকে সতর্কতার সাথে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। রিয়াদ তেল উৎপাদন বাড়ানোর মার্কিন আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করার পাশপাশি গত অক্টোবরে ইরান ও রাশিয়ার সাথে ‘ওপেক প্লাসে’ যোগ দেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর পরিণাম নিয়ে রিয়াদকে সতর্ক করেছিলেন। সউদী আরবের জ্বালানি মন্ত্রীর সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মোহাম্মদ আল-সাব্বান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে তারা বিশ্বের একমাত্র মোড়ল। এটা আসলে সত্য না’। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বহুমুখী হয়ে উঠেছে। সেখানে চীন আছে, রাশিয়া আছে, যুক্তরাষ্ট্র আছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সউদী আরবও আছে’। শুধু তেলের জন্য সউদী প্রভাবশালীদের তোষামোদ করা হয়, এটা ঠিক না। ইসলামের দুটি পবিত্র স্থানের রক্ষক হিসেবে মুসলিম বিশ্বে অনন্য মর্যাদা রয়েছে সউদী আরবের। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশটি আরব লীগ এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর নেতৃস্থানীয় সদস্যও বটে। ইতোমধ্যে সউদী আরব তাদের অভ্যন্তরীণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিলেও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার ও আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। নিউজ উইক।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ
গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি
অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
আরও

আরও পড়ুন

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি